আদিকথনঃ
কোকোনাট ফাইবার / কয়ার হচ্ছে এমন একটি ন্যাচারাল ফাইবার যা কিনা নারিকেলের বাহিরের আস্তরণ (ছোবলা) থেকে সংগ্রহ করে প্রক্রিয়াকরণ এর মাধ্যমে ব্যবহার উপযোগী করে তোলা হয়।কয়ার হচ্ছে শক্ত তন্তু যুক্ত উপাদান। কয়ার শব্দটি মালায়ালাম থেকে এসেছে। প্রাচীনকাল থেকেই কয়ারের ব্যবহার ছিল। কয়েক শতাব্দী আগে মালায়া, জাভা, চীন এবং পারস্য উপসাগরে সমুদ্রের যাত্রা করা ভারতীয় নৌচালকরা তাদের জাহাজের দড়ির জন্য কয়ার ব্যবহার করেছিলেন।
ব্যবহারঃ
এটা সাধারণত ফ্লোর কার্পেট, সুতা, দড়ি, ম্যাটস, টাইলস, ক্রিকেট পিচের জন্য ম্যাটিংস, শিল্পের জন্য কয়ার বেল্টস, ছাদের সারফেস কুলিংয়ের জন্য কয়র ম্যাটিংস, অ্যাকোস্টিক ব্যারিয়ারস, কয়ার জিওটেক্সটাইলস,কায়ার ফাইবার বিছানা (কোকোবেডস), কয়রের সংমিশ্রণে বোর্ড, কয়ারের ঝুড়ি, কোকো পটস , কায়ার ফাইবার ডিস্ক , কয়ার চিপস , কোকো পিট, ব্রাশ, পাপোশ, ফিশিং নেট,নৌকা , বয়া ইত্যাদি তেব্যবহার করা হয়ে থাকে।
স্ট্রাকচারঃ
কয়ারের তন্তুগুলি শক্ত যা নারকেলের বাইরের কোটের মধ্যে পাওয়া যায়।প্রতিটি ফাইবার কোষগুলি সরু এবং ফাঁকা এবং সেলুলোজ দিয়ে তৈরি।অপরিণত অবস্থায় এগুলি ফ্যাকাশে হয়ে থাকে তবে লিগনিনের একটি স্তর তাদের দেয়ালে জমা হওয়ার কারণে পরে তা শক্ত হয়ে যায় এবং হলুদ হয়ে যায়।প্রতিটি কোষ প্রায় ১ মিমি লম্বা এবং ১০ থেকে ২০ মাইক্রো মিটার ব্যাসের হয়।ফাইবার সাধারণত ১০-৩০ সে.মি. লম্বা হয়ে থাকে।
প্রকারভেদঃ
রঙের ভিত্তিতে দুই প্রকারের কয়ার পাওয়া যায়… বাদামি এবং সাদা।
সম্পূর্ণ পাকা নারকেল থেকে বাদামি কয়ার পাওয়া যায় যা কিনা ঘন, শক্তিশালী এবং উচ্চ ক্ষয় প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন।এটি সাধারণত মাদুর, ব্রাশ এবং স্যাকিংয়ে ব্যবহৃত হয়। পরিণত ব্রাউন কয়ার ফাইবারগুলিতে ফ্লাক্স এবং কটনের তুলনায় বেশি লিগনিন এবং কম সেলুলোজ থাকায় এটা বেশি মজবুত হলেও ফ্লেক্সিবিলিটি অনেক কম।
নারিকেল পাকার পূর্বে যে সাদা তন্তুময় অংশ পাওয়া যায় সেটাই সাদা কয়ার।এটা বেশ মসৃণ,সূক্ষ্ম এবং দুর্বল প্রকৃতির।এগুলি সাধারণত মাদুর বা দড়িতে সুতা ব্যবহার করার জন্য ব্যবহার হয়।
দৈর্ঘ্যের ভিত্তিতেও একে ভাগ করা যায়:
>>লম্বা ফাইবার (১৫ সে.মি. বা তারউপরে)
>>মাঝারি ফাইবার (১২-১৫ সে.মি.)
>>ছোট ফাইবার (৬-৮ সে.মি.)
>>খুব ছোট ফাইবার (৪ সে.মি.)
স্পেশাল বৈশিষ্ট্যঃ
কয়ার ফাইবার সাধারণত জলবিরোধী হয় এবং লবণাক্ত জলের দ্বারা ক্ষয়ক্ষতি প্রতিরোধী প্রাকৃতিক তন্তুগুলির মধ্যে একটি। বাদামী কয়ার প্রক্রিয়াজাত করতে মিঠা জল ব্যবহার করা হয় অপরদিকে সাদা কয়ার তৈরিতে ব্যবহৃত হয় মিঠা জল ও সমুদ্রের জল উভয়ই। কিছু দেশে কয়ার ফাইবারের স্থানীয় নাম ‘কোপরা’।
বাদামী এবং সাদা কয়ারের মাঝে সব বৈশিষ্ট্যই প্রায় সমান শুধু পার্থক্য হলো বিশুদ্ধতায়। সাদা কয়ারের বিশুদ্ধতা < ৭%-৯% এবং বাদামী কয়ারের ক্ষেত্রে <৩%।
লেখক
মোঃ হাসিবুল হাসান সুজন
টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়াররিং
বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন এন্ড টেকনোলজি