ভ্যাট ডাই সবচেয়ে প্রাচীন প্রাকৃতিক কালারিং দ্রব্য।এটি পানিতে অদ্রবণীয়। ভ্যাটিং না করে টেক্সটাইল এটি প্রয়োগ করা যায় না। এই ডাইকে রিডিউসিং এজেন্ট দ্বারা প্রক্রিয়াজাত করলে লিকো-যৌগে পরিণত হয় যা ক্ষারের উপস্থিতিতে পানিতে দ্রবণীয়। লিকো-যৌগে পরিণত হওয়ার পদ্ধতিকে ভ্যাটিং বলে। এই লিকো – যৌগ সেলুলোজের সহিত বিক্রিয়া করে। একে বাতাসে অনাবৃত রাখলে এটি ফাইবার এর মধ্যে পুনরায় আয়নিত হয়ে অদ্রবণীয় কালারে পরিণত হয়।
এই ডাইয়ে এক বা একাধিক কার্বক্সিল গ্রুপ থাকে। এদেরকে সোডিয়াম সালফেটের সাথে প্রক্রিয়াজাত করলে হাইড্রোজেনের সহিত যুক্ত হয়ে লিকো-যৌগ তৈরি করে। এই সেকেন্ডারি অ্যালকোহল পানিতে দ্রবীভূত নয় কিন্তু ক্ষারের উপস্থিতিতে ইহা দ্রবীভূত হয়ে থাকে।
প্রাচীনকালে কেমিক্যাল রিডিউসিং এজেন্ট পর্যাপ্ত ছিল না। তাই প্রাকৃতিক ভাবে তৈরি ভ্যাট ডাই কে একটি উডেন ভেসেল এর মধ্যে অরগানিক ম্যাটার দ্বারা ফারমেন্টেশন করে কমানো হত। এই উডেন ভেসেলকে ভ্যাট বলা হত। এজন্য এই ডাই কে ভ্যাট ডাই বলা হয়।
ভ্যাট ডাইকে প্রধানত ২ ভাগে ভাগ করা যায়।-১। ইনডিগো ২। অ্যানথ্রাকুইনোন ।
ভ্যাট ডাই এর সাহায্যে সাধারণত কটন ও উল জাতীয় পণ্যকে ডাইং করা যায়।
কিভাবে কাজ করে এই ভ্যাট ডাই:
ভ্যাট ডাই পানিতে অদ্রবণীয় এবং একে সরাসরি টেক্সটাইল পণ্য এর উপর প্রয়োগ করা যায় না। এজন্য প্রথমে এদেরকে পানিতে দ্রবণীয় অবস্থায় রূপান্তরিত করা হয় এবং তারপর ফাইবার এর উপর প্রয়োগ করা হয়। এ রূপান্তর নিম্নলিখিত ২ ভাবে সম্পন্ন করা যায়।
প্রথমে, সোডিয়াম হাইড্রোজেন সালফেটের সহিত ভ্যাট ডাইকে মিশানো হয়। যা রিডিউসিং এজেন্ট হিসাবে কাজ করে ফলে একটা লিকো যৌগের তৈরি করা সম্ভব । পরবর্তীতে একে সোডিয়াম লবণের সেলুলোজের সহিত বিক্রিয়া করানো হলে তৈরি হয় দ্রবণীয় দ্রবণ । এখন এর মধ্যে যেই পণ্যকে রং করতে হবে তাকে ডুবিয়ে রাখলে সেটি আস্তে আস্তে ডাই শোষণ করে এবং রঙিন বস্তুতে পরিণত হয়।
ভ্যাট ডাইং এর বিভিন্ন রকমের পদ্ধতি:
সমস্ত ভ্যাট ডাই এর ডাইং বৈশিষ্ট্য এক নয়। এজন্য তাপমাত্রা এবং ব্যবহৃত উপাদানের পরিমাণের সাপেক্ষে ডাইং প্রক্রিয়ার তারতম্য ঘটে ।সাধারণত ভ্যাট ডাই কে নিম্নলিখিত ৪ ভাগে ভাগ করা যায়।
১) নরমাল ডাইং পদ্ধতি: যে সকল ভ্যাট ডাইএ অপেক্ষাকৃত অধিক ঘনত্বের ক্ষারের দরকার হয় সেক্ষেত্রে এ পদ্ধতি ব্যবহার করে সাধারণত । এই পদ্ধতিতে নিঃশোষণ ভাল হয় এবং কোন ইলেকট্রোলাইটের প্রয়োজন হয় না। এখানে ৩০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় ডাইং শুরু হয় এবং ডাইং সংঘটিত হয় ৬০-৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়।
২)ওয়ার্ম ডাইং পদ্ধতি: যে সকল ডাইয়ে প্রায় কাছাকাছি ঘনত্বের ক্ষারের দরকার হয় সেক্ষেত্রে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। এখানে ডাইং ৩০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় শুরু হয় এবং ৫০-৬০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় করা হয় ডাইং সম্পন্ন। ডাই সম্পূর্ণ শোষণের জন্য সামান্য পরিমাণ লবণ ব্যবহৃত হয়।
৩)কোল্ড ডাইং পদ্ধতি: এ পদ্ধতিতে ডাইং এর জন্য কম ঘনত্বের ক্ষারের প্রয়োজন। যদিও ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ডাইং শুরু হয় কিন্তু ডাইং ২০-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সম্পন্ন হয়। এখানে ডাইকে সম্পূর্ণ রূপে শোষণের জন্য প্রয়োজন হয় যথেষ্ট পরিমাণ ইলেক্ট্রোলাইটের ।
৪)স্পেশাল ডাইং পদ্ধতি: এই পদ্ধতি বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়ে থাকে । যেমন-ব্লাক ডাই দ্বারা ডাইং করতে প্রয়োজন হলে । এখানে অধিক ঘনত্বের ক্ষারের প্রয়োজন হয়। ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ডাইং শুরু হয় এবং ৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ডাইং সম্পন্ন হয়। ডাই শোষণের জন্য কোন ইলেক্ট্রোলাইটের প্রয়োজন হয় না।
এ সকল বিভিন্ন পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে ভ্যাট ডাই এর সাহায্যে কাপড়কে ডাইং করা হয়ে থাকে।
দিন বদলের সাথে সাথে সবখানে যেমন পরিবর্তন হয়ে চলেছে তেমনি টেক্সটাইল সেক্টরেও হয়েছে চোখে পড়ার মতই পরিবর্তন। সম্পূর্ণ একটা কাপড়কে এক নিমিষেই এক অবস্থান থেকে আরেক অবস্থায় পরিবর্তন করতে টেক্সটাইল এ ডাই এর জুড়ি নেই বললেই চলে। হরেক রকম রঙের জামাকাপড়, বিভিন্ন রকম সাজসজ্জার জন্য ব্যবহার করা হয় নানাবিধ রঙ।তাই বলা যায় শুধু টেক্সটাইল সেক্টরেই নই দৈনন্দিন জীবনেও ডাইয়ের ভূমিকা অপরিসীম ।
মোঃ হাসিবুল হাসান
টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট
বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন এন্ড টেকনোলজি