“পানির অপর নাম জীবন,
দূষিত পানি হয় মৃত্যুর কারণ।”
পৃথিবীর অধিকাংশ জলভাগ হলেও এতে মাত্র ২.৫% পানি পানযোগ্য। সব শিল্পকারখানাতে পানির প্রয়োজন যার কারণে প্রচুর পরিমাণ পানি ব্যবহৃত হয়ে থাকে, যা আমাদের খাবার পানি।কারণ ইন্ডাস্ট্রিগুলোর যন্ত্রপাতিতে সমুদ্রের লবণাক্ত পানি ব্যবহৃত হলে অল্প দিনের মধ্যে তা নষ্ট হয়ে যাবে।তাই ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্টরা খাবার পানি ব্যবহৃত করে যার ফলস্বরূপ কিছুদিনের মধ্যে পৃথিবী পানির সংকটে পড়তে যাচ্ছে।
এছাড়া বর্তমানে শিল্পায়নের সাথে তাল মিলাতে ব্যাপকহারে শিল্পকারখানা স্থাপন করা হচ্ছে। যার জন্য দূষণের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে ভয়ংকররূপে, ফলে সৃষ্টি হচ্ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। শিল্পকারখানার ব্যবহৃত দূষিত পানি জলাশয়ে ছেড়ে না দিয়ে পয়ঃনিস্কাশনের মাধ্যমে পূনরায় ব্যবহার করলে পরিবেশের বিপর্যয় এড়ানো সম্ভব এবং সেই সাথে সম্ভব পানি অপচয়রোধ করা।পানি পরিশোধনের এই প্রক্রিয়াটি সাধারণত ETP নামে পরিচিত।
ETP বা Effluent Treatment Plant একটি প্রকল্প যার মাধ্যমে শিল্পকারখানার দূষিত পানিকে পরিশোধন বা পয়ঃনিষ্কাশনের মাধ্যমে পুনরায় ব্যবহারযোগ্য করা হয়। প্রবহমান পদার্থকে(তরল বা বায়বীয়) ইংরেজিতে বলা হয় Effluent এবং এই প্রবহমান পদার্থ পরিশোধনের জন্য ব্যবহৃত পদ্ধতিকে বলে Effluent Treatment Plant, যার অর্থ বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ স্থাপনা।
বর্জ্য অপসারণ চিকিৎসা বা ETP প্লান্টের কার্যক্রমের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা-
★প্রথমে মাধ্যকর্ষণ শক্তির সাহায্যে বর্জ্য জল প্লান্টের মধ্যে প্রবেশ করাতে হবে।
★এরপরে একটি যান্ত্রিক পর্যায়ের সূচনা হয় যা প্রাক-প্রাথমিক চিকিৎসা নামে পরিচিত। এই পর্যায়ে পানিকে নুড়িপাথরের একটি স্তরে প্রবেশ করানো হয়।যার মধ্যে শক্ত বা সলিড আবর্জনা থেকে যায় এবং পানি নিষ্কাশন হয়ে যায়।
★পরবর্তী ধাপ হচ্ছে অবক্ষেপনের যা প্রাথমিক পর্যায় নামে পরিচিত।এই পর্যায়ে ফ্যানের সাহায্যে একটি মিশ্রণ তৈরি করা হয়।যা ঠান্ডা হওয়ার পর শোধিত পানি প্রান্তে থাকে এবং বর্জ্য জলের দূষিত কণা নীচে থিতিয়ে পড়ে।
★এরপর শুরু হয় সেকেন্ডারি পর্যায়,যা জৈবিক পর্যায় নামে পরিচিত। কারণ এটি একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া।এতে ব্যক্টেরিয়ার ব্যবহার করা হয় যা জলের দূষিত পদার্থ(তেল,চর্বি,কার্বন,ফসফরাস, জীবাশ্ম) গ্রাস করে। এবং কাদায় পরিণত হয়ে স্টোরেজ ট্যাংকে চলে যায়।
★স্টোরেজ ট্যাংকে আসা কাদামাটির স্তুপ থেকে যান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় পানি এবং বর্জ্য আলাদা করা হয়।এই বর্জ্য সার কারখানায় ব্যবহৃত হয়।
★শেষধাপটি হল পরিদর্শন।এই ধাপে প্লান্ট থেকে প্রাপ্ত শোধিত পানির দূষণের স্তর পরীক্ষা করা হয়।পরিশুদ্ধ পানির গুনাবলী পাওয়া গেলে তা পুনরায় কারখানায় ব্যবহৃত হয়।
বর্তমানে শিল্পকারখানা আধুনিকরনের লক্ষ্যে কৃত্রিম মেঘ এবং বৃষ্টিপাতের মাধ্যমেও বিশুদ্ধ পানি পাওয়ার প্রকল্প তৈরি করা হচ্ছে।এছাড়াও দূষিত পানি থেকে বর্জ্য পরিশোধনের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে ঝিনুক-শামুক। ঝিনুক-শামুক ফসফরিক এসিডের(H3PO4) এর মাধ্যমে পানি থেকে বর্জ্য শোষন করে এবং পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। একটা ঝিনুক দৈনিক ৫০গ্যালন পানি পরিশোধন করে।
কৃত্রিম মেঘ-বৃষ্টিপাতের মাধ্যমে পানি পরিশোধন বর্তমানে বেশ আলোচিত একটি বিষয়।
কৃত্রিম বৃষ্টিপাত তিনটি ধাপে সংঘটিত হয়:
১.মেঘের অবস্থান এবং প্রকৃতি অনুযায়ী রকেট বেলুনের সাহায্যে রাসায়নিক পদার্থকে মেঘের জলীয়কণা থেকে জলরাশি করা হয়।
২.মেঘপুঞ্জের ঘনত্ব বৃদ্ধির জন্য শুষ্ক বরফ,ইউরিয়া ও খাদ্য লবন যুক্ত করা হয়।যা মেঘ মধ্যস্থ জলীয় বাষ্পকে জলকণাতে পরিণত হতে সাহায্য করে।
৩.তারপরে মেঘের একটি ভারসাম্যহীন অবস্থার সৃষ্টি করা হয়।যার মাধ্যমে বড় বড় জলবিন্দু বা বৃষ্টিপাতের সৃষ্টি করা হয়।
কৃত্রিম বৃষ্টিপাত আলোচিত হলেও অনেক ব্যয়বহুল তাই বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো এই প্ল্যান্ট ব্যবহার করে।তবে আরো উন্নত এবং স্বল্প খরচ সম্পন্ন প্রকল্প উদ্ভাবনের লক্ষ্যে গবেষকেরা কাজ করে যাচ্ছে। আশা করা যায়,ভবিষ্যতে উন্নত সকল প্রকল্পের মাধ্যমে রক্ষা পাওয়া যাবে প্রাকৃতিক বিপর্যয় বা পানি সংকটের মত সমস্যা থেকে।
সোর্সঃ উইকিপিডিয়া,ব্রিটানিকা,ওয়াটারসল্যুশনস, parafinechem,Green solution.
Writer Information
Alia Yasmin
Team member-Team TES DWMTEC
Dr M A Wazed Miah Textile Engineering College.