কয়েকবছর ধরেই অর্থনীতিবিদ কিংবা বিজনেস রিসার্চের প্রতিবেদন বলছে আগামী এক যুগের ভেতরেই মাথা চারা দিয়ে উঠবে “চতুর্থ শিল্পবিপ্লব”। অনেকের ভাষ্যমতে আরো দেরিতেও শুরু হতে পারত। তবে এবার মনে হচ্ছে করোনার ধাক্কায় সেটা খুব অল্প দিনেই মাথা-চারা দিচ্ছে। চিন কিছুদিন আগেও আন-অফিসিয়াল ট্রায়ালের মাধ্যমে চেস্টা করছিলো যে -অটো মেশিনের সাহায্যে প্রডাক্টের গুনগত মান কতটা গ্রহনযোগ্যতা পায় সেটা জানার জন্য। এরপর সেটার ফলাফল আর অফিসিয়ালি জানানো হয়নি। বাংলাদেশ থেকেও চিন এখন ভিয়েতনামের দিকে কারখানা স্থাপনে বেশি ঝুকছে। হয়ত বিদেশী মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান কিছুটা হলেও হারাতে চলেছে বাংলাদেশ।

এবার চীন নয়, স্বয়ং বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠানগুণোই হারাতে বসেছে তাদের ইন্ড্রাট্রিগুলো। যেখানে তৈরি পোষাক শিল্প থেকে প্রতিবছরই মোট জিডিপির ৮৫± শতাংশ আসত, সেখানে এরকম হতাশার বানী শোনা সত্যিই হতাশার মরিচীকা ছাড়া কিছুই নয়। 
বিজিএমইএ এর সভাপতি, রুবানা হক বলছেন- দেশীয় মার্কেটগুলো তাদের মোট অর্ডারের ৫৫% হারিয়ে ফেলেছে। এমাতাবস্থায় অলরেডি ৩ মাস পার হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। একদিকে পন্যের অর্ডার কম, অপরদিকে পন্য বাজারজাত সুবিধা নেই। তাই এক ধরনের ধোঁয়াশার মধ্যে দিন অতিবাহিত করছেন গার্মেন্টস ইন্ড্রাস্টির মালিকরা। সুতরাং মালিকদের হয়ত শ্রমিক ছাটাই ছাড়া হাতে বিকল্প কোনো রাস্তা খোলা নেই।

এদিকে জরিপ বলছে,” শ্রমিক ছাটাই” শব্দটা ছোট হলেও এর পরিমান কিন্তু মুটেও ছোট নয়,প্রায় ১ হাজার শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধের কারনে প্রায় ১০ লাখেরও অধিক মানুষ তাদের কর্ম হারাবে। হয়ত এতে করে ভঙ্গুর ও অচল হয়ে পড়বে আমাদের অর্থনীতির চাকা। সাধারন মানুষের হা হুতাশ করা ছাড়া কোনো রাস্তাই খোলা নেই।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন,এই পরিস্থিতির স্বীকার কেবল বাংলাদেশই হচ্ছে বিষয়টা এমন নয়, বিশ্ব থেকে প্রায় ১৬০ কোটি শ্রমিক ( সূত্র -প্রথম আলো) বেকারত্বের মুখ দেখবে। পৃথিবীতে আরো একবার অস্বস্থির প্রবল থাবা দেখতে পাবে।

উত্তোরণের পথঃ সত্যিই বলতে পৃথিবী আগের মতো স্বাভাবিক না হলে কোনো ধারনাই কাজে আসবে না। ভাঙ্গা-গড়ার এ রীতিতে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের ছোয়া লাগলে মানুষকে বিকল্প কোনো কর্ম সংস্থানের ব্যাবস্থা করতে হবে। কারন তখন শুধু অটোমেশিনেরই যুগ চলবে। উপরন্তু, যারা স্পেসিফিক বিষয়ের উপর দক্ষতা অর্জন করে চাকরির আশা করবে,তাদেরকেও একটু বেগ পেতে হবে। শুধুমাত্র নির্দিস্ট বিষয়ের উপর নয়,বরং পাশাপাশি আরো এক্সটা কিছু দক্ষতাও অর্জন করতে হবে…..

হয়ত অদূর ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার,কিংবা একরাশ হতাশার। ভবিষ্যৎ কারা নেতৃত্ব দেবে কিংবা ভবিষ্যতের নেতৃত্বের মূল হাতিয়ার কি সেটা হয়ত সৃষ্টিকর্তাই ভালো বলতে পারবেন, তবে আপাত দৃষ্টিতে ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আশার বানী গোণা ছাড়া বিকল্প কোনো পথ খোলা আছে কিনা সেটা জানা নেই।

খালেদুর রহমান সিয়াম,
শিক্ষার্থী ,টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং,
জাতীয় বস্ত্র প্রকৌশল ও গবেষনা ইনন্সিটিউট (নিটার)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here