টেক্সটাইল কী?
আমাদের টেক্সটাইলের ব্যাপারে প্রত্যেকেরই কোন না কোন ধারণা রয়েছে কেননা দৈনন্দিন জীবনে এর গুরূত্ব ও প্রয়োজনীয়তা বলে শেষ করা যায় না। টেক্সটাইল হচ্ছে মূলত একটি কাপড় বা ফ্যাব্রিক যা সুতা দিয়ে বোনা। মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলোর মধ্যে দ্বিতীয়তে রয়েছে বস্ত্র বা টেক্সটাইল। প্রাচীনকাল থেকে মানুষ তার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি জিনিস যেমনঃ আচ্ছাদন, ব্যক্তিগত শোভাযাত্রা ও ব্যক্তিগত সম্পদ প্রদর্শনের জন্য বিভিন্ন ধরনের বস্ত্র ব্যবহার করছে। জন্ম-মৃত্যু অবধি প্রত্যেকেই আমরা প্রতিনিয়ত কোন না কোন কাজে টেক্সটাইল ব্যবহার করছি।
পরিবেশের উপর টেক্সটাইলের প্রভাব:
টেক্সটাইল ছাড়া বিশ্বকে চিন্তা করা খুব কষ্টকর। বর্তমানে টেক্সটাইলের ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলেছে। তাই, মানবজীবনে টেক্সটাইলের গুরুত্ব অপরিসীম। পরিবেশের উপর যে সকল শিল্প খারাপ প্রভাব বিস্তার করে তাদের মধ্যে টেক্সটাইল শিল্পেরও নাম রয়েছে। বিশ্বে তেল শিল্পের পরেই পরিবেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম দূষণকারী হচ্ছে টেক্সটাইল শিল্প। এই শিল্পের পরিমাণ বড় হওয়ার সাথে সাথে পরিবেশের ক্ষতির পরিমাণও বাড়ছে। টেক্সটাইল তৈরি প্রক্রিয়াতে প্রচুর পরিমাণে পানি, জ্বালানী ও বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার দেখা যায় যা প্রচুর পরিমাণে বর্জ্য উৎপন্ন করে। নিচু দক্ষতার অনুশীলনের ফলে এসকল উপাদানের প্রচুর পরিমাণে অপচয় হচ্ছে যা পরিবেশের অন্য হুমকিস্বরূপ।
১। টেক্সটাইল তৈরিতে পানি দূষণ ও প্রতিরোধের উপায়:
টেক্সটাইলের সাথে জড়িত পরিবেশগত সমস্যাগুলির মধ্যে প্রধান সমস্যা হচ্ছে পানি দূষণ। মূলত টেক্সটাইল তৈরীর পর উচ্ছিষ্ট পানির সঠিকভাবে নিস্ক্রিয় না করার কারণে এমনটি ঘটে। এছাড়াও, ১ কেজি টেক্সটাইল তৈরির ক্ষেত্রে প্রায় ২০০ লিটার পরিষ্কার পানির প্রয়োজন হয়। এই শিল্প তৈরিতে যত বেশি পানির ব্যবহার হয়, ঠিক ততো বেশি রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার দেখা যায় যা পরিবেশের জন্য খুব ক্ষতিকর। এসকল পানি যদি সঠিকভাবে নিস্ক্রিয় না করে পরিবেশে ছেড়ে দেওয়া হয় তাহলে এগুলো পরিবেশের মারাত্বক ক্ষতি করতে পারে।
প্রতিরোধ:
ক) এমন ফাইবার ব্যবহার করতে হবে যেগুলো ব্যবহার করার জন্য কোন রাসায়নিক দ্রব্যের প্রয়োজন হয় না। যেমনঃ ন্যাচারাল ফাইবার, অরগ্যানিক ফাইবার ইত্যাদি।
খ) যেসকল ফাইবার প্রসেসিং-এর জন্য পানির ব্যবহার তুলনামুলকভাবে কম, সেগুলো ব্যবহার করতে হবে। যেমনঃ লিনেন, রিসাইকেলড ফাইবার ইত্যাদি।
২। বর্জ্য আহরণ ও প্রতিরোধের উপায়:
পোষাক একটি নিষ্পত্তিযোগ্য উপাদান। ফলস্বরূপ, আমরা ব্যবহারকারীরা আরও বেশি টেক্সটাইল বর্জ্য তৈরি করি। প্রতি বছর গড়ে ৩০ কেজি পোশাক ফেলে দেওয়া হয় পশ্চিমা বিশ্বের একটি পরিবারের কাছ ত্থেকে। এগুলোর মধ্যে মাত্র ১৫ শতাংশ রিসাইকেল করা হয় অথবা দান করে দেয়া হয়। বাকিগুলো সরাসরি ল্যান্ডফিলে চলে যায় বা জ্বালানো হয়। আমাদের পোষাক তৈরির ক্ষেত্রে প্রায় ৭২ শতাংশ সিন্থেটিক ফাইবারের ব্যবহার দেখা যায়। পলিয়েস্টার হিসেবে সিন্থেটিক ফাইবারগুলো হলো প্লাস্টিকের ফাইবার। এগুলো পুরোপুরিচ নষ্ট হতে প্রায় ২০০ বছরেরও বেশি সময়ের প্রয়োজন হয় যা বিশ্বের পরিবেশের জন্য হুমকি হয়ে দাড়াচ্ছে।
প্রতিরোধ:
ক) ন্যাচারাল বা সেমি-সিন্থেটিক ফাইবার ব্যবহার করতে হবে।
খ) রিসাইকেল বা মেরামত করা যায় এমন পোষাক ব্যবহার করতে হবে।
৩। রাসায়নিক দ্রব্যের কারণে পরিবেশ দূষণ ও প্রতিরোধ:
আমাদের পোষাকের অন্যতম প্রয়োজনীয় উপাদান হচ্ছে রাসায়নিক দ্রব্য। এগুলো সাধারণত ডায়িং, ব্লিচিং, ওয়াশিং ইত্যাদি কাজের জন্য ব্যবহার করা হয়। তুলা চাষ করার সময়ও রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার করা হয়। এসকল দ্রব্য পরিবেশ এবং মানদেহ উভয়ের ক্ষেত্রেই ক্ষতিকর। এসকল ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্যের কারণে তুলাচাষীদের মধ্যে অনেকেই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয় ও অকালে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ে। এগুলোর মধ্যে কিছু উপাদান পোষাক ব্যবহারকারীর জন্যও ক্ষতিকর।
প্রতিরোধ:
ক) অরগ্যানিক ফাইবার ব্যবহার করতে হবে।
খ) টেকসই ব্র্যান্ড ব্যবহার করতে হবে।
লেখক পরিচিতিঃ
মোঃ জাহিদ হোসেন
টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ
সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়।