বাংলাদেশে টেক্সটাইল শিল্পের দ্রুত বিকাশ ঘটে চলছে। বিশ্বমানের শিল্পের কাতারে বাংলাদেশ টেক্সটাইল শিল্প ইতোমধ্যেই নিজেদের অবস্থান গড়তে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশের বস্ত্র ও পোশাক আমাদের অর্থনৈতিক চাকাকে সচল রেখেছে বিগত বছর গুলো থেকে।
এই টেক্সটাইল শিল্পের প্রধান কাঁচামাল ফাইবার বা আঁশ। বস্ত্রশিল্পে ফাইবার বলতে ফেব্রিক তৈরিতে যে ইয়ার্ন বা তন্তু ব্যবহার করা হয় , তার ক্ষুদ্র অংশকে বুঝায় ।কাপড় তৈরির জন্য সুতা প্রয়োজন। সুতা তৈরির উপাদান হিসেবে যেসব তুন্তু বা আঁশ ব্যবহৃত হয় তাকে টেক্সটাইল ফাইবার বলে। টেক্সটাইল ফাইবারের কতগুলো বিশেষ গুণাবলি থাকা প্রয়োজন যেমন-পাকানোর জন্য ন্যূনতম দৈর্ঘ্য, শক্তি, কমনীয়তা,নমনীয়তা, সমতা,আদ্রতা ধারণ ক্ষমতা ইত্যাদি অন্যতম।তবে একই ফাইবারে সব গুণাবলী থাকে না। ইদানিং এ সব উন্নততর পদ্ধতিতে ফাইবারকে স্পিনিং ছাড়াই পাশাপাশি সাজিয়ে কিংবা রাসায়নিক বা তাপীয় পরিবর্তনের মাধ্যমে টেক্সটাইল সামগ্রী তৈরী করা হচ্ছে। সে কারণেই একই ফাইবার সকল গুণাবলীও সর্বক্ষেত্রে অপরিহার্য নয়।
টেক্সটাইল ফাইবার সাধারণত ২ প্রকার। প্রাকৃতিক ফাইবার ও কৃত্রিম ফাইবার।
প্রাকৃতিক ফাইবার:
প্রকৃতিতে জন্মে এমন সব গাছ, ফুল প্রাণী খনি ইত্যাদি থেকে আহরণ করা হয় বলে এসব কে প্রাকৃতিক ফাইবার বলা হয়। প্রাকৃতিক ফাইবার এর মধ্যেও শ্রেণীভেদ আছে। যেমন উদ্ভিজ্জ, প্রাণীজ ও খনিজ।কয়েকটি প্রাকৃতিক প্রোটিন ফাইবার। যেমন-মোহেয়ার,কাশ্মীরি,আলপাকা,ভিকুনা, লামা,ইত্যাদি।
কৃত্রিম ফাইবার:
বিভিন্ন প্রকার রাসায়নিক পদার্থের সংমিশ্রনে বিক্রিয়া ঘটিয়ে বা বিভিন্ন প্রকার রাসায়নিক পদার্থের পলিমারাইজেশন ঘটিয়ে যে কৃত্রিম আঁশ তথা ফিলামেন্ট তৈরি করা হয় তাকে রাসায়নিক ফাইবার বলে ।কয়েকটি কৃত্রিম ফাইবারের নাম নাইলন, পলিষ্টার, রেয়ন, ভিসকস , আক্রাইলিক ফাইবার ইত্যাদি। কৃত্রিম ফাইবার পরীক্ষামূলক ভাবে প্রথম আবিস্কৃত হয় ১৮৫৭ সালে ।
কটন ফাইবার:
ফাইবারের রাজা বলা হয় কটন ফাইবারকে। কটন শব্দের উৎপত্তি হয় আরবি ভাষা কুতুম শব্দ থেকে।কটন একটি ইউনিসেলুলার ফাইবার।কটনের মুল উপাদান সেলুলোজ।কটনে শতকরা সেলুলোজ থাকে শতকরা ৯৪ থেকে ৯৭ ভাগ।কটন ফাইবারের দৈর্ঘ্য সাধারণত ১২. ৭ থেকে ৬০ মিলিমিটার পর্যন্ত। কটনকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়। যেমনঃ সি আইল্যান্ড , ইজিপ্সিয়ান, সাউথ আমেরিকান, আমেরিকান আপল্যান্ড, ইন্ডিয়ান, চায়না।বর্তমান বিশ্বে কটন ফাইবার থেকে তৈরি বস্ত্র সামগ্রীর চাহিদা প্রায় ৬৫ শতাংশ। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠকটন ইজিপ্সিয়ান কটন।
সিল্ক ফাইবার:
সিল্ক ফাইবারকে ফাইবারের রাণী বলা ।সিল্ক ফাইবার বা রেশম তন্তু বা সুতা, রেশম মথ নামে এক ধরনের মথের লার্ভার লালাগ্রন্থি বা রেশ গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত রসের তৈরি। এরা আ্রথোপোডা (Arthropoda) পর্বের অন্তর্ভুক্ত ইনসেক্টা (Insecta) শ্রেণীর লেপিডটেরা (Lepidoptera) বর্গের পতঙ্গ। রেশম পোকার ইংরেজি নাম সিল্ক ওর্য়াম (Silk Worm)। ওর্য়াম (Worm) শব্দের অর্থ কীট। Silk Worm এর অর্থ দাঁড়ায় রেশম কীট। কৃমি জাতীয় প্রাণীদের কীট বলা হয়। আসলে এরা দেখতে কৃমির মত নয়। তবে এরা পূর্ণবয়স্ক হলে প্রজাপতির মত দেখায়। তাই কীট না বলে পোকা বলাই বরং ভাল। বিভিন্ন প্রজাতির রেশম মথ বিভিন্ন মানের রেশম সুতা তৈরি করে। আমাদের দেশে যে রেশম পোকা পাওয়া যায় তার বৈজ্ঞানিক নাম বোমবিক্র মোরি (Bombyx mori)। চীন দেশে সর্বপ্রথম রেশম সুতা আবিষ্কৃত হয়। প্রাচীনকালে বাংলাদেশে উৎকৃষ্টতার বিচারে রেশম কাপড়কে ৩টি শ্রেণিতে ভাগ করা হতো। এই ভাগ তিনটি হলো−গরদ, তসর, মটকা।
ফ্লাক্স ফাইবার:
লিনেন বস্ত্র উৎপাদন হয় ফ্লাক্স ফাইবার থেকে।আর ফ্লাক্স ফাইবারের উৎপওি হচ্ছে তিসি বা মসিনা গাছ(Flax) থেকে।এর উজ্জ্বলতা রেশমের মতো নয়,তবে তুলার তুলনায় উজ্জ্বল হয়।কটন ফাইবার অপেক্ষা দুই থেকে তিন গুন বেশি শক্তিশালী, ভেজালে এর শক্তি আরো বৃদ্ধি পায়।পানির শোষন ক্ষমতাও তুলার চেয়ে ভালো।তাই সহজে বাজ পড়েনা।
Flax ফাইবার দিয়ে সূক্ষ্ম সুতা বা মসৃন লিনেন বস্ত্র তৈরি করা যায়,যা বেশ চকচকে,মজভুত ঠান্ডা হয়।এরুপ কাপড় পরিধানে আরাম বোধ হয়।এই তন্তু সমতল ভাবে অবস্থান করে এবং সুন্দরভাবে ঝুলে থাকে। তাই টেবিল কভার,বিছানার চাদর,রুমাল,পর্দা,পরিধেয় ও গৃহস্থালী বস্ত্র হিসেবে অনেক জনপ্রিয়। পানি শোষন ক্ষমতা অনেক বেশি থাকায় লিনেন বস্ত্র গরমের দিনের পোশাকের জন্য বেশ আরামদায়ক।
উল ফাইবার:
পশম একটি প্রাণিজ ফাইবার।বিভিন্ন প্রানীর মধ্যে ভেড়ার লোমই পশমি বস্ত্রে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়।উল ফাইবার পানির শোষণক্ষম সবচেয়ে ভালো।পশম তন্তু বেশ নমনীয় এবং স্থিতিস্থাপক। এজন্য সহজে ভাজ পড়ে না।পশম তাপের সুপরিবাহী নয়।তাই সোয়েটার, মোজা,মাফলার, কোট,জ্যাকেট ইত্যাদি পশমি বস্ত্র শীতবস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়।এছাড়াও পশম দিয়ে নানা ধরনের কম্বল,শাল,কার্পেট তৈরি করা হয়। ভিজলে পশমি বস্ত্রের আকৃতি ও শক্তি কিছুটা কম।তাই ধোয়া বা ইস্ত্রি করার সময় কেয়ারফুল্লি ভাবে কাজ করতে হবে।
Writer information:
Mimtul Jahan
Batch- 35
1st year ( clothing and textile)
College of home economics