বর্তমান বিশ্বে আর্কিটেকচার ইঞ্জিনিয়ারিং-এ বিশেষ ভুমিকা রাখছে টেক্সটাইল সেক্টর। কথাটিতে আমি কি আপনাদের খুব বেশি অবাক করে দিলাম!
প্রাচীনকাল থেকেই আর্কিটেকচারের সাথে টেক্সটাইল শিল্পের এক সুতোয় বেধে থাকার ইতিহাস আছে।আমরা সকলে এক দিন/রাত তাবুতে না কাটালেও এর সম্পর্কে হালকা ধারণা তো অবশ্যই মাথায় রাখি।কেউ জিজ্ঞেস করলে এটা তো অন্তত বলতেই পারি যে অস্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য তাবুর প্রয়োজন হয়।এবার একটু চিন্তা করুন যে, তাবু কি একধরণের স্থাপত্যশিল্পের অন্তর্ভুক্ত নয়?তাবুর কি কাঠামো নেই?আমার মনে হয় আপনারা আপাতত আমার প্রশ্নগুলো থেকেই ‘স্থাপত্য নির্মাণে টেক্সটাইলের ভুমিকা’ বিষয়টি একটু হলেও বুঝতে পেরেছেন।
প্রাচীন সময়গুলোতে বেদে সম্প্রদায়েরা পশুর চামড়া,গাছের বাকল দিয়ে তাবু তৈরি করত।প্রাচীন ইতিহাস ”রোমান কলোসিয়াম”, যা ইটালির রোমে অবস্থিত।আর এই স্থাপত্যে পাথর /পোড়ামাটির তৈরি ছাদের পরিবর্তে ব্যবহার হয়েছিল বর্তমানে টেক্সটাইলের বহুল পরিচিত একটি উপাদান,যা আমাদের কাছে সামিয়ানা হিসেবে বহুল পরিচিতি।এছাড়াও সামরিক উদ্দেশ্যে বড় বড় তাবুর ব্যবহার এবং সার্কাসে সামিয়ানা দিয়ে অস্থায়ী ঘর তৈরির বিষয়টি আমাদের অজানা নয়।তবে আর্কিটেকচারে টেক্সটাইল ব্যবহারের মাধ্যমে আধুনিকতার নতুন ছোঁয়া আসে ১৯৭২ সালে অনুষ্ঠিত ‘মিউনিক’ অলিম্পিকের স্টেডিয়াম তৈরিতে।প্যালিওলিথিক সময়ের সেসব তাবুর ব্যবহার আজও রয়ে গেছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। যে তাবু আগে স্থায়ী বসবাসের জন্য প্রয়োজন হতো তা আজ ট্রাভেলার্সদের একটি পাতলা কাপড়ের তৈরি ঘরে অবস্থানের মাধ্যমে প্রকৃতির আনন্দ ভাগ করে নেবার সুযোগ করে দিয়েছে।বর্তমানে স্থাপত্যশিল্পে একটি স্থাপত্যের অনেক উপকরণেই টেক্সটাইলের ব্যবহার হচ্ছে।যেমন :বিল্ডিং এনক্লোজার, রুফ,স্কাইলাইট,স্কাল্পচার,ক্যানোপি,ফ্যাকেড ইত্যাদি।আর এই স্থাপত্যগুলো হয়ে থাকে মূলত স্টেডিয়াম, এয়ারপোর্ট,লাক্সারি হোটেল,বাস স্টোপেজ ইত্যাদি।
টেক্সটাইলের উপাদানগুলো হালকা,সাসটেইনেবল এবং রিসাইকলযোগ্য তাই মর্ডান আর্কিটেকচার টেক্সটাইল সেক্টরকে নিয়েই তাবুর সেই আদিম নীতিকে ব্যবহার করে স্থাপত্য শিল্পকে একটি বিশেষ রূপ দিচ্ছে।আর এটাও চিন্তা করছে যে তাবুকে অস্থায়ীভাবে ব্যবহারের পাশাপাশি কিভাবে এর স্থায়িত্ব এনে বহুল ব্যবহার করা যায়।আসলে ফেব্রিকগুলো কনক্রিটের চেয়ে অনেকগুনে হালকা হওয়ায় দীর্ঘস্থায়ী কাঠামো তৈরি সম্ভব হচ্ছে।এই আধুনিকায়নে টেক্সটাইল সেক্টর প্রডিউসিং,কাটিং ও প্রিন্টিংকেই বেশি প্রাধান্য দিয়েছে।কারণ এসবের মাধ্যমেই বলে দিবে স্থাপত্যের নকশা ও সৌন্দর্য্য বাস্তবে কেমন হবে।তাই বলাই বাহুল্য যে ডিজাইনার এখানে ফেব্রিককেই মূল উপাদান হিসেবে দেখবেন।এলি তাহারি ফ্যাশন কোম্পানি ইদানিং এসক্লুসিভ কিছু নকশা তৈরিতে কাজ করছে। যা শুধুমাত্র একটি ঘরের বাহিরের নয় ভিতরের সৌন্দর্য্যকেও ফুটিয়ে তুলছে।
কাঠামোতে ব্যবহৃত ফেব্রিকগুলোর যা যা বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে :
১)এখানে ব্যবহৃত টেক্সটাইল মেটেরিয়ালের প্রাথমিক প্রয়োজনীয়তা হলো হাই স্ট্রেন্থ ও হাই টিয়ার এনার্জি। ফেব্রিকগুলো যেহেতু স্থাপত্যের উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে তাই সেগুলোতে অবশ্যই সর্বাধিক তাপমাত্রা, তীব্র বৃষ্টি, বাতাস,তুষার বৃষ্টি সহ্য করার গুনাবলি থাকতে হবে।
২)কাপড়ের বাহ্যিক অংশটিকে অবশ্যই দীর্ঘসময় UV রশ্মি ধারণে সক্ষম হতে হবে এবং লাস্টিং ও বাকলিং বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে।অ্যাকোস্টিক ইন্সুলেশন ও তাপ ভারসাম্যতা রক্ষাও কিন্তু এখানে একটা বড় বিষয়।
৩)কাপড়ে আলোক বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে।যেমন : আলোক শোষণ, প্রতিফলন,প্রতিসরণ। এই বিষয়গুলো বিল্ডিংয়ের অভ্যন্তরীণ আলো বৃদ্ধির পাশাপাশি কৃত্তিম আলোর ব্যবহার কমাবে যা পরিবেশবান্ধব।উদাহরণস্বরূপ, PFTE ফাইবারে গ্লাসযুক্ত প্রলেপ থাকায় এটি ৭০ শতাংশ আলোকে প্রতিবিম্বিত করতে সক্ষম।অপরদিকে EFTE এর আলোকভেদ্য ক্ষমতা প্রায় ৯০ শতাংশ।এছাড়া এসব টেক্সটাইলে ব্যবহৃত রঙ ও প্রিন্ট দুটোই আলোক এবং তাপীয় বৈশিষ্ট্যকে প্রভাবিত করে।
৪) কাপড় পরিষ্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ অতীব প্রয়োজনীয়।আর এই ফেব্রিকগুলো পরিষ্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ দুটোই করা সম্ভব।
স্থাপত্য নির্মাণে ব্যবহারের ভিত্তিতে ২ ধরণের ফেব্রিক ব্যবহৃত হচ্ছে।
i. স্ট্রাকচার কোটেড ফেব্রিক
ii.মেস ফেব্রিক
স্ট্রাকচার কোটেড ফেব্রিক,বেস কাপড় দ্বারা গঠিত এবং কাপড়ের উভয়পক্ষ একধরণের আবরণ দ্বারা সুরক্ষিত থাকে।এটি মূলত স্থাপত্যের বাহ্যিক অংশে ব্যবহারের জন্য।বাহ্যিক অংশে ২ ধরণের ফেব্রিক বেশি ব্যবহৃত হয়
১)পলি ভিনাইল ক্লোরাইডের প্রলেপযুক্ত পলিয়েস্টার ফেব্রিক
২) টেফলনের প্রলেপযুক্ত গ্লাস ফেব্রিক
আর মেস ফেব্রিক হলো থ্রেড বান্ডিলের মধ্যে ব্যবধান সহ একটি প্রলেপযুক্ত কাপড়।এধরণের ফেব্রিক স্থাপত্যের অভ্যন্তরীণ অংশে ব্যবহার করা হয়।অভ্যন্তরীণ অংশের জন্য মেস ফেব্রিকের অংশ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে কটোন,পলিভিনাইল ক্লোরাইডের প্রলেপ যুক্ত গ্লাস ফেব্রিক, পলিউরেথিন প্রলেপযুক্ত গ্লাস ফেব্রিক এবং সিলিকনের প্রলেপযুক্ত গ্লাস ফেব্রিক।
স্থাপত্য নির্মাণে টেক্সটাইলের ব্যবহার হওয়ায় আর্কিটেক্ট ও সিভিল ইঞ্জিনিয়াররাও এসব নতুন বিষয়ে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে।স্থাপত্য নির্মাণে টেক্সটাইলের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে।তাই স্মার্ট ও টেকনিকাল টেক্সটাইলের ক্রমাগত উন্নয়ন হচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও হবে।
তথ্যসূত্র: Architonic,fibre2fashion,Ukdiss.com,Youtube,Architen Landrell
Writer Information :
Bipro Brota Roy
Ahsanullah University of Science and Technology
Department of Textile Engineering
(Batch-40)