বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখার মত টেক্সটাইলেও লেগেছে ন্যানো টেকনোলজির ছোঁয়া। যা প্রতিনিয়ত গবেষণায় আরও উন্নত হচ্ছে। ন্যানো কথাটি শুনেই বোঝা যাচ্ছে এটি কতটা সূক্ষ্ম একটি ফাইবার। এই ফাইবারটি ন্যানোমিটারের পরিসরে ব্যাসযুক্ত একটি ফাইবার। এখন ন্যানো ফাইবারের উৎপাদন, ইতিহাস, ব্যবহার ও এর কার্যপদ্ধতি সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক:
ন্যানো ফাইবার গুলি বিভিন্ন ধরনের পলিমারের সমন্বয়ে উৎপন্ন হয়ে থাকে। তাই এতে বিভিন্ন গঠনগত রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। ন্যানো ফাইবারের ব্যাস নির্ভর করে কি ধরনের পলিমার, ফাইবার উৎপাদনে ব্যবহৃত হচ্ছে তার উপর। সকল পলিমার ন্যানো ফাইবার, তাদের মাইক্রোফাইবার অংশগুলির তুলনায় বৃহৎ পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফলের অনুপাত, যান্ত্রিক শক্তি এবং কার্যকরীকরণে নমনীয়তার জন্য ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। প্রাকৃতিক পলিমারের পাশাপাশি, বিভিন্ন ধরনের কৃত্রিম পলিমার যেমন: Poly lactic acid(PLA), Polycaprolactone(PCL), Polyurethane(PU), Poly lactic-co-glycolic acid(PLGA), Poly ethylene-co-vinylacetate(PEVA) ন্যানো ফাইবার তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। পলিমার চেইনগুলো ন্যানো ফাইবারের মধ্যে সমযোজী বন্ধন দ্বারা যুক্ত থাকে। ন্যানো ফাইবার তৈরিতে বিশ্বব্যাপী নানা ধরনের পদ্ধতি প্রচলিত রয়েছে। যেমন: Electrospinning, Self-assembly, Template synthesis, Thermal induced phase separation. এগুলোর মধ্যে Electrospinning বহুল ব্যবহৃত পদ্ধতি। কারণ এই পদ্ধতির সাহায্যে খুব সহজেই straight forward setup এবং যে কোন পলিমার থেকে অবিচ্ছিন্ন ন্যানোফাইবার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়।
ন্যানো ফাইবার প্রথম উৎপাদিত হয়েছিল Electrospinning পদ্ধতিতে প্রায় ৪ শতক পূর্বে। এই পদ্ধতি বিকাশের সূচনা করে ইংরেজি পদার্থবিদ উইলিয়াম গিলবার্ট (১৫৪৪-১৬০৩) প্রথমবারে একটি পরীক্ষার মাধ্যমে তিনি তরলের মধ্যে তড়িৎ ক্ষেত্রের আকর্ষণ নথিভুক্ত করেছিলেন। এবারে ন্যানোফাইবার তৈরীর পদ্ধতি গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক:
১.Electrospinning: এই পদ্ধতিটি ন্যানোফাইবার তৈরিতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। এ পদ্ধতির জন্য উচ্চ বিভব supplier ক্যাপিলারি টিউব ব্যবহৃত হয়। একটি ইলেকট্রোডকে পলিমার দ্রবণের মধ্যে এবং আরেকটি ইলেকট্রোডকে collector এর মধ্যে সংযুক্ত করে ন্যানোফাইবার তৈরি করা হয়ে থাকে।
২.Thermal-induced phase separation: এই পদ্ধতিতে Homogeneous polymer কে তাপ গতিবিদ্যার মাধ্যমে multi phase system এ পরিণত করা হয়। এটি পাঁচটি ধাপে সম্পন্ন হয়
1) Polymer dissolution
2) Liquid- liquid or liquid- solid phase separation
3) Polymer geleation
4) Extraction of solvent from the gel with water
5) Freezing and fresh drying.
৩.Self-assembly : এটি সাধারণত পেপটাইড ন্যানোফাইবার এবং পেপটাইডAmphiphiles তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। ন্যানো ফাইবারের অধিক ছিদ্রতা এবং পৃষ্ঠা অনেক বিস্তৃত হওয়ায় এটি বিশেষ ভাবে Biological কাজে বেশি ব্যবহৃত হয়। ন্যানোফাইবার তৈরিতে সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত প্রাকৃতিক পলিমারগুলোর মধ্যে রয়েছে collagen, cellulose, silk fibroin, keratin, gelatin ইত্যাদি। এগুলোর মধ্যে collagen extracellular হওয়ায় এতে প্রচুর connective tissue থাকে। এর গঠন মূলত ব্যাসের উপর নির্ভর করে(৫০-৫০০ন্যানোমিটার) মানব কোষ এর সংযুক্তি বিস্তার পৃথকীকরণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সিল্কের পলিমার দিয়ে তৈরি ন্যানোফাইবার ব্যবহার করে Bone Tissue সংযুক্ত করা হয়। এটি ব্যবহারে৮ সপ্তাহে সম্পূর্ণ অস্থির জোড়া লাগাতে এবং তা ১২ সপ্তাহে তার ত্রুটিগুলি সম্পূর্ণ নিরাময়ে সাহায্য করে থাকে। এই ফাইবারের ব্যবহারের ক্ষেত্র গুলো দিন দিন বেড়েই চলেছে। যেমন: Tissue engineering, Drug delivery, Lithum-air Battery, Air filtration, Optical sensors.
১. Tissue engineering: টিস্যু প্রকৌশলে কৃত্রিম কিছু extracellular matrix ব্যবহার করে কোষের বৃদ্ধি ও টিস্যুকে উজ্জীবিত করা হয়। ন্যানো ফাইবার ব্যবহার করেই বর্তমানে অস্থি ও টিস্যুর এই চিকিৎসাগুলো করা হচ্ছে। ফাইবারের ব্যবহার শুধুমাত্র এখন এই দুটিতেই সীমাবদ্ধ নেই। Cartilage, skin, ligament, skeleton, muscle, blood vessel এবং neural tissue তে কিভাবে এটাকে ব্যবহার করা যায় তা নিয়ে এখন প্রচুর গবেষণা হচ্ছে।
২.Drug delivery: বর্তমানে ন্যানোফাইবার কে দিয়ে নির্দিষ্ট অঙ্গে ঔষধ প্রেরণে ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রাকৃতিক পলিমার যেমন:Gelatin, Anginale এই কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। এতে টিস্যুর কোন প্রকার ক্ষতি ব্যতীতই ও পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া বাদেই বিভিন্ন ঔষধের সুষম বন্টন সম্ভব হচ্ছে।
৩. Lithium air battery: বিভিন্ন ধরনের সুবিধা থাকায় বর্তমানে এই ব্যাটারি চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্যাটারির মধ্যে থাকা লিথিয়াম অক্সাইড ন্যানোফাইবার(কার্বন ফাইবার) এর সাথে বিক্রিয়া করে। এতে উৎপন্ন Li ও অক্সিজেন আবার পরিবেশে চলে আসে। কিন্তু এর মধ্যে যে বিভব থাকে তাকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহ করা সম্ভব। কার্বন ফাইবার এখানে ক্যাথোড হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
৪. Air filtration: Nanofiber ব্যবহার করেVolatile organic compounds দূরীভূত করা হয়। এছাড়াও ন্যানোফাইবার ব্যবহার করে ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া এলার্জি ধুলাবালি থেকে সুরক্ষা পাওয়া যায়। তাই এই ফাইবার কে air filtration এ ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
৫. Optical sensors: ন্যানো ফাইবার এর উৎপাদন খরচ তুলনামূলক কম হবার কারণে বর্তমানে এটিকে optical fiber হিসেবে ব্যবহার করা যায় কিনা এ নিয়ে প্রচুর গবেষণা চলছে। Electrospun পদ্ধতিতে তৈরি ন্যানোফাইবার বিশেষভাবে Optical sensors এর কাজে ব্যবহার যোগ্য।
এছাড়া বর্তমানে তেল পানি পৃথক করতে, স্পোর্টস টেক্সটাইলে, ক্যান্সার চিকিৎসায় ন্যানোফাইবার ব্যবহার হচ্ছে। যা ক্রমেই টেক্সটাইল কে আরো ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর জিনিসের মধ্যে নিয়ে যাচ্ছে। যা ভবিষ্যতে টেক্সটাইলের সম্ভাবনাকে আরও দ্বিগুণ বৃদ্ধি করতে সাহায্য করছে।
তথ্যসূত্র: Wikipedia, YouTube, Google, Google scholar
Shourov Kumar karmoker
Department :Textile Engineering
Year: 1st
Semester : 2nd
Batch : 40th
Ahsanullah University of Science and Technology