আমরা তো সকলেই অনেক ধরণের শাড়ী বা কাপড় সম্পর্কে জানি। আজ এক ধরণের শাড়ী বা কাপড় এর কথা বলতে চাই যা মূলত পুরোনো কাপড় দিয়ে তৈরি করা হয়ে থাকে।
“খেশ” শাড়ী । এই শাড়ী টি পুরোনো কাপড় দিয়ে তৈরি করা হয়।এই শাড়ী টির মূল উৎপত্তি স্থল কলকাতার বীরভূমে। এই শাড়ী টির সাথে জড়িত আছে রবি ঠাকুরের নাম। ভারতের বীরভূম জেলার তাতীরা মূলত এই শাড়ী টি তৈরি শুরু করে। তাদের মতে তাদের পূর্ব পুরুষদের এই শাড়ী তৈরির হাতেখরি হয়েছিলো শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী বিদ্যালয়ে, শিল্প সনদে।শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে রবিন্দ্রনাথের জন্যই সেখানকার শিল্পীরা কাঁথা সেলাইয়ের কায়দাকে কাজে লাগিয়ে পুরাতন কাপড় দিয়ে খেস শাড়ি তৈরি করেন।
খেশ শাড়ির মূল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে পুরাতন কাপড় ছাড়া এই শাড়ী তৈরি করা সম্ভব নয়। পুরোনো সুতির কাপড় ছিড়ে ছিড়ে ছোট দরির মত বানিয়ে তা দিয়ে তৈরি করা হয়ে থাকে এই শাড়ী। এক একটি পুরোনো কাপড় থেকে বের হয় ৮০ থেকে ৮৫ টি লাছি সুতা । তারপর এই লাছি সুতা কে রং করে চরকায় ফেলে কাপড়ের ফালি তৈরি করা হয়।
তারপর এই ফালি দিয়ে তাতের সাহায্যে তৈরি করা হয় কাপড়। বিভিন্ন ধরনের কাপড়ের জন্য বিভিন্ন রকম কাপড়ের ফালি দরকার হয়।
এই শাড়ী তৈরি করা বেশ সময় সাপেক্ষ ও পরিশ্রমের ব্যাপার। একজন শিল্পী প্রতি দিন দুই থেকে তিনটির বেশি শাড়ী তৈরি করতে পারে না। নকশি কাঁথার মতো এই শাড়ী তেও নিপুণভাবে নকশা তুলেন শিল্পীরা। যার ফলে শাড়ী হয়ে উঠে আরো আকর্ষনীয়।এই শাড়ী তৈরির পিছনে মহিলাদেরও বড় ভূমিকা রয়েছে,কারণ পুরোনো কাপড় মুলত তারাই দিয়ে থাকেন এবং কাপড় থেকে সুতার লাছি তৈরির কাজেও তারা অনেক সাহায্য করে থাকেন।
খেশ শাড়ি তৈরি করা অনেক সময় সাপেক্ষ এবং পরিশ্রমের কাজ হলেও এর বাজার দর অনেক কম। বাংলাদেশের বাজার মূল্যে একটা একটা শাড়ী ৭০০,৯০০,১৫০০ টাকা হয়ে থাকে। এই শাড়ীর দাম মূলত এর নকশার উপর নির্ভর করে। নকশা যতো বেশি এবং সুন্দর হবে শাড়ীর দাম ততো বেশি হবে।
বর্তমান সময়ে খেশ কাপড় দিয়ে শুধু শাড়ী তৈরি করা হয় না বরং খেশ চাদর, পর্দা, জামাকাপড়, কুর্তি, ব্যাগ তৈরি করা হয়। খেশের বিভিন্ন সাইজ এর চাদর তৈরির জন্য বিভিন্ন সংখ্যার কাপড়ের ফালির প্রয়োজন হয়। যেমন সিঙ্গেল বেডের চাদরের জন্য পুরোনো কাপড়ের ফালি লাগে প্রায় ৬ টা। আর ডাবল বেডের চাদরের জন্য লাগে ১০ টা।
বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলায় খেস শাড়ি তৈরি হয়ে থাকে। তাঁতিরা তাদের কাজের মাধ্যমে নান্দনিক সব ডিজাইন ফুঁটিয়ে তুলছেন শাড়িতে। খেস বাঙালির ঐতিহ্য বহন করে আসছে এবং এর সাথে জড়িয়ে থাকা প্রতিটি মানুষ তাদের জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন এর থেকে। কিন্তু বর্তমানে এই শাড়ী বা কাপড় সম্পর্কে মানুষ এর ধারণা কম থাকায় এবং এর বাজার দর কম হওয়ায় তাঁতিরা এই কাপড় তৈরি তে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। ফলে একটি ঐতিহ্যবাহী কাপড় খুব সহজেই হারিয়ে যাচ্ছে।
এই কাপড় যেহেতু পুরোনো কাপড় দিয়ে তৈরি করা হয়ে থাকে এবং নকশী কাথার মতো নকশা করা হয় তাই এটি খুব আরামদায়ক এবং সুন্দর একটি কাপড় তাই আমাদের সবার উচিত এই শাড়ির ঐতিহ্য সবার মাঝে তুলে ধরা। যত বেশি প্রচার হবে তত তার প্রসার বাড়বে এবং সেই সাথে চাহিদাও বৃদ্ধি পাবে। ফলে তাতীরাও এই শাড়ী তৈরি তে আগ্রহ ফিরে পাবে।
Writer’s information
Name: Munthaha Alam Mumu
Semester : 2nd year, 1st semester.
Batch:39
University : Ahsanullah University of science and
Technology.