সৃষ্টিকর্তার নিখুঁত হাতে সাজানো এই ধরনীতে সৃষ্টির কূলকিনারা করা বড়ই কঠিন।তাই বলে কি হাত গুটিয়ে আলস্য কে আহ্বান করবে মানব সভ্যতা? না করেনি,বরং একদল উদ্ভাবনী মানুষ তাদের কর্মের সর্বোচ্চ পরিসীমা অতিক্রমের মাধ্যমে কল্যান করে আসছে মানব সভ্যতার উন্নয়নে নতুন মাত্রা যোগ করার দুর্নিবার প্রতিযোগিতায়। মানুষের সাধারণ ধারনার বাইরে গিয়ে তারা স্থাপন করছে অনন্য দৃষ্টান্ত। যে দৃষ্টান্তে আজ মানব জাতির তৃতীয় চক্ষু উদিত হবার উপক্রম যেনো ঘনীভূত হচ্ছে আরো দৃঢভাবে।আলোচ্য বিষয়ে দৃষ্টিপাত করলে মনে হতে পারে, কুকুরের পশম থেকেও কি ফাইবার উৎপন্ন করা সম্ভব! অসম্ভব এ চিন্তাধারাকে সম্ভব নামক বাস্তব চিত্রে রূপ দিয়ে এর ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা জানার আগ্রহ কে ত্বরান্বিত করার মাধ্যমেই সাজানোর চেষ্টা করবো আজকের আলোচনাতে।
শুরুতেই জানা দরকার কুকুরের লোম সংগ্রহের কিছু ইতিহাস সম্পর্কে।সাধারণত চিনগোরা জাতের কুকুর থেকে লোম সংগ্রহ করা হয়ে থাকে।এছাড়াও সাময়েড, সাইবেরিয়ান হুস্কি, ম্যালামুটে, গোল্ডেন রিট্রিভার, নিউফাউন্ডল্যান্ড, এবং শেপডগের মতো জাতগুলি থেকেও উন্নত ও ভালো মানের পশম পাওয়া যায়।তবে চিনগোরা কুকুরের পশম অন্যান্য উলের তুলনায় কমপক্ষে ৮০% বেশি উষ্ণতা প্রদান করে যা কিনা অবিশ্বাস্য। সেই সাথে চিনগোরা কুকুরের লোম অস্থিতিস্থাপক হয়ে থাকে।প্রধানত উত্তর আমেরিকায় এ ধরনের কুকুর পাওয়া যায়।১৯ শতকের শুরুর দিকে এ ধরনের কুকুরের উল কিয়ে কাজ করা শুরু করেন তৎকালীন টেক্সটাইল গবেষকগণ।তাদেরকে গবেষণার ফল পেতে খুব বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি,অল্পদিনেই তারা বুঝতে পারেন চিনগোরা কুকুরের লোম থেকে উন্নত সেই সাথে উষ্ণ প্রকৃতির ফাইবার পাওয়া সম্ভব ৷এর পর পরেই মূলত বাণিজ্যিক ভাবে কাজ করা হয় চিনগোরা কুকুরের পশম নিয়ে।
এবার জানবো পশম সংগ্রহ করার ব্যাপারে। যেসব কুকুর এর দেহ থেকে পশম সংগ্রহ করা হবে সেসব কুকুরকে প্রথমেই আলাদা করে একে একে কুকুরগুলো থেকে পশম সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। শুরুতেই কুকুরগুলোর গায়ের পশমগুলো ব্রাশ করে নিতে হয় যাতে পরবর্তীতে পশম সংগ্রহের সময় অসুবিধা না হয়। ব্রাশ করা হয়ে গেলে একে একে নির্ধারিত কুকুর গুলোর গা থেকে মেশিনের মাধ্যমে বা কাটিং যন্ত্রের মাধ্যমে সমানভাবে পশম কেটে নিতে হবে।কর্তনকৃত পশমগুলোকে যেকোন ব্যাগ বা সুবিধা মত স্থানে সংরক্ষণ করতে হবে।পশম সংগ্রহের সময় লক্ষ্য রাখতে হবে, যে কুকুরের পশম কাটা হচ্ছে সে পশমগুলো স্বাভাবিক হয়ে থাকে তাহলে কমপক্ষে ১১৩ গ্রাম পশম সংগ্রহ করা যেতে পারে। আবার যদি পশমগুলো একদম পাতলা বা চিকন হয়ে থাকে তাহলে কমপক্ষে ৩৪০ গ্রাম পশম সংগ্রহ করতে হবে প্রত্যেক কুকুর থেকে। এখানেই মূলত প্রাথমিক কাজ শেষ হয়ে থাকে। এরপর শুরু হয় সংগ্রহকৃত পশমগুলোকে পরিষ্কার করে পরবর্তী ধাপের জন্য প্রস্তুত করার কাজ। পরিষ্কার পর্বের শুরুতেই পশম এর দিকে লক্ষ্য রেখে বড় পাত্রে গরম পানি নিয়ে তাতে প্রয়োজনমতো ডিটার্জেন্ট নিয়ে পশম গুলোকে উক্ত পাত্রেই মিনিট দশেক এর মতো রাখতে হবে এবং নির্দিষ্ট সময় পরপর পশমগুলো ভালোভাবে নাড়াচাড়া করতে হবে।এ পদ্ধতিটি ফল্টিং নামেও পরিচিত। এই ধাপটি আরো একবার সংঘটের পরে পশম গুলোকে রোদে শুকানোর জন্য পাঠাতে হবে।এসময় যতটা সম্ভব ছড়িয়ে শুকানোর চেষ্টা করতে হবে পশমগুলোকে।সাধারণত ৪ ঘন্টা সময় নিয়ে এ ধাপটি অতিক্রম করা হয়।
উপরের ধাপ গুল অতিক্রমের পরপরেই পশম গুলো ফাইবার হিসেবে প্রস্তুত এর জন্য উপযোগী হয়ে থাকে। কুকুরের পশমগুলো থেকে খুব কমই একক ভাবে পোশাক প্রস্তুত করা হয়ে থাকে। বেশিরভাগ সময়ই বিভিন্ন ফাইবার এর সাথে কুকুরের পশম ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যেমন, ক্যামেল উলের সাথে কুকুরের পশম মিশিয়ে শীতপ্রধান অঞ্চলে অতি উষ্ণ জ্যাকেট,চাদর,কোর্ট প্রস্তত করা হয়ে থাকে।আবার ইউরোপ আমেরিকা তে শীত কালে ছেলের কোর্ট,লেডি জ্যাকেট,নাইট ড্রেস সহ নানা ভাবে ব্যবহার করা হয় এ কুকুরের উল।এছাড়াও কুকুরের পশম থেকে অতি মূল্যবান সেই সাথে অতি দূর্লভ “স্যালিস কম্বল” প্রস্তুত করা হয়ে থাকে। আবার কটন ও সিল্ক ফাইবারের সাথেও কুকুরের পশম মিশ্রিত করে কিছু কিছু দেশে উন্নত মানের পোশাক প্রস্তুত করা হয়ে থাকে।
মানুষের সদিচ্ছাই পারে মানব সভ্যতাকে নতুন দিগন্ত উন্মোচনের দিকে ধাবিত করতে।যার দরুন আমরা পেয়েছি ডগ উলের মতো বিরল কিছু ফাইবার। বিশ্বব্যাপী ডগ উলের চাহিদা থাকলেও ধর্মীয় দিক সহ নানা কারনে অনেক দেশেই এ ধরনের ফাইবার থেকে পোশাক প্রস্তুত করা হয় না। কিন্তু গবেষকদের এসব উদ্ভাবন ফাইবারের জগতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। পরবর্তীতে আরো উত্তর উত্তর সাফল্য নিয়ে উন্মোচিত হবে নতুন কোন ফাইবারের দিগন্ত এটিই সকলের প্রত্যাশা।
[অনুমতি ব্যাতিত লেখাটি কপি করা গ্রহনযোগ্য নয়]
তথ্যসূত্র : https://www.akc.org/expert-advice/lifestyle/make-yarn-from-dog-hair/
লেখক:
মুনতাসির রহমান
Department Of Textile Engineering
Batch:201
BGMEA UNIVERSITY OF FASHION AND TECHNOLOGY