বলুন তো তাঁত শিল্প বললেই আমাদের চোখের সামনে কোন জেলার কথা মাথায় চলে আসে ?? হ্যা পাঠকগণ ঠিকই ধরেছেন ঐতিহ্যবাহী টাংগাইল জেলার কথা যার নাম কিনা দেশ ছাড়িয়েও বিদেশেও বিপুলভাবে পরিচিত। এছাড়াও এর পরে ব্যাপক বিস্তৃতি নিয়ে ছড়িয়ে আছে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের তাঁত। আমরা বাংলাদেশের তাঁত বলতে টাংগাইল,শাহজাদপুর এবং নরসিংদির মাঝেই সীমাবদ্ধ।
কিন্তু কেউ কি আমরা জানি উত্তরবঙ্গের লিচু সমৃদ্ধ ঐতিহাসিক জেলা দিনাজপুরেও রয়েছে তাঁত শিল্প (বাস্তবে ভগ্নপ্রায়)। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক দিনাজপুরের তাঁত শিল্প সম্পর্কে… দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার রাণীরবন্দর এলাকার কারিগরি পাড়ায় অবস্থিত এই শিল্প। শুরুতে এ কাজে জড়িত বেশীরভাগই ছিল হিন্দু।তাদের বিভিন্ন উপাধিও ছিল যেম্ন শীল,প্রামাণিক, পাল,বসাক,নন্দী,সরকার ইত্যাদি। পরবর্তীতে মুসলমানরাও এই পেশায় জড়িয়ে যান তবে তারা নিজদেরকে কারিগর বলতেই পছন্দ করতেন বেশি। পরবর্তীতে তাদের উপাধি অনুসারেই এই পাড়ার নাম হয় কারিগরি পাড়া।
এ পাড়াতে ৪০ থেকে ৫০টি ঘর রয়েছে। যাদের সবারই প্রধান জীবিকাই হচ্ছে এ হস্তচালিত তাঁত। এখানে শুধুই লুঙ্গি তৈরি হয়।
দিনাজপুরে তাঁত শিল্পের উজ্জ্বল সম্ভাবনা, সুদক্ষ তাঁত শিল্পী, সহজলভ্য শ্রমিক থাকার পরেও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা, সহজ শর্তে ঋণ না পাওয়া, বাজারজাতের অভাব এবং প্রয়োজনীয় উপকরণের সুতা-রঙ দফায় দফায় মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় এই শিল্প আজ বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে। ফলে এ শিল্পের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত প্রায় ১০ হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে অতি মানবেতরভাবে জীবনযাপন করছেন। বর্তমানে যে ক’টি তাঁত চালু অবস্থায় রয়েছে সেগুলোও চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ।
একদিনে একটি তাঁত থেকে তিনটি শাড়ি নামানো যায় যা থেকে লাভ হয় মাত্র ১৫০ টাকা।এই স্বল্প আয় দিয়ে বর্তমান প্রেক্ষাপটে টিকে থাকা দুষ্করই বটে। পৈতৃক পেশা বলে অনেকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে থেকেও এখানকার শিল্প টিকিয়ে রেখেছেন। কিন্তু কতদিন সেটা পারবেন তা তারা জানেন না। এজন্য এখানে দরকার সরকারের সুনজর। তাহলে তারা দিনাজপুরের সেই পুরনো তাঁত শিল্পের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে পারবেন বলে মনে করি।
লেখক:
মোঃ হাসিবুল হাসান সুজন।
বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন এন্ড টেকনোলজি
ডিপার্টমেন্টঃ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং