টেক্সটাইল শিল্প পানির অন্যতম বৃহৎ গ্রাহক এবং রাসায়নিক বিক্রিয়ায় উৎপন্ন বর্জ্য দ্বারা পরিবেশকে দূষিত করার জন্যও দায়ী। এটি অনুমান করা হয় যে গড়ে এক কেজি টেক্সটাইল উপাদানের প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য, ১০০-১৫০ লিটার পানির প্রয়োজন হয়। অনেক গুলি সংস্থা পানি সংরক্ষণ, পুনর্ব্যবহারযোগ্য এবং অন্যান্য নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে পানির ব্যবহার পিছিয়ে দেওয়ার দিকে কাজ করছে।পানি হলো প্রি-ট্রিটমেন্টের মূল উপাদান এবং ফিনিসিং প্রক্রিয়ারও; যেমন ধোয়া, ব্লিচিং, ডাইং, রিঞ্জিং এবং স্কাউরিংয়ের দ্রাবক হিসাবে ব্যবহৃত হয়। বিশ্বব্যাংকের মতে, টেক্সটাইল ডায়িং এবং ট্রিটমেন্ট পানি দূষণের ১৭-২০% এর উৎস। কয়েক বছর আগে পর্যন্ত, ডায়িং কাপড়ের পরিবর্তে পানি ব্যবহারের বিকল্প ছিল না। ড্রাই ডায়িং , একটি পানিহীন ডায়িং কৌশল। এই প্রক্রিয়াটি টেক্সটাইল উপকরণ ডায়িং করতে কার্বন ডাই অক্সাইড ব্যবহার করে। প্রচলিত পানি ভিত্তিক পদ্ধতিগুলির মতো একই ফলাফল সরবরাহ করে কার্বন ডাই অক্সাইড ডায়িং কাপড়ের একটি দুর্দান্ত সমালোচিত তরল রূপ।
ডায়িং শিল্পে পানির বিকল্প আরো কয়েকটি পদ্ধতি রয়েছে যা নিয়ে পরবর্তীতে আলোচনা করা হচ্ছে।
আল্ট্রাসোনিকঃ
আল্ট্রাসোনাসিক ফাইবার এবং কাপড়ের রঙিনের সাহায্যে ফাইবারের ছিদ্রগুলিতে ছাপানো রং উন্নত হয় এবং বর্ণের শক্তি এবং বর্ণের দৃড়তা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। আল্ট্রাসোনিক ডায়িং শিল্পের একটি দ্রুত প্রক্রিয়া, যা হালকা পরিস্থিতি এবং কম তাপমাত্রায় চালানো যেতে পারে। কাপড় এবং টেক্সটাইলের মতো উপকরণগুলির ফাইবারের কাঠামো সন্নিবেশ দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ হয় না এবং অক্ষত থাকে। আল্ট্রাসোনিকেশন আরও ভাল রঙের ফলাফল এবং একটি দ্রুত প্রক্রিয়া যা ট্রিটমেন্টের রংঙকে তীব্র করে তোলে। মাইক্রো স্ট্রিমিং উপাদানগুলির ফাইবার এবং সুতা ছিদ্রগুলিতে ছাপানো রঙের অনুপ্রবেশকে উন্নত করে। আল্ট্রাসোনিক গহ্বর ফাইবারের বাহ্যিক স্তরটি ছিদ্র করে ফাইবারের অভ্যন্তরে ডায়িং প্রসারণের হারকে ত্বরান্বিত করে, যাতে ডায়িং ফাইবার ছিদ্রগুলিতে প্রবেশ করতে পারে। একই সাথে,ডাই এবং ফাইবারের মধ্যে রাসায়নিক বিক্রিয়াকে গতি দেয়।
আল্ট্রাসাউন্ড তরঙ্গগুলি দ্রবীভূত অণুগুলিকে ফাইবার থেকে তরলে পরিণত করে যাতে গ্যাস হতে পারে, ফলে দ্রুত এবং সম্পূর্ণ ফাইবারের রঙিনের জন্য ডাই-ফাইবারের যোগাযোগ এবং অনুপ্রবেশ সহজতর করে।
জৈবপ্রযুক্তি/বায়োটেকনোলোজিঃ
জৈবপ্রযুক্তিগত সাম্প্রতিক গবেষণা টেক্সটাইল পণ্যের উৎপাদন ব্যয়, উৎপাদন ও প্রক্রিয়াকরণের বিভিন্ন ধাপে ব্যবহৃত ব্যয়বহুল, পরিবেশদূষক ও বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার কমিয়ে পরিবেশবান্ধব ও সবুজ টেক্সটাইল শিল্পের পথ খুলে দিয়েছে। পরিবেশবান্ধব টেক্সটাইল শিল্প তৈরিতে, বিগত কয়েক বছর যাবৎ টেক্সটাইল পণ্যের উৎপাদন ও প্রক্রিয়াকরণে শিল্পজাত জৈবপ্রযুক্তির ব্যবহারে আশাপ্রদ ফলাফল পাওয়া গিয়েছে।
টেক্সটাইল শিল্পে জৈবপ্রযুক্তির ব্যবহার মূলত এনজাইমের মাধ্যমে। বিভিন্ন ধরনের সাবস্ট্রেট স্পেসিফিক এনজাইম- এমাইলেজ, সেলুলেজ, পেকটিনেজ, কেটালেজ, লেকাসেজ ব্যবহার করে যথাক্রমে ডিসাইজিং, বায়ো-পলিশিং, ডেনিম ওয়াশিং, বায়ো-স্কাউরিং, ব্লিচিং, ইফ্লুয়েন্ট ট্রিট্মেন্ট এর মত গুরুত্বপূর্ণ প্রসেসিং করা হয়ে থাকে। এসকল প্রসেসিং এর প্রচলিত পদ্ধতিতে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অধিকতর শক্তি ও প্রচুর পরিমাণে পানির প্রয়োজন হয়। এছাড়া এসব প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর, এমনকি কখনো কখনো ফাইবারের জন্যও। তাই এসকল রাসায়নিক পদার্থের পরিবর্তে এনজাইমের ব্যবহার যেমন পরিবেশবান্ধব একইভাবে এরা ফাইবার বা টেক্সটাইল পণ্যের প্রক্রিয়াকালীন ক্ষতির পরিমাণ অনেকাংশে হ্রাস করে।
কিছু গবেষকের মতে এনজাইমের ক্যাটালাইটিক ধর্মকে কাজে লাগিয়ে টেক্সটাইল ডাই(Dye) ও ফিনিশিং এজেন্ট তৈরি করা সম্ভব। এখন পর্যন্ত এনজাইম থেকে প্রস্তুতকৃত ডাই ব্যবহার করে wool ফাইবারে ভালো ফলাফল পাওয়া গিয়েছে। এনজাইম ক্যাটালাইজড বায়ো-ডাই এর প্রধান সুবিধা হলো, এটি ব্যবহারে বিষাক্ত সহ-উৎপাদ ও ইফ্লুয়েন্ট তৈরী না হওয়ায় এটি পরিবেশবান্ধব।
ডিজিটাল প্রিন্টিংঃ
টেক্সটাইল শিল্পে আজ অবধি বিভিন্ন আশাপ্রদ ক্রমবিকাশের মধ্যে একটি অন্যতম হলো ডিজিটাল প্রিন্টিং। ফেব্রিকে ডিজিটাল প্রিন্টিং এর জন্য এক ধরনের ডাই-সাবলিমেশন প্রিন্টার ব্যবহার করা হয়। উক্ত প্রিন্টারে তাপ প্রয়োগের মাধ্যমে ডিজাইন ফেব্রিকে স্থানান্তর করা হয়। ডিজিটাল প্রিন্টিংকে ‘পরবর্তি প্রজন্ম’র প্রিন্টিং পদ্ধতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই পদ্ধতির অন্যতম সুবিধা হলো এতে রং ও রিপিট সাইজের কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। একই সময়ে একাধিক রঙ এবং শেড প্রিন্ট করা সম্ভব উক্ত পদ্ধতিতে। এছাড়া উক্ত পদ্ধতির বেশ কয়েক্টি সুবিধা রয়েছে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, ডিজিটাল প্রিন্টিং পরিবেশবান্ধব এবং প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় অতি অল্প পানির প্রয়োজন এ পদ্ধতিতে। যেহেতু এ পদ্ধতিতে ডাই নির্গমনের প্রয়োজন নেই তাই এতে পরিবেশ দূষণের পরিমাণ কম।
প্লাজমা ট্রিটমেন্ট ঃ
টেক্সটাইল শিল্পটি সবচেয়ে শক্তিশালী শিল্প এবং এটি
টেক্সটাইল প্রক্রিয়াকরণে রাসায়নিক পদার্থ এবং পানি অনেক পরিমানে ব্যবহার করে।এতে পরিবেশ এর যে ক্ষতি হয় তা কমাতে প্লাজমা পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।
প্লাজমা হলো পদার্থের চতুর্থ অবস্থা (কঠিন,তরল,বায়বীয় এবং প্লাজমা)। এতে চার্জড অনেক গুলো আয়ন এবং শক্তিশালী ইলেকট্রন ভারসাম্য অবস্থায় থাকে। এই প্রকিয়ায় বায়ুর সাহায্যে চাপ দিয়ে ইলেকট্রন আয়ন এর মাধ্যমে টেক্সটাইল পন্য এর উপর প্লাজমা প্রয়োগ করা হয়।
বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। যেহেতু এটি একটি শুষ্ক প্রক্রিয়া,পানির খরচ কম।যেসব দেশে পানি উৎস কম তাদের জন্য এটি একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অর্থনৈতিক দিক থেকে এর উপকারিতা অনেক কারণ এটি পানি এবং রাসায়নিক পদার্থ এর খরচ কমায়।
ন্যানোটেকনোলজিঃ
ন্যানোটেকনোলজি একটি ক্রমবর্ধমান প্রযুক্তি যা একটি নতুন শিল্প বিপ্লব হিসাবে ধরা হয়।কিন্তু এর আবিস্কার আরও অনেক বছর আগে হয়েছিলো।ন্যানো টেকনোলজি হলো এমন একটি বিজ্ঞান, প্রকৌশল এবং প্রযুক্তি যা সাধারণত ১ থেকে ১00 ন্যানোমিটার দৈর্ঘ্য এর পদার্থ নিয়ে কাজ করে থাকে।এতে দুটি প্রধান পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। একটি হলো “bottom-up” বা নিচ থেকে উপরে এবং অপরটি “top-down” বা উপর থেকে নিচে। বিশ্বব্যাপী দৃষ্টি আকর্ষণ করছে কারণ এটি বিস্তৃত ব্যবহার এবং বিশাল ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা আছে বলে ধারণা করা হয়। টেক্সটাইল শিল্প ন্যানো প্রযুক্তি দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে এবং বানিজ্যিকভাবে লাভজনক হচ্ছে।ন্যানোটেকনোলজি ব্যবহার করার ফলে কাপড়ের স্থায়িত্ব বাড়ে।এছাড়াও বস্ত্র শিল্পে কাপড়ের ওজন ও ঘনত্ব ঠিক রাখার জন্য ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহৃত হচ্ছে।বর্তমানে স্পোর্টি ফিল্ড, স্পেস ফিল্ড এ নানাভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে ন্যানোটেকনোলজিকে।
writer’s infoTechnology
Sconce Lawrence Gomes
3rd year 2nd semester
Department of Textile Engineering
Ahsanullah University of Science and Technology
Habiba Akter Baly
3rd year 2nd semester
Department of textile Engineering
Ahsanullah University of science and
Pranto kumar dev
2nd year 2nd semester
Department of textile Engineering
Ahsanullah University of science and technology