Friday, November 22, 2024
Magazine
More
    HomeBTMA, BGMEA & BKMEA"আমাদের বিজিএমইএ"

    “আমাদের বিজিএমইএ”

    কৃষি নির্ভর এ দেশে শিল্প খাতকে এগিয়ে নিতে যে খাতটি নেতৃত্ব দিচ্ছে সামনে থেকে তার নাম না বললেও সমস্যা হবার কথা নয়। নিঃসন্দেহে সবাই বলবেন উত্তর হবে পোশাক খাত। দেশের অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখতে যে খাতের কোন জুড়ি নেই। একটি দেশের মোট রপ্তানী আয়ের ৮০ শতাংশ যখন আসে পোশাক খাত থেকে তখন বোঝার বাকি থাকে না দেশে পোশাক খাতের গুরুত্ব কতটুকু। এত গুরুত্বপূর্ণ একটি খাতকে সচল রাখতে যেমন প্রয়োজন পর্যাপ্ত প্রতিষ্ঠানের তেমন প্রয়োজন দক্ষ জনবলের। দুটো প্রয়োজন যখন আমরা মিটিয়ে ফেলবো তখন দরকার হবে তৃতীয় পক্ষের। যে পক্ষ প্রতিষ্ঠান গুলোর মাঝে সংযোগ রক্ষার মাধ্যমে পোশাক শিল্পের কেন্দ্র বিন্দু হিসেবে কাজ করে প্রতিষ্ঠান গুলোকে সর্ব প্রকার সহায়তা প্রদান করে বিশ্ব বাজারে তুলে ধরবে দেশের পোশাক শিল্পের অবস্থান। এই এক্স ফেক্টর তৃতীয় পক্ষ সম্পর্কেই ক্ষুদ্র পরিসরে কিছুটা জানার চেষ্টা করবো আজ।

    ‘বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন’ যার সংক্ষিপ্ত রূপ হচ্ছে ‘বিজিএমইএ’ । মূলত দেশের পোশাক শিল্পের কেন্দ্রবিন্দু এই প্রতিষ্ঠানটি।পোশাক শিল্পে বাংলাদেশ মোটামুটি ভাবে যাত্রা শুরু করে ৬০ এর দশকে। কিন্তু নানা প্রতিবন্ধকতার কারনে খুব তাড়াতাড়ি খাতটি উন্নতি করতে পারেনি, উন্নতি করতে পেরেছে কিছুটা মন্থর গতিতে। যাত্রা শুরুর দশ বছরের মাথায় অর্থাৎ ৭০ এর দশকে দেশ যখন পোশাক রপ্তানী শুরু করে ঠিক তখন ই গার্মেন্টস মালিক দের সংঘবদ্ধ একটি প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় একটি ক্ষুদ্র রপ্তানিভিত্তিক অনুল্লেখযোগ্য রপ্তানীমূখর খাত হিসেবে ১৯৭০ দশকের শেষ পর্যায়ে যাত্রা শুরু করে বিজিএমইএ। ধীরে ধীরে পোশাক শিল্পের প্রতি মানুষের আগ্রহ সেই সাথে দক্ষিন এশিয়ার কয়েকটি দেশ এ পোশাক খাতে রপ্তানী তে ধস নামে এবং কম মজুরীতে অধিক কাজ করার মত শ্রমিক এ দেশে পর্যাপ্ত হওয়ায় পোশাক আমদানি কারক দেশ গুলো তাদের দেশে পোশাক আমদানির জন্য দ্রুতই বাংলাদেশ কে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে গ্রহন করে ফলে দেশের অনুল্লেখযোগ্য রপ্তানীমূখর খাত দ্রুতই উল্লেখযোগ্য রপ্তানীমূখর খাতে পরিনত হতে থাকে।

    সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দেশের তৈরি পোশাক শিল্প ১৯৮৩-এর দিকে এসে একটি প্রতিশ্রুতিশীল রপ্তানি আয়কারী খাত হিসেবে আবির্ভূত হয় এবং আস্তে আস্তে খাতটি বাংলাদেশের অর্থনীতির অগ্রাধিকার খাত হিসেবে স্বীকৃত হয়।সেই সাফল্য কে ধরে রেখে আজ দেশ ৮০ শতাংশর বেশি আয় করে রপ্তানী খাত থেকে।একটি লাভজনক খাত হওয়ার কারণে দিন দিন বেড়েই চলে পোশাক কারখানার সংখ্যা। বর্তমানে দেশে প্রায় ৫ হাজার পোশাক কারখানা রয়েছে। এই ৫ হাজার কারখানা নিয়ে বিজিএমইএ বাংলাদেশের পোশাক প্রস্তুত কৃত কোম্পানির শীর্ষ একটি সংগঠন।আমরা যদি লক্ষ্য করি তাহলেই বুঝতে পারবো বর্তমানে বিজিএমইএ কতটা উন্নত এবং সমৃদ্ধ একটি সংগঠন।কিন্তু শুরুর গল্পটি মোটেও এতটা সুখকর ছিলো না। শুরুর দিকে অর্থাৎ ১৯৭৭ সালে মাত্র ১২ জন সদস্য নিয়ে যাত্রা শুরুর পর থেকে সংগঠন টি বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের উন্নয়ন ও বৃহত্তর স্বার্থ রক্ষার্থে কাজ করে আসছে। হাটি হাটি পা পা করে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে ২০১১ সালে সংগঠন টির সদস্য সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল ৪৯০০ এর কিছু বেশি।কিন্তু নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে সব সময় সকল সদস্য সক্রিয় ভাবে যুক্ত থাকতে পারেনি সংগঠন টির সাথে, তাই পুরোপুরি সক্রিয় সদস্যদের হিসাব করলে ২০১১ সাল পর্যন্ত এ সংখ্যা ছিলো ২৯০০ জন এর কাছাকাছি তে।

    অনেক লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন সেই সাথে প্রয়োজনীয় অধিকার পূরনের লক্ষ্যে প্রতিটি সংগঠন গড়ে ওঠে। বিজিএমইএ ও এটির ব্যাতিক্রম নয়। দেশে তৈরিকৃত পোশাকের রপ্তানি বৃদ্ধি দিকে লক্ষ্য রেখে বিদেশি ক্রেতা, ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য গড়ে ওঠা বিভিন্ন সমিতি এবং গবেষণা মূলক সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা ও সম্প্রসারণে নিবেদিত রয়েছে বিজিএমইএ। আন্তর্জাতিক বাজারে দেশের পোশাক শিল্প কে তুলে ধরা,দেশের পোশাক খাতের দূর্বল দিক গুলো চিহ্নিত করে তা বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা কে কাজে লাগিয়ে সনাধান করা, দেশে পোশাক খাতে বিনিয়োগ যে ঝুকিমুক্ত তা তুলে ধরা সহ নানবিধ বাণিজ্যিক আলোচনার উৎসাহদাতা হিসেবেও কাজ করে থাকে বিজিএমইএ।উদ্দেশ্য অনেক হলেও একটি মূল লক্ষ্য রয়েছে বিজিএমইএ এর।” উৎপাদক, রপ্তানিকারক ও আমদানিকারকদের মধ্যে পারস্পরিক লাভজনক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একটি সুদৃঢ় ব্যবসায়িক পরিবেশ সৃষ্টি এবং এর মাধ্যমে দেশের জন্য ক্রমাগত অধিক পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন” সাধারণত এটিই হল বিজিএমইএ এর মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য । সুতরাং বলাই যায় দেশের তৈরি পোশাক-এর উৎপাদক ও রপ্তানিকারকদের প্রতিনিধিত্বকারী স্বীকৃত বণিক সমিতি হচ্ছে বিজিএমইএ।

    এছাড়াও আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পাদনা করে থাকে বিজিএমইএ। এর সচরাচর কার্যক্রমের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে দেশে ও বিদেশে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন বস্ত্রমেলায় নিজ দেশীয় সদস্যদের অংশগ্রহণের ব্যবস্থা করে দেয়া যাতে করে নিজেদের পন্যের প্রদর্শনী হয় সাথে দেশী বিদেশী নানা প্রতিষ্ঠান এর পন্য থেকে অভিজ্ঞতা নেয়া যায়।পোশাক খাতের নানা বিদেশি ক্রেতা, ব্যবসায়ী সমিতি এবং নানা ধরনের পোশাক সংশ্লিষ্ট চেম্বারের সাথে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নিজস্ব স্বার্থ হাসিল তথা দেশীয় স্বার্থ হাসিল করা এবং তৈরি পোশাক সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য নানা মাধ্যমে সংগ্রহ করে পরবর্তীতে তা সদস্য, ক্রেতা ও অন্যান্য ব্যবহারকারীদের কাছে তা সরবরাহ করার মাধ্যমে পোশাক খাতকে উন্নয়নের রাস্তায় ধাবিত করাই হলো বিজিএমইএ এর কাজ। পোশাক প্রস্ত্ততকারীদেরকে মজুতকৃত তৈরি পোশাক বিক্রির জন্য সহায়তা প্রদান করাও এর কাজের অন্তর্ভুক্ত।

    বর্তমানে সারা বিশ্ব পরিবেশ দূষণের ভয়াবহ ছোবলর শিকার। কারখানা গুলোর কারনে প্রতিনিয়ত বাড়ছে বিষাক্ত গ্যাস সাথে ক্ষয় হচ্ছে ওজনস্তর,গলছে সাইবেরিয় বরফ।যে দূষণে বড় ভূমিকা রয়েছে পোশাক কারখানা গুলোর। কিন্তু তাই বলে কি পোশাক উৎপাদন বন্ধ থাকবে? না, বন্ধ থাকবে না।বন্ধ হবে পরিবেশ দূষণ। এ জন্য প্রয়োজন গ্রীন ফ্যাক্টরি নীতিমালার।যেখানে প্রতিটি পোশাক কারখানা কে এই গ্রীন ফ্যাক্টরির ধারনা দেওয়াও হচ্ছে বিজিএমইএ এর কাজ। এছাড়াও কারখানা গুলোর একটি নিয়মিত দূর্ঘটনা হলো অগ্নিসংযোগ ঘটা।বিজিএমইএ এই কারখানা গুলোতে অগ্নি-দুর্ঘটনা এড়ানোর লক্ষ্যে নিরাপত্তা সম্পর্কিত ব্যবস্থা গ্রহণে তৈরি পোশাক প্রস্ত্ততকারী দের সাহায্য করে থাকে সেই সাথে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করে থাকে। বিজিএমইএ দেশে বস্ত্র খাতে শিশুশ্রম নির্মূল এর লক্ষ্য বাস্তবায়নে তদারকি করে এছাড়াও ১৪ বছরের কম বয়স্ক চাকরি-হারানো শিশুশ্রমিকদের শিক্ষা-সহায়তা প্রদান, স্বাস্থ্যসেবা এবং দক্ষতা সম্পর্কিত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের কল্যাণ কর্মসূচিসমূহের পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করে।

    বর্তমানে বাংলাদেশে পোশাক শিপ্লের উন্নয়নের জন্য সরকারি ভাবে বিশেষায়িত টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় আছে একটি,যা” বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়”। কিন্তু জনবহুল এই দেশে গুরুত্বপূর্ণ একটি খাতকে সফল ভবিষ্যতের পথে চালনার জন্য একটি মাত্র উচ্চতর শিক্ষা মূলক প্রতিষ্ঠান যথেষ্ট নয়। দেশ ও জাতির এই চাহিদা কে মাথায় রেখে বিজিএমইএ টেক্সটাইল ভিত্তিক উচ্চতর শিক্ষার জন্য বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে যা BGMEA UNIVERSITY OF FASHION AND TECHNOLOGY নামে পরিচিত।যেখানে রয়েছে উচ্চতর শিক্ষায় শিক্ষিত শিক্ষকবৃন্দ,রয়েছে অত্যাধুনিক ক্যাম্পাস, রয়েছে মানসম্পন্ন শিক্ষার্থী, এছাড়াও রয়েছে স্বয়ংসম্পূর্ণ গবেষণাগার।ফলসরুপ প্রতিষ্ঠানটি সৌর্যের সাথে অবদান রাখছে দক্ষ ও মানসম্মত প্রকৌশলী ও ফ্যাশন ডিজাইনার গড়ে তোলায়। এছাড়াও বিজিএমইএ এর অধিনস্ত আরো কিছু সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পড়াশোনার প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

    বিজিএমইএ শুধু ব্যবসায়ীক স্বার্থ রক্ষ্যার জন্যই কাজ করছে বরং দক্ষ ও মানসম্মত জনবল তৈরীর লক্ষ্যেও কাজ করে যাচ্ছে।এত উন্নয়নের পরেও কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে।বিজিএমইএ এই সীমাবদ্ধতা গুলো দক্ষতার সাথে কাটিয়ে উঠে আরো বৃহৎ পরিসরে কাজ করে যাবে দেশের জন্য,কাজ করে যাবে পোশাক শিল্পের জন্য, কাজ করে যাবে প্রত্যাশিত রপ্তানী মূখর খাতটিকে উত্তর উত্তর উন্নয়নের দিকে ধাবিত করার জন্য,যা সকলের কাম্য।

    তথ্যসূত্র : https://bn.m.wikipedia.org/wiki/বাংলাদেশ_পোশাক_প্রস্তুতকারক_ও_রপ্তানিকারক_সমিতি

    Writer information:

    মুনতাসির রহমান
    Department Of Textile Engineering
    Batch:201
    BGMEA UNIVERSITY OF FASHION AND TECHNOLOGY

    Previous article
    Next article
    RELATED ARTICLES

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    Related News

    - Advertisment -

    Most Viewed