দুধের নানাবিধ গুণাগুণ এবং এটি একটি আদর্শ খাবার জানা সত্ত্বেও অনেকে এটি খেতে পছন্দ করেন না। কিন্তু দুধ খেতে আপত্তি থাকলেও দুধ পড়তে আশা করি কারোই আপত্তি থাকবে না! হ্যা! অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে… বর্তমানে দুধ থেকে রিজেনারেটেড ফাইবার তৈরি করে তা দিয়ে পরিধেয় বস্ত্র তৈরি করা হচ্ছে যা খুবই আরামদায়ক। পাস্তুরিত দুধ থেকে তৈরি এই ফেব্রিকে প্রায় ১৮ প্রকার এমাইনো এসিড রয়েছে যা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। মিল্ক ফাইবার মূলত ক্যাসিন প্রোটিন এবং অ্যাক্রাইলোনাইট্রাইলের মিশ্রন। ভিস্কস/রেয়ন যে প্রক্রিয়ায় প্রস্তুত করা হয়, এই মিল্ক বা ক্যাসিন ফাইবারও অনুরূপ প্রক্রিয়ায় প্রস্তুত করা হয়ে থাকে। যেহেতু এটি একটি রিজেনারেটেড প্রোটিন ফাইবার, তাই এটি সাধারনত wool ফাইবারের মতোই বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে থাকে।
মিল্ক/ক্যাসিন ফাইবারের ইতিহাস- প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানরা যখন ফেব্রিকের নতুন কোনো উৎস খুঁজছিলো, তখনই তারা দুধের মধ্যে ফেব্রিক তৈরির গুণাবলি আবিষ্কার করে। এরপর ১৯৩০ সালে ইটালিয়ান রসায়নবিদ Antonio Feretti ক্যাসিন বা মিল্ক ফাইবার তৈরির সফল পদ্ধতি আবিষ্কার করেন যাতে তিনি এই ফাইবারের অপূর্ণতাগুলোও কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হন। তখন থেকেই মিল্ক ফাইবারের ব্যাপক উৎপাদন শুরু হয় এবং ১৯৩৯ সালে প্রায় ১০০০০ টন মিল্ক ফাইবার উৎপাদন করা হয়। এটি তখন বিশ্ববাজারে রীতিমতো wool ফাইবারের সাথে প্রতিযোগিতা করে।
মিল্ক বা ক্যাসিন ফাইবার যেভাবে প্রস্তুত করা হয়- পাস্তুরিত দুধ থেকে এসিড ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে মূলত ক্যাসিন পাওয়া যায়। ক্যাসিনকে প্রথমে জমাট বাঁধানো হয় এবং তারপর তা শুকানো হয়। একপর্যায়ে এটি শুকিয়ে সুক্ষ্ম পাউডারের মতো রূপ ধারন করে। এরপর এটি কস্টিক সোডায় দ্রবীভূত করে দ্রবনটি রেখে দেওয়া হয় যতক্ষন না পর্যন্ত এটি উপযুক্ত সান্দ্রতা অর্জন করে। অতঃপর দ্রবনটি স্পিনারেট দ্বারা wet spinning এর মাধ্যমে একটি বাথের মধ্যে ছেড়ে দেওয়া হয় যাতে সালফিউরিক এসিড, ফরমালডিহাইড, গ্লুকোজ এবং পানির মিশ্রন থাকে। এতে করে এটি ফিলামেন্টের আকার ধারন করে। এরপর এটি ফরমালডিহাইড ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে কঠিন করা হয়। এই পর্যায়ে এটিকে Drawing স্টেজে পাঠানো হয়। এই রাসায়নিক ট্রিটমেন্টের পর ফিলামেন্টগুলো ধুয়ে শুকানো হয় এবং মেকানিকালি crimp প্রদান করা হয়। এভাবেই মিল্ক/ক্যাসিন ফাইবার তৈরি হয়ে থাকে।
মিল্ক/ক্যাসিন ফাইবারের বৈশিষ্ট্যঃ ১) এই ফাইবার তাপ নিরোধক। তাই এই ফাইবার দিয়ে তৈরি ফেব্রিক সহজেই শরীরের তাপমাত্রা ধরে রাখতে পারে। ২) এটির স্থিতিস্থাপকতা ধর্ম রয়েছে। ৩) মিল্ক ফাইবারকে কেমিক্যাল টেস্ট বা বার্নিং টেস্টের মাধ্যমে wool ফাইবার হতে আলাদা করা যায় না, শুধুমাত্র মাইক্রোস্কোপ দ্বারাই এটি সম্ভব। ৪) এটি বেশ মসৃণ ফাইবার। ৫) এটির ন্যাচারাল রং উজ্জ্বল সাদা। ৬) সহজেই আর্দ্রতা শোষন করতে পারে। ৭) এই ফাইবার দ্বারা তৈরি ফেব্রিক বেশ আরামদায়ক। ৮) এই ফাইবার সহজেই ডাই করা যায়।
মিল্ক/ক্যাসিন ফেব্রিকের ব্যবহার- ১) T-Shirts, ২) Ladies outwear, ৩) Sports wear, ৪) Undergarments, ৫) Sweaters, ৬) Children’s garments, ৭) Bedding
মিল্ক/ক্যাসিন ফাইবার renewable, bio-degradable এবং eco-friendly. এছাড়া এই ফাইবারের সাথে wool, cotton এবং অন্যান্য ফাইবারের ব্লেন্ডিংয়ের মাধ্যমে আরো উন্নতমানের ফাইবার তৈরি করা সম্ভব। এখন পর্যন্ত তৈরিকৃত অন্যান্য man-made ফাইবারের তুলনায় এই milk fiber অনেক বেশি গুণাগুণসম্পন্ন। এছাড়াও এই ফাইবার ব্যাকটেরিয়াপ্রতিরোধী হওয়ায় বর্তমানে টেক্সটাইলের অনেক ক্ষেত্রেই এই ফাইবার ব্যবহার করা হচ্ছে।
তথ্যসূত্রঃ 1) fibre2fashion.com , 2) textiletoday.com.bd
Writer information:
Raktim Roy Rocky
Textile Engineering (2nd Batch)
Jashore University of Science & Technology