মানব জীবনের সৃষ্টি লগ্ন থেকেই টেক্সটাইল এর পথ চলা, দিনে দিনে যা আরো সুপ্রসরিত হয়েছে। মানুষ যত সামনে এগিয়েছে, টেক্সটাইলকেও তাদের সাথে কদম মিলিয়ে আগাতে হয়েছে। এরই প্রতি স্বরূপ আজকের এই আধুনিক যুগের আধুনিক টেক্সটাইলকে আমরা দেখতে পাচ্ছি। দিন যত অতিবাহিত হয়েছে,টেক্সটাইল এর কাজের ক্ষেত্রও তত বৃদ্ধি পেয়েছে। তারই মাঝে একটি হচ্ছে বর্তমানের ক্রীড়াঙ্গন।
ক্রীড়াঙ্গনে টেক্সটাইল এর ব্যবহার অনেক। আপাত দৃষ্টিতে সবাই শুধু খেলার সময়কার পরিধেয় কাপড় বা জার্সিকে টেক্সটাইল বস্তু হিসেবে চিনলেও, প্রকৃত পক্ষে ক্রীড়াঙ্গনে টেক্সটাইল এর ব্যবহার জার্সি ছাড়িয়েও আরো অনেক দূর এগিয়ে গেছে। খেলা চলা কালীন এবং খেলার পূর্ববর্তী অথবা পরবর্তী সময় খেলোয়াড়েরা যত সামগ্রী ব্যবহার করে থাকেন এর সবই টেক্সটাইল এর অন্তর্ভুক্ত।
প্রথমে আসি জার্সির কথায়। জার্সি ফেব্রিক প্রথম দিকে উল দিয়ে তৈরি করা হত যা একটি নেচারাল ফাইবার, কিন্তু এখন জার্সি ফেব্রিক মূলত ম্যান মেইড ফাইবার তথা সিন্থেটিক ফাইবার দিয়ে তৈরি করা হয়। এর কারণ হচ্ছে জার্সি কাপড়কে ওজনে হাল্কা এবং শক্তিশালী করে বানানোর জন্য। তবে জার্সির ফেব্রিক: কটন, সিল্ক, লিলেন ইত্যাদি ফাইবার দিয়েও তৈরি করা যায়। আবার চাহিদামতো বৈশিষ্ট্য আনতে জার্সি ফেব্রিক বিভিন্ন ব্লেন্ডেড ফাইবার(একাধিক ফাইবারের মিশ্রণে তৈরিকৃত ফাইবার যেমন: CVC, PC ইত্যাদি) দিয়েও তৈরি করা হয়।
উল্লেখ্যঃ জার্সি ফেব্রিক তৈরি করতে হলে কিছু বৈশিষ্ট্য থাকা লাগে। যেমনঃ ফেব্রিকটা যথেষ্ট স্ট্রেচেবল(টান সহ্যক্ষমতা আছে এমন) কিনা, পানি শোষণ করার ক্ষমতা কেমন, ওজনে হাল্কা কিনা, জার্সির বাহিরের সারফেস মসৃণ কিনা, কালার ইফেক্ট কেমন ইত্যাদি।
এছাড়াও জার্সির পাশাপাশি খেলার অন্যান্য সরঞ্জাম, যেমনঃ খেলার বল, খেলোয়াড়দের বুট জুতা, আর্মব্যান্ড, ফেইসমাস্ক ইত্যাদি সবকিছুই প্রত্যক্ষ এবং পরক্ষভাবে টেক্সটাইল এর অন্তর্ভুক্ত।
এবার আসি বাংলাদেশের ক্রীড়া বিষয়ক টেক্সটাইল শিল্পের সম্ভাবনা নিয়ে। বাংলাদেশে পোশাক শিল্পের শুরু ষাট এর দশকে, গত ৭ দশক ধরে বাংলাদেশে টেক্সটাইল এর শিল্প বিপ্লব ঘটছে বলা যায়। দেশের মানুষের পোশাকের চাহিদা পূরণ করে বাংলাদেশ অনেক আগে থেকেই তৈরি পোশাক রপ্তানি করে থাকে। বর্তমানে এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানিমুখী শিল্পখাত। এই খাতটাকে সংক্ষেপে RMG (Ready Made Garments) Sector বলে। পোশাক রপ্তানি করার দিক দিয়ে বাংলাদেশ এখন সারা বিশ্বে ২য় তে অবস্থা করছে (১ম স্থানে চীন)। বিদেশি পোষাক আমদানিকারকদের মধ্যে একটা বড় অংশের চাহিদা হচ্ছে এই জার্সি টেক্সটাইল। উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিয়া, ইউরোপ এর বিভিন্ন দেশের জাতীয় দল, ক্লাব পর্যায়ের খেলার জন্য যেই জার্সি লাগে সেগুলো তারা ভালো মানের এবং কম খরচের মধ্যে পেতে চায়, যেটা তারা সাধারণত বাংলাদেশ এ পেয়ে থাকে। এজন্য তাদের একটা বড় অংশ তাদের চাহিদা নিয়ে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিকারকদের দারস্থ হন। এরপর সেই চাহিদা অনুযায়ী বাংলাদেশের পোশাক কারখানার শ্রমিকরা অক্লান্ত পরিশ্রম করেন এবং সেই জার্সি তৈরি করে দেন, যার কারণে আমিরা বিভিন্ন দেশের জাতীয় দল অথবা বিভিন্ন দেশের ক্লাবের জার্সিতে “Made in Bangladesh” লেখাটি দেখতে পাই। এবং এর ফলস্বরূপ বাংলাদেশ আয় করে থেকে প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা যেটা বাংলাদেশের মানুষের জীবনযাপনের মান উন্নতি করতে ব্যাপকভাবে সহায়তা করে ।
পোশাক শিল্প খাতের একটা বড় অংশের নাম এখন জার্সি ফেব্রিক। এই জার্সি ফেব্রিক তৈরি, বাজারজাতকরণ এবং রপ্তানি, সব ক্ষেত্রেই জড়িত আছে এদেশের লাখ লাখ কর্মজীবী মানুষ। তারা যেমন এই ক্ষাত থেকে জীবিকা নির্বাহ করছেন, তেমনই দেশকে এনে দিচ্ছেন মূল্যবান বৈদেশিক মূদ্রা। ভবিষ্যতে এই ক্ষাত থেকে বাংলাদেশ আরো লাভবান হতে পারে, তাই এই ক্ষাতকে যথাযথ ভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে।
Source: [ Wikipedia, BBC News, Textile Talks ]
Writer’s Information :
Noor Mohammad Belal Towsif
Ahsanullah University of Science and Technology.
Semester: 2nd year, 2nd semester.
Batch: 41th