*প্রাথমিক ধারণাঃ
টেক্সটাইল এর বাংলা অর্থ হচ্ছে কাপড় বা বস্ত্র।সংজ্ঞা আকারে যদি বলা হয় টেক্সটাইল হচ্ছে একটি নমনীয় উপাদান যা প্রাকৃতিক সুতা বা কৃত্রিম সুতার বুণনের মাধ্যমে তৈরি হয়।আর এই টেক্সটাইল ও পোশাক তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় উপকরনের ডিজাইন,ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়নের দায়িত্ব পালন করে থাকেন একজন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার বা বস্ত্রপ্রকৌশলী।
দিন যত এগিয়ে যাচ্ছে টেক্সটাইল নিয়ে গবেষণা যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে তার সাথে সাথে টেক্সটাইল এর মানও একই ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।আগে তাঁতের ব্যবহার হতো হাত দিয়ে সঞ্চালন এর মাধ্যমে কিন্তু কালে কালে তা পরিবর্তিত এখন বিভিন্ন প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে ফাইবার থেকে ফেব্রিক তৈরি এবং ফেব্রিকে পছন্দনীয় রঙ দেয়া সবগুলো ধাপই স্বয়ংক্রিয় এবং সহজভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে।এবার তাহলে মূল আলোচনায় যাওয়া যায়।
*টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং মূলত ৪ টি বেসিক প্রক্রিয়ার বা ধাপের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়ে থাকে।
১.ইয়ার্ন ম্যানুফ্যাকচারিং বা স্পিনিংঃ ইয়ার্ন (Yarn) এর বাংলা অর্থ হচ্ছে সুতা।একটি পোশাক তৈরির ক্ষেত্রে মূল উপাদানই হচ্ছে সূতা।আর এই ধাপেই একটি ভালো মানের ফ্যাশনেবল পোশাক তৈরির জন্য ভালো এবং মানসম্পন্ন ফাইবার বা আশঁ বাছাই করে তা দিয়ে সুতা তৈরি করা হয়
২.ফেব্রিক ম্যানুফ্যাকচারিং বা নিটিংঃ তৈরিকৃত সুতা দিয়ে মানসম্পন্ন কাপড় তৈরির সকল প্রক্রিয়া গুলো সম্পন্ন হয়ে থাকে এই ধাপে।অনেকগুলো জটিল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই ধাপ সম্পন্ন হয়।এই তৈরিকৃত কাপড়কে গ্রে ফেব্রিক(Grey Fabric) ও বলা হয়।
৩.ওয়েট প্রসেসিং বা ডায়িংঃ তৈরিকৃত কাপড়ে পছন্দনীয় রঙ দেয়া হয় এই ধাপে তবে এক্ষেত্রে রঙ এর মিশেল এর দিকে লক্ষ্য রাখতে হয় যেনো তা টেকসই এবং গুনসম্পন্ন হয়।এই ধাপে রাসায়নিক প্রযুক্তির ব্যবহার হয়ে থাকে বলে এই ধাপকে টেক্সটাইল কেমিস্ট্রি ও বলা হয়ে থাকে।
৪.গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারিংঃ উপরের ৩ টি ধাপ সম্পন্ন করে এই ধাপে পৌছানোর পর Sampling,Fabric Spreading,Cutting,Sewing,Washing(যদি প্রয়োজন হয়),Finishing করা হয়ে থাকে।এরপরই কাপড় পরিধানযোগ্য হয়।অর্থাৎ কাপড় তৈরির পর থেকে ফিনিশিং প্রসেস পর্যন্ত এই ধাপগুলো সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে হয় একজন গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার এর।
এখন প্রয়োজন পোশাক এর ব্র্যান্ডিং করা যেনো তৈরি পোশাকগুলো পুরো বিশ্বজুড়ে রাজত্ব করতে করতে পারে। তার জন্য প্রয়োজন নতুন নতুন ফ্যাশনেবল ডিজাইন এবং রপ্তানির জন্য সঠিক ব্যবস্থাপনা। আর তাই টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এর সাথে আরও দুইটি শাখা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
১.ফ্যাশন ডিজাইনঃ নতুন নতুন ফ্যাশনেবল,ব্যবহার উপযোগী ডিজাইন এর মাধ্যমে পোশাককে বিশ্ববাজারে আকর্ষণীয় করে তোলাই এই শাখার কাজ।
২.টেক্সটাইল ম্যানেজমেন্টঃ জাত পর্যবেক্ষন,গুনমান নিয়ন্ত্রন,সহজ বিপণন প্রক্রিয়া,উৎপাদন প্রক্রিয়া তত্বাবধান ইত্যাদি কাজ এই শাখার অন্তর্ভুক্ত।তৈরিকৃত পন্যের মান সঠিক ভাবে নিয়ন্ত্রণ করে,সম্পুর্ন নিরাপদ ভাবে ক্রেতার হাতে পৌছে দেয়া পর্যন্ত মধ্যবর্তী ধাপ গুলো এবং বিশ্বের রপ্তানি বাজার নিয়ন্ত্রণ করা এই শাখার অন্তর্ভুক্ত।
একজন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারের অবশ্যই বেসিক ৪ টি ধাপের সাথে এই ২টি ধাপ অর্থাৎ ৬ টি ধাপের সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে।
অনেকেই ভেবে থাকেন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এ কাপড় বানানো শেখানো হয়,আসলে তা একদমই ভুল ধারণা। একজন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে গড়ে তোলার জন্য তাকে টেক্সটাইল এর মৌলিক বিষয় সম্পর্কে শিক্ষা প্রদান করা হয়।দিন যত এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের জীবনের প্রতিটি কার্যক্রম ও প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে যাচ্ছে, যার দরুন আমরা সুন্দরভাবে জীবনযাপন করতে পারছি।তেমনি প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে বিশ্বের প্রতিটি টেক্সটাইল সেক্টর গুলোর কাজের ধারা মসৃণ করতে এবং উৎপাদন বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়াররা।
বর্তমানে শুধু গার্মেন্টস সেক্টর বা Readymade Garments(RMG) সেক্টরই নয় বিভিন্ন মেডিকেলের উপকরণ,অটোমোবাইল,মহাকাশ,জিওটেক্সটাইল সহ বিভিন্ন সেক্টরেও টেক্সটাইল এর ব্যবহার বাড়ছে।শুধু তাই নয় মাইক্রো চিপ,ভবন নির্মান,অস্ত্রের কাঠামো,বুলেট রোধী পোশাক এই সকল বস্তু তৈরিতে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ফাইবার বা তন্তু ব্যবহার করা হচ্ছে।দিন যত যাবে,টেক্সটাইল ব্যবহারের সেক্টরও বাড়তে থাকবে।
তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া
মোহাম্মদ আরশিল আজীম
Batch: 201
Department of Textile Engineering
BGMEA University of Fashion & Technology(BUFT)