সেমিনারের মূল বিষয় ছিল টেক্সটাইল সেক্টরে চারুকলার স্টুডেন্টরা কিভাবে ভূমিকা রাখতে পারবে। উক্ত সেমিনারে অতিথি হিসেবে ছিলেন বেশ কয়েকজন স্বনামধন্য ব্যক্তিবর্গ। এছাড়া কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্টুডেন্টরাও উপস্থিত ছিলেন। সাথে অনুষ্ঠানের মিডিয়া পার্টনার হিসেবে ছিলেন টেক্সটাইল ইন্জিনিয়ারস সোসাইটি (TEXTILE ENGINEERS SOCIETY) এবং TEXTILE TODAY.
অনুষ্ঠানটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পরিচালনা করেন শওকত হোসাইন সোহেল।
অনুষ্ঠানের শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন ইঞ্জিনিয়ার এস এম আবদুর রহমান। এরকম একটি সুন্দর সেমিনার আয়োজন করার জন্য প্রথমেই তিনি আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান। এরপর তিনি উপস্থিত অতিথিবৃন্দদের সকলকে একে একে স্বাগতম জানান। পরবর্তীক্রমে তিনি জানান সেমিনারটি মূলত গার্মেন্টস সেক্টরে এবং অল ওভার প্রিন্টিং সেক্টরে চারুকলা থেকে পাস করা ছাত্র-ছাত্রীদের কি কি জব অপরচুনিটি আছে, এখানে তারা কেমন ভূমিকা রাখতে পারবে এবং এদের কতটুকু দরকার এই সেক্টরে!! আবদুর রহমান আরও বলেন, তার এই সেক্টরে চাকরির বয়স ২৪/২৫ বছর। তার এক্সপেরিয়েন্স থেকে তিনি দেখেছেন, All Over Printing এর ডিজাইন সেকশনে যারা চারুকলা থেকে এসেছেন, সবাই প্রায় প্রতিষ্ঠিত। উদাহরণস্বরূপ বলেন সেমিনারে উপস্থিত শওকত হোসাইন ও চারুকলা থেকে পাশ করা একজন স্টুডেন্ট, সাথে আরও কয়েকজনের নাম বলেন যারা তাদের স্ব স্ব স্থানে প্রতিষ্ঠিত। এছাড়াও বলেন যে, এমনও আছে যারা চারুকলা থেকে আসেনি ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে এসে হাতেকলমে কাজ শিখেছেন, কিন্তু বর্তমানে লক্ষাধিক টাকা আয় করছেন। এসব কিছুর মাধ্যমে স্যার বোঝাতে চেয়েছেন যারা চারুকলা থেকে পাশ করেছে এবং এক্সপার্ট নিঃসন্দেহে তাদের অল ওভার প্রিন্টিং সেক্টরে চাকরি করার সুযোগ অনেক বেশি, এমনকি তাদের কন্ট্রিবিউট করারও অনেক সুযোগ রয়েছে।
কাজী ইফতেখার হোসাইন এর কাছে জানতে চাওয়া হয় বায়িং হাউজে চারুকলার স্টুডেন্টরা কি ধরনের ভূমিকা রাখতে পারে। সকলকে শুভসন্ধ্যা এবং কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে ইফতেখার হোসাইন বলেন, বর্তমানে সারা বিশ্বের যা পরিস্থিতি, বাংলাদেশ এবং সারা পৃথিবী ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ সেই মুহূর্তে আয়োজকদের এরকম একটি উদ্যোগী ভূমিকা সত্যিই প্রশংসনীয়। তিনি বায়িং হাউজের কাজ সম্পর্কে বেশ কিছু কথা বলেন। বায়িং হাউজের বেশিরভাগ কাজই মূলত এক্সপোর্টের জন্য করা হয়ে থাকে। আন্তর্জাতিক বাজারে কাজ করতে হলে কাজের মানও আন্তর্জাতিক হতে হবে। বাইরের দেশের মানুষ যেভাবে কাজ করে সেটা হলো, এক বছর আগে থেকে তারা জানে যে কি ধরনের কালার কালার ২০২১ সালে হবে, কি ধরনের কালার ২০২২ সালে হবে এ সম্পর্কে আগে থেকে জানতে হবে। আন্তর্জাতিক বিশ্ব কি চাচ্ছে তারসাথে সংশ্লিষ্ট থাকতে হবে, কিভাবে পরিবেশবান্ধব কাজ করা যায় সেজন্য বাহিরের দেশের সাথে অনেক বেশি কানেক্টেড হতে হবে। তাদের থেকে যেন কাজ শেখা যায় এজন্য কানেক্টিভিটি তৈরি করতে হবে।
পরবর্তীতে বক্তব্য প্রদান করেন Dolly Thay । তার বক্তব্যের মূল কথা ছিলো শিক্ষার সাথে বিশ্ববাজারের connectivity অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ববাজারের সাথে সম্পর্কহীন বিদ্যা অন্ধ। বিদ্যাকে বাজারের কোনো সম্পৃক্ত হতে হবে এবং বাজারকেও বিদ্যার সাথে সম্পৃক্ত হতে হবে। সেই সাথে তিনি creative ডিজাইন ডেভেলপের কথাও বলেছেন।
Domestic মার্কেট নিয়ে শ্যামল চন্দ্র সাহা বলেন, আশির দশকে domestic মার্কেট খুব ছোট ছিলো। তখন ৪/৫ টা প্রিন্টিং ফ্যাক্টরি ছিলো। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষ প্রিন্টিং এর পোশাক বেশি পড়ে। এদেশের ৮০% মানুষের চাহিদা বাংলাদেশের ইন্ডাস্ট্রি এর মাধ্যমে পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে। কিন্তু বাকি ২০% মানুষ চায়না, ইন্ডিয়া, পাকিস্তানের ডিজাইন পছন্দ করে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের মানুষের চাহিদা অনুযায়ী যদি ক্রিয়েটিভ ডিজাইন করা যায়, তাহলে বাংলাদেশের মানুষ আর বাহিরের পোশাক এর উপর নির্ভরশীল থাকবে না। বর্তমানে domestic মার্কেটে বলতে গেলে কোন ক্রিয়েটিভ ডিজাইন নেই, বেশিরভাগ ডিজাইনই কপি করা। তাই টেক্সটাইল সেক্টরে যদি চারুকলার স্টুডেন্টরা আসে,তাহলে আমাদের দেশেও ক্রিয়েটিভ ডিজাইন ডেভেলপ করা সম্ভব।
রাশেদ শুখন বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে কাজের জন্য প্রচুর পরিমাণে কাজ দেখতে হবে। এছাড়াও তিনি বলেছেন তাদের সিলেবাসে টেক্সটাইল ডিজাইন সাবজেক্টটি যুক্ত করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন এবং টেক্সটাইল ডিজাইন এর উপর মেলা আয়োজন করার চেষ্টাও তিনি করবেন।
এরপর সকলের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে মানজুর এলাহি বলেন, চারুকলার স্টুডেন্টরা টেক্সটাইলের সাথে খুব একটা কানেক্টেড না। তার কারণ হলো চারুকলার সিলেবাসে টেক্সটটাইল রিলেটেড কোনো সাবজেক্ট নেই। তাই তাদের এই সেক্টর সম্পর্কে তেমন ধারণা নেই। তবে তাদের এই সেক্টর সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা থাকলে তাদের জন্য এখানে নতুন দ্বার উন্মোচন হবে এবং তারাও এখানে ভূমিকা রাখতে পারবে।
পরবর্তীতে আবুল বাশার বলেন, প্রিন্টিং বলতেই ডিজাইন চলে আসে, ডিজাইন যদি ভালো না হয় প্রিন্টিং ভালো হবে না। চারুকলার স্টুডেন্টদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেছেন, domestic মার্কেট হোক বা এক্সপোর্ট মার্কেট তাদের জন্য টেক্সটাইল সেক্টরে প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। তাই তিনি চান চারুকলার স্টুডেন্টরা এই সেক্টরে আসুক এবং নতুন কিছু উপহার দিক।
সবশেষে সালাউদ্দিন বলেন, আমাদের ইন্ডাস্ট্রিকে টিকিয়ে রাখতে হলে ক্রিয়েটিভিটি লাগবে।
এছাড়াও সেমিনারে আরো বক্তব্য রেখেছেন, অপূর্ব বিশ্বাস , আব্দুর রহমান , সঞ্জয় সাহা প্রমুখ । সবার বক্তব্য শেষে সেমিনারে উপস্থিত বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা স্যারদের কাছে প্রশ্ন করেন, স্যাররা তাদের প্রশ্নের উত্তর দেন।এরপর অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।