প্রকৃতির রঙে সুসজ্জিত একটি পার্ক,যেন পাহাড়ি কোনো কারুকাজের সাথে বাহারি ফুলের নান্দনিক মিশ্রনে মোহিত হয়ে আছে চারপাশ। দেখে বুঝার উপায় নেই এটি আসলেই দেশের বৃহত্তম রপ্তানী খাতে নিজেকে উৎসর্গ করেছে।বাহারি শিল্পের এক অকৃত্রিম ছোয়ায় পরিবেশটা যে কারোরই চোঁখের ব্যারাম (অসুখ) সারিয়ে নিয়ে সক্ষম।একটি মুগ্ধতার অন্যতম পরিস্ফুটন ঘটছে এখানে…… ।
একটু অনুমান করুন তো? কি হতে পারে জায়গাটা? সচক্ষে না দেখলে অনেকে হয়ত ভেবে নিতে পারেন আমি ঢের বাড়িয়ে বলছি। কিন্তু সিরিয়াসলি,টেক্সটাইলের পরিবেশবান্ধবহীন এক শিল্পকারখানাও যে এমন হতে পারে তা নিজ চোঁখে না দেখলে আপনি সবসময় অবিস্বাসীদের কাতারেই রয়ে যাবেন।আর দেখার পর মনে হবে আগে কেন দেখিনি!
বলছিলাম দেশের অন্যতম রপ্তানীমুখী প্রতিষ্ঠান Beximco Industrial Park এর Textile & Apparel Division এর কথা।বারবার মনে হচ্ছে, দেশীয় রপ্তানীর চূড়ান্ত বাজার ছাপিয়ে প্রতিষ্ঠানটি যেন পরিবেশের কাছে দ্বায়বদ্ধ।আর সাধেই কি Amazon,Bershka এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলো Beximco এর বায়ার হচ্ছে?
১৯৯৪ সালে যাদের মাঠ পর্যায়ে কার্যক্রম শুরু করার মধ্যে দিয়ে ১৯৯৫ সালেই বানিজ্যিক ভাবে নিজেদের কার্যক্রমে আত্মনিবেশ করে।সেই থেকে এখনো পর্যন্ত সাফল্যের সাথে দাপিয়ে বেড়ানো।নিজের নামে শেয়ারের জায়গায় রয়েছে ঢাকা ও চট্টগ্রামের স্টক এক্সচেন্জ।
বলা হয়ে থাকে দেশীয় বাজারের অন্যতম আধুনিক কম্পোজিট প্রতিষ্ঠান হিসাবে এর খ্যাতি বিশ্বব্যাপী।আর হবেই বা না কেন? ওয়েভিং সেকশনের Air-jet looms এ গড় গতি ২৮৮ এর মতো,পাশাপাশি উচ্চ প্রযুক্তি দিয়ে আবিষ্ট ডাইং ও ফিনিশিং সেক্টরে রয়েছে ১ লক্ষ গজ কাপড় প্রডাকশন দেয়ার ক্ষমতা! তাহলে বুঝাই যাচ্ছে কেন আসলে একে বিশ্বের অন্যতম আধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে বিবেচনা করা হয়?
সেই সাথে বেক্সিমকোর রয়েছে নিজস্ব আধুনিক নিট ফেব্রিক প্রডাকশন মিল,যা বাংলাদেশের কোনো গার্মেন্টসের উচ্চ মানের নিট ফেব্রিকের যোগানদাতা হিসাবে পরিচিত।স্বাভাবিকভাবেই এর সুনাম ছড়ানোর পিছনে অন্যতম কারন হচ্ছে এ প্রতিষ্ঠান থেকে সাপ্লাইকৃত পন্যের ধারাবাহিক মান।যেখানে পন্যের সঠিক মান সরবরাহে প্রতিনিয়তই আপডেট হচ্ছে মেশিনগুলো।যেমনঃ কটন ও পলিস্টারের ব্লেন্ডিং করানোর জন্য 1,22,000 spindles এর প্রযুক্তি রয়েছে। সুতরাং চোঁখ বন্ধ করে বলাই যায়, সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে এ প্রযুক্তিগুলোর মাধ্যমেই সম্ভব হচ্ছে পোষাকের গুনগন মান নিশ্চিত করা।
এক নজরে চলুন দেখে নেয়া যাক প্রতিষ্ঠানটির কিছু উল্লেখযোগ্য দিকঃ
প্রায় ৪০ হাজার শ্রমিকের এক অভয়ারণ্য এ প্রতিষ্ঠানটি।
- বার্ষিক আয় প্রায় $৫০০ মিলিয়ন।
- চমৎকার অবয়যুক্ত অবকাঠামো।
- সেবা ও উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য গ্লোবাল ফুটপ্রিন্ট সেবা।
- চমৎকার ও নিখুত মাল্টি প্রডাকশন সিস্টেম।
এক নজরে দেখে নেয়া যাক তাদের প্রডাকশন হাউজের খসড়াঃ
ডেনিমঃ
নিজস্ব ভঙ্গিমায় ডেনিম প্রস্তুত করার মতো শক্ত অবস্থানটা বেক্সিমকোর দখলে। ভিন্ন ধরনের ডেনিম তারা প্রস্তুত করে থাকে। যেমনঃ Chambray, Classic Blue Jens,Black Jens,Overdyed,Bull and Stretch Denim এর মতো ডেনিমগুলোই তারা প্রস্তুত করে থাকে।
এতে যে ধরনের মেশিন ব্যাবহার করা হয় সেটা হলো Brother -NIBTKASI। এছাড়াও আরো বেশ কয়েকটি মেশিনের ব্যাবহার রয়েছে।
স্পিনিংঃ
স্পিনিং এর ক্ষেত্রেও বেক্সিমকোর সুনাম যথারীতি পূর্বের মতোই। তবে এর সবচেয়ে শক্তিশালী পয়েন্টটি হচ্ছে কটন ও পলিস্টার ব্লেন্ডিং করার জন্য 1,22,000 spindles এর মেশিনটি। স্বভাবতই তাক লাগিয়ে দেয়ার মতো রীতিমতো ঘটনা এটি।এখানে ৬-১২০ কাউন্ট পর্যন্ত সুতার তৈরী দেখা যায়।শ্রমিক ও টেকনিশিয়ানদের জাদুকরী কিছু পদক্ষেপে এখানে প্রতিনিয়তই কটন ফাইবার, CVC,Lyocel,Rayon,Viscose সহ আরো কিছু ফাইবার উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে।
ওয়াশিংঃ
উন্নত প্রযুক্তি নির্ভর ওয়াশিং সেক্টরের কথা না বললেই নয়।প্রায় ৮০টার উপরে ওদের মেশিন সংখ্যা। তাও ম্যাক্সিমামই Jeanologia ও YILMAK ব্র্যান্ডের। বলা হয়ে থাকে বেক্সিমকোর ওয়াশিং বিভাগটি দেশের অন্যতম সেরা ব্যান্ড হিসাবে বিবেচিত।একেকটা মেশিনের বাল্ক ক্যাপাসিটি ১০০ কেজির মতো করে।তাহলে একদিনে কি পরিমান প্রডাকশন দিতে পারে ভাবা যায়? পাশাপাশি পানির অপচয়রোধ ও ক্যামিকেলের ভারসাম্য রক্ষায় ব্যাবহার করা হয় ন্যানো বাল্ব এপ্লিকেশন। বেক্সিমকোর ওয়াশিং ডিপার্মেন্টে যেসব ওয়াশ করা হয় তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- Foam washing,Laser,Ozone,Foam Wet processing, Dryers Auto-loading, Auto Dosing।
প্রিন্টিং ও এম্বোডারিঃ
কাপড়ের নিখুত শিল্পকলার ভক্ত আমরা সবাই। মোটাদাগে এ দেশের তরুন প্রজন্ম এখন বেশ ফ্যাশন সচেতন।আর এ ব্যাপারেও বেশ বেক্সিমকো।বেক্সিমকোর প্রিন্টিং মানের জন্য বেশ প্রসিদ্ধ ও প্রতিষ্ঠিত।বলা চলে প্রিন্টিং ও এম্বোডারি শিল্পকে বেক্সিমকো শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছে। যেখানে উন্নত প্রযুক্তির সাথে আধুনিক সব মেশিনারিজ দিয়ে রীতিমতো তাক করে দিচ্ছে এ সেক্টরটাকে। আর সেজন্যও ওনাদের ব্যাবহার করতে হচ্ছে JINTEL (China)।
গার্মেন্টসঃ
তৈরি পোষাককে আকর্ষণীয় করে মূলত তার ফিনিশিং ও নিখুত কারুকাজগুলো। আর এ দিকটার কথা না বললেই নয়। বায়ারের রিকুয়ারমেন্ট মেনটেইন করে ওনাদের তুষ্ট করতে এমন কিছু বাকি নেই যা তাদের দখলে নেই। বাচ্চাদের জামা থেকে শুরু করে,টপস,ওয়ানপিসের মতো চমৎকার ও নানন্দিক সব ডিজাইনের গার্মেন্টস পন্য তাদের দখলে। ব্যাবহার করা হচ্ছে উন্নত ও আধুনিক সব মেশিনারিজ। ব্যাবহার করা হয়েছে BEN-SIZETEC ও BENNINGER এর মতো মেশিনারিজ।
আর কাটিং সেক্টরে ব্যাবহার করা হয়েছে BOK-KIFLMAC0001 ও JUKI-MSI0157।
সময় স্বল্পতার জন্য বেক্সিমকোর সবগুলো ডিপার্টমেন্ট ঘুরে দেখা সম্ভব হয়নি। তবে যতদূর দেখেছি, মনে হয়েছে দেশীয় সম্ভাবনাকে সত্যিই মাথাচাড়া দেয়ার মতো।দেশীয় রপ্তানী শিল্প ঘুরে দাড়াক সে প্রত্যাশায় আমরা সবাই। পাশাপাশি শ্রমিকরা যেন তাদের প্রাপ্য মজুরি পায় যেদিকেও আমাদের নজর দিতে হবে। যেন দৈন্যতার নাম করে কারোর উপর জুলুম করা না হয়, আর অন্য দিকে আঙুল ফুলে কলাগাছ না হয় পুজিবাদ সমাজ।
তথ্যসূত্র ও ছবি সংগ্রহে:বেক্সিমকোর ওয়েবসাইট ও ব্যাক্তিগতভাবে সংগ্রহ
Writer Information:
Khaladur Rahman Siam
Core Team Member,TES
NITER,9th Batch
Email- [email protected]