আমাদের দেশে বিশেষ করে বিয়ের কনেকে লাল টুকটুকে শাড়িতেই দেখতে সবাই বেশি পছন্দ করে। তবে লাল টুকটুক শাড়িই যে পরতে হবে এমন কোনো ধরা বাঁধা নিয়ম নেই। আজকাল অনেক কনেই তার বিয়েতে শাড়ি থেকে লেহেঙ্গা পরার আগ্রহ বেশি পোষণ করে থাকেন।এর প্রধান কয়েকটি কারণ হচ্ছে যারা শাড়ি পরতে পারে না বা সামলাতে পারে না, তাদের জন্য লেহেঙ্গা পরা বা সামলানো অনেক সহজ। আর প্রধান কারণ হচ্ছে শাড়ি থেকে লেহেঙ্গা বেশি গর্জিয়াস হয়ে থাকে।এছাড়াও কেউ চাইলে তার পছন্দ অনুযায়ী ডিজাইন বা কারুকাজ করিয়ে নিতে পারে।
ইতিহাসঃ
লেহেঙ্গা হল ঘাগরার রকমের এবং ১৮৭৮সালের তথ্য অনুযায়ী এটি তৈরী করা হয় ঘাগরার থেকে উৎকৃষ্ট দ্রব্য দিয়ে। শহরতলি অঞ্চলে লেহেঙ্গা জনপ্রিয় ছিল এবং পাঞ্জাবী কনেরা এই লেহেঙ্গা বিয়েতে ব্যবহার করেন।
লেহেঙ্গা, লেহঙ্গা বা ল্যাঙ্গা (ঘাগরা, চানিয়া, পাভাদাই বা লাছা নামেও পরিচিত) হলো ভারতীয় উপমহাদেশের মহিলাদের পরিধেয় গোড়ালি পর্যন্ত দৈর্ঘ্যের স্কার্টের একটি রূপ, যা ভারতীয় উপমহাদেশে বিশেষত- ভারতের হিন্দি বলয় অঞ্চলে পরা হয়। লেহেঙ্গা সাজাতে বিভিন্ন ধরন এবং সূচিকর্মের শৈলী ব্যবহৃত হয়। গোটা পাত্তি সূচিকর্ম প্রায়শই উৎসব এবং বিবাহের জন্য ব্যবহৃত হয়। লেহেঙ্গা কখনও কখনও ঘাগরা চোলি বা ল্যাঙ্গা ভোনির নীচের অংশ হিসাবে পরিধান করা হয়।
জনপ্রিয়তাঃ
আজকাল লেহেঙ্গা মহিলাদের একটি জনপ্রিয় পোশাক হয়ে উঠেছে।বর্তমানে এই পোশাকটি পার্টি থেকে বিয়ের অনুষ্ঠান সবকিছুতেই নারীদের প্রথম পছন্দ হয়ে থাকে।শুধু যে কনে এই পোশাক পরে তা নয়,বিয়ের অনুষ্ঠানে আসা অতিথিরাও এই পোশাক পরতেও বেশ পছন্দ করে থাকে। লেহেঙ্গা বেশ স্টাইলিশ এবং দেখতেও বেশ সুন্দর। বজারে এখন নিত্যনতুন ডিজাইনের লেহেঙ্গা পাওয়া যায়। চলুন এবার জেনে নেই সেই সমস্ত লেহেঙ্গার কালেকশন সম্পর্কে—
শারারা কাট লেহেঙ্গাঃএকটি শারারা লেহেঙ্গা পাভাদাই, ল্যাঙ্গা দেওয়ানি, ল্যাঙ্গা ভোনি বা অর্ধ শাড়ি হিসাবেও পরিচিত। এটিতে পালাজ্জো নামক বৃহৎ আকারের প্রসারিত প্যান্ট রয়েছে। অন্ধ্র প্রদেশ এবং কর্ণাটকে এটি ল্যাঙ্গা ভোনির অংশ। এটি দক্ষিণ ভারতে সাধারণত ওড়না কোমরে জড়িয়ে এবং শাড়ির মতো কাঁধে ঝুলিয়ে পরা হয়।
স্ট্রেইট কাট লেহেঙ্গাঃএকটি সোজা লেহেঙ্গায় কোনও স্তর ছাড়াই একটি সরল গঠন থাকে, কখনও কখনও এতে সহজে চলাচলের জন্য পাশের দিকে চেরা থাকে। এই ধরনটি বিশেষ অনুষ্ঠানে পরিধান করা হয়।
আনারকলিঃআনারকলি মহিলাদের অন্যতম একটি পছন্দের লেহেঙ্গা। এটি বর্তমানে বেশ জনপ্রিয়। একাধিক বিয়ে বাড়িতেই আজকাল এটি মেয়েদের পড়তে দেখা যায়। এমনকি বিয়ের কনেকেও এই আনারকলি লেহেঙ্গা পরতে দেখা যায়। শুধু বিয়ের অনুষ্ঠান নয় যেকোনো পার্টি অথবা যেকোনো অনুষ্ঠানের জন্য পারফেক্ট। আনারকলি স্টাইলের লং সিল্কের কুর্তা সঙ্গে লেহেঙ্গা স্কার্ট দারুণ কম্বিনেশন।
এ-লাইন লেহেঙ্গাঃএ-লাইন লেহেঙ্গায় একটি এ-লাইন স্কার্ট এবং পাড় রয়েছে এবং এর আকারের জন্য এটির নামকরণ করা হয়েছে, যা ইংরেজি অক্ষর “A” এর অনুরূপ। স্কার্টটি কোমরের দিকে আঁটসাঁট হয়ে থাকে এবং নীচের দিকে ছড়িয়ে যায়।
দ্বিগুণ প্রসারিত লেহেঙ্গাঃএকটি দ্বিগুণ প্রসারিত লেহেঙ্গা হল এক ধরনের বহু-স্তরযুক্ত ক্যান-ক্যান-স্কার্ট যেটি অতিরিক্ত প্রসারিত এবং অধিক পরিমানযুক্ত।
প্যানেল লেহেঙ্গাঃএকটি প্যানেলযুক্ত লেহেঙ্গার কাপড়ের বেশ কয়েকটি অনুভূমিক প্যানেল একসাথে সেলাই করে প্রসারণ করা হয়, যেটি একটি পূর্ণাঙ্গ স্কার্ট হয়। অনুভূমিক প্যানেলগুলি একই বা বিভিন্ন আকারের এবং আকৃতির হতে পারে।
মারমেইড লেহেঙ্গাঃএকটি মারমেইড লেহেঙ্গা, যা ফিশটেল বা ট্রাম্পেট হিসাবেও পরিচিত, মাছের লেজের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। এই ধরনটি কোমর থেকে হাঁটু পর্যন্ত আঁটভাবে লাগানো, তারপরে নিচের দিকে ছড়িয়ে যায়।
এছাড়াও আরো কালেকশনের লেহেঙ্গা রয়েছে।
একঘেয়ে লেহেঙ্গার নতুন লুকঃ
অনেক বেশি দাম দিয়ে লেহেঙ্গা কিনে একবার পরেছেন , কিন্তু দ্বিতীয়বার সেই লেহেঙ্গা পরতে আর ভাল লাগছে না। এই সমস্যায় অনেকেই ভুগে থাকেন। পুরোনো লেহেঙ্গাকে নতুন লুক কীভাবে দেওয়া যায়—-
১.লেহেঙ্গাকে নতুন লুক দিতে চাইলে লেহেঙ্গার সঙ্গে ম্যাচ করে ব্লাউজটা পাল্টে নিন।
২.এছাড়া বড় কুর্তা দিয়ে লেহেঙ্গা পরতে পারেন। তাতেও নতুন লুক আসবে। সকলের মধ্যমণি হতে এটা একদম বেস্ট অপশন।
৩.ইন্দো-ফিউশন স্টাইল এখন ফ্যাশনে ইন। এই ধরনের লুক চাইলে অনায়াসেই লেহেঙ্গার সঙ্গে সিল্কের ব্লাউজ ট্রাই করুন। তবে সেইক্ষেত্রে এমন ভাবেই ব্লাউজ বানাবেন যাতে ওড়না না নিতে হয়।
৪.সবসময় একভাবে লেহেঙ্গার আঁচল না দিয়ে মাঝে মধ্যে প্লিট করে পড়ুন। তাতে যেমন দেখতে রোগা লাগবে তেমনি লুকটাও পাল্টে যাবে।
৫.গয়না বাছার ক্ষেত্রেও সর্তক থাকুন। এই ধরনের ড্রেসের সঙ্গে একটু অফবিট ধরনের গয়না পড়ুন।
৬.শুধু লেহেঙ্গাই নয়, তার সঙ্গে মানানসই জুয়েলারিও পরতে হবে। এখন বিভিন্ন ধরনের কুন্দনের গয়না হাল ফ্যাশনে খুবই হিট। এছাড়া চোকার হার, ঝুমকো, হাতের চুড়ি সব কিছুই মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ করেও নেওয়া যেতে পারে।
৭.যারা বিয়ের অনুষ্ঠানে ভাবছেন লেহেঙ্গা পরবেন তারা অনায়াসেই সোনার জিনিস দিয়েও সাজতে পারেন। তবে বিয়ের লেহেঙ্গাতে যেন সোনালি জড়ির কাজ থাকে তাহলে তা অনেক বেশি গর্জিয়াস হবে।
৮.বিয়ে হোক বা রিসেপশন বা যে কোনও অনুষ্ঠান লেহেঙ্গার সঙ্গে মানানসই সাঁজটা কিন্তু মাস্ট। যে যেরকম সাজতে ভালবাসেন সেই অনুযায়ী সেজে নেবেন। আর তাতেই দেখবেন আপনি সকলের মধ্যমণি হয়ে গেছেন।
তথ্য সংগ্রহঃ-
Wikipedia
YouTube
Poriborton.com
Prothomkolkata.com
bangla.asianetnews.com
লেখক পরিচিতিঃ
ফাতেমা
২য় বর্ষ, ব্যাচ-২৪
বস্ত্র পরিচ্ছদ ও বয়নশিল্প বিভাগ
বাংলাদেশ গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ