বর্তমান বিশ্ব যেভাবে প্রযুক্তির পিছনে ছুটছে, সে প্রযুক্তির সাথে পাল্লা দিয়ে টেক্সটাইল শিল্প বেশ এগিয়ে চলছে। আবিষ্কার হচ্ছে একের পর এক আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর টেক্সটাইল সামগ্রী। টেক্সটাইল প্রযুক্তির মধ্যে অভিনব আবিষ্কার “সৌর ফেব্রিক”। এটি সূর্যের রশ্মি থেকে ফটোভোল্টিক পেনেলের মাধ্যমে ফেব্রিক এসে পরে এবং অটো ডিভাইস চার্জ হয়।
সুবিধা-
*অল্প সময়ের মধ্যে দ্রুত চার্জ হয়
*এ পোশাকটি ওয়াটারপ্রুফ
*নমনীয়,আরামদায়ক ও আকর্ষণীয় দেখতে
গবেষণা ও আবিষ্কার
♦ ডেনমার্ক –
ডেনমার্কের আলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের চারজন শিক্ষার্থী আধুনিক সোলার ফেব্রিক আবিষ্কার করেছেন, যা দিয়ে মোবাইল ফোনসহ বৈদ্যুতিক ডিভাইস, ম্যাট বা টেবিলের সংযোগস্থল করে চার্জ করা যায়।চলার গতি পর্যবেক্ষণ করার মাধ্যমেও এই প্রযুক্তি ব্যবহারে তারা সাফল্য পেয়েছেন। গাড়িতে চলার সময় ব্যবহারকারীরা কেবল তাদের ডিভাইসগুলি চার্জ দেওয়ার জন্য সিটে রেখে দিলে পেনেলের মাধ্যমে চার্জ হয়। ২০১১ সালে এক প্রতিযোগিতায় তারা ৫০০ ইউরো অর্থ পুরস্কার পেয়েছিলেন।
♦ চীন-
একই সাথে পাল্লা দিয়ে, চীনের চংকিং ও বেইজিংয়ের ন্যাশনাল সেন্টার ফর সাইন্স এন্ড টেকনোলজির বিজ্ঞানীদের সহায়তায় একদল গবেষক একটি ফেব্রিক আবিষ্কার করেছিলেন.যা সূর্যের আলো ও গতির প্রক্রিয়াতে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে স্মার্টওয়াচ বা সেলফোন চার্জ করতে পারে।সূর্যের আলোতে পোশাকে শারীরিক ঘর্ষণের ফলে ফেব্রিকটিতে বোনা সৌরকোষের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে, যার পুরুত্ব. ৩২ মিমি।গবেষণাপত্রে বিজ্ঞানীরা তন্তটিকে”লাইট ওয়েট এবং স্বল্প ব্যয়বহুল” বলে উল্লেখ করেছেন।এটি অন্যান্য ফেব্রিকের মত শিল্পবুনন মেশিনে তৈরি করা যায়।এটি জলবিভাজন ও পরিবেশবান্ধব।
♦ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-
জর্জিয়ার ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির বিজ্ঞানীদের মধ্যে একটি দল কমপক্ষে দুই বছর ধরে (একটি অতি-পাতলা পর্দা, যা অতি হালকা)-নমনীয় ফেব্রিক আবিষ্কারের পিছনে কাজ করে যাচ্ছে। এটি মূলত সৌর কোষ এবং “ট্রাইবোলেক্ট্রিক ন্যানোজেনেটর” দিয়ে তৈরি বিশেষ তন্তুগুলির সাথে একসাথে উলের বোনা কাপড়-যা ঘূর্ণন বা কম্পনের মতো সামান্য আন্দোলনের ফলে উৎপাদিত ঘর্ষণ থেকে অল্প পরিমাণ বৈদ্যুতিক শক্তি উৎপাদন করে যা এক মিনিটের মধ্যে একটি বাণিজ্যিক ক্যাপাসিটারকে দুটি ভোল্টে চার্জ করতে সক্ষম হয়েছিল। ফ্যাব্রিকটি কিছুটা ঘন এবং রুক্ষ – টি-শার্টের চেয়ে বেশি পাতলা বা কোবিজা কম্বলের মতো। তাঁবু বা ব্যাকপ্যাকগুলির মতো পণ্যগুলিতে সংহত করার জন্য এটি হালকা ও বহুমুখী যথেষ্ট, যার অর্থ কোন ভারী ডিভাইসে স্ট্র্যাপ না করে আপনার শারীরিক ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে রিচার্জ করতে পারবেন, বৈদ্যুতিক কোন সংযোগের ছাড়াই কাপড়ে সৌর প্রযুক্তির মাধ্যমে মোবাইল ফোন রিচার্জ করা যাবে। বৈদ্যুতিক কোন সংযোগের মাধ্যমে রিচার্জ করার প্রয়োজন নেই।
এক সময় সৌর পোশাক নিয়ে কল্পকাহিনী থাকলেও আজ প্রযুক্তি উন্নয়নের ধারায় তা সামনে চলে এসেছে।বিজ্ঞানীদের অবিশ্বাস্য গবেষণায় আবিষ্কারটি বাস্তবে রুপান্তরিত হয়েছে।
লেখক:
তানভীর শিকদার সিয়াম
ডিপার্টমেন্ট অফ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং,
জাতীয় বস্ত্র প্রকৌশল ও গবেষণা ইনস্টিটিউট।