🍁 আমরা সবসময়ই ফাইবার নিয়ে আলোচনা করে থাকি। কিন্তুু যদি কাউকে জিজ্ঞেস করা হয় প্রথম আবিষ্কার করা মেন মেইড ফাইবারের নাম কি? অথবা ফাইবারের রানী কে? আমরা কি সবাই বলতে পারবো???
প্রথম আবিষ্কার করা মেন মেইড ফাইবার হলো Nylon fiber এবং প্রথম আবিষ্কার করা ন্যাচারাল ফাইবার wool ফাইবার। ফাইবারের রানী কে তাহলে?? ফাইবারের রানী silk ফাইবার কিন্তুু ফাইবারের কিং cotton ফাইবার।
তাহলে সকল ফাইবার কি টেক্সটাইল ফাইবার? না,সকল টেক্সটাইল ফাইবারই ফাইবার কিন্তুু সকল ফাইবার টেক্সটাইল ফাইবার নয়।যেমন -মানুষের চুল প্রোটিন ফাইবার এবং কয়ার ফাইবার হলো টেক্সটাইল ফাইবার।।
◾ টেক্সটাইল ফাইবার হতে কিছু যোগ্যতার প্রয়োজন হয়। যেমন –
১.Fiber Fineness
২.Maturity
৩.Fiber Length
৪.Strength
৫.Fiber Clearness
৬.Color
৭.Elongation
🍁 কয়ার ফাইবার কি:
কয়ার এক ধরনের বাস্ট ফাইবার। এটির একটি সাধারণ নাম /scientific নাম Cocos nucifera and aracaceae (palm).নারকেল সেল এর বাহিরের অংশ দিয়ে যে ফাইবার তৈরি করা হয় তাকে বলা হয় কয়ার ফাইবার। যদিও এটি বীজ থেকে উৎপত্তি হয় তবুও ইহা নারিকেল ছাল দিয়ে হয় বলে ইহাকে বাস্ট ফাইবার বলে।আঁশকে ভিজিয়ে ইহার মধ্যে ব্যাকটেরিয়াল ক্রিয়া সৃষ্টি করে আঁশ নরম করে পাকানোর উপযোগী করা হয়।
ব্রাউন এবং সাদা উভয় ফাইবারের ক্ষেত্রেই length প্রয়োজন 4-12 in(10-30 cm). যাদের মধ্যে কমপক্ষে 8 in (20 cm) length সেগুলোকে বলা হয় কূর্চ ফাইবার।সর্ট ফাইবার যেগুলোর গঠনবিন্যাস সুক্ষ্ম সেগুলোকে বলা হয় ম্যাটস ফাইবার।
◾ কয়ার ফাইবারের ইতিহাস:
কয়ার শব্দটি এসেছে kayar থেকে যার দ্রাবিড়িয় অর্থ দড়ি। এই শব্দটি ভারতের মালায়ালাম এবং তামিল ভাষাভাষী লোকজন ব্যবহার করেন। প্রাচীন কাল থেকেই দরি ও কর্ডেজ নারকেল ফাইবার থেকে তৈরি হতো। বহু শতাব্দী আগে মালায়া,জাভা ও চীন এবং আরব উপসাগরে সমুদ্রে যাত্রা করে ভারতীয় নৌচালকড়া তাদের জাহাজের দরির জন্য কয়ার ব্যবহার করতেন। যুক্তরাজ্যের একটি কয়ার শিল্প রেকর্ড করা হয়েছিল ১৯ শতকের দ্বিতীয়ার্ধের আগে। ১৮৪০ সালে লোগান এবং মিঃ থমাস ট্রেলোয়ারের সাহায্যে captain ওয়াইডলি ইংল্যান্ডের লুওগেট হিলে ট্রেলোয়ার & সন্স নামে কার্পেট ফার্ম করেছিলেন যা মেঝের বিভিন্ন কার্পেটের কাপড় তৈরির জন্য।
◾ কয়ার ফাইবারের প্রকারভেদ:
সাধারণত ২ ধরনের কয়ার ফাইবার আছে-ব্রাউন ফাইবার এবং হোয়াইট ফাইবার
১. ব্রাউন ফাইবারঃ পরিপক্ক নারিকেল থেকে তৈরি। ব্রাউন ফাইবার থেকে তৈরি হয় ফ্লোর মেট, ডোর মেটস, ব্রাঁশ, জাজিম/তোশক এবং উদ্যান পালনে ব্যবহার হয় ব্রাউন ফাইবার।
২. হোয়াইট ফাইবারঃ অপরিনত নারকেল থেকে তৈরি। সুক্ষ্ম ব্রাঁশ, দড়ি, ধনুকের জ্যা, মাছ ধরার জাল ইত্যাদি তৈরি হয় হোয়াইট ফাইবার দিয়ে।
🖋 কয়ার ফাইবার পচানো:
পুরোপুরি পাকা নারকেল খোসা পচানোর কাজে লাগে পরিস্কার পানি। খোসা প্রোথিত হয় খনিত গর্তে,চুবানো হয় জমাটবদ্ধ জলাশয় পানিতে এবং সাধারণত ৬ মাস চুবানো থাকে। অন্যদিকে কাচা নারকেল খোসা পচানোর কাজে লবনাক্ত পানি ব্যবহার হয়। খোসা চুবানো থাকে সমুদ্রের পানিতে অথবা কৃত্রিম স্যালাইনের পরিস্কার পানিতে এবং এক্ষেত্রে ৪ মাস সময় লাগে।
🖋 ফাইবার নিস্কাশন:
নারকেল খোসা জাগানোর পর বা পচানোর পর প্রধান অংশ থেকে ফাইবারকে আলাদা করা হয়। পরিস্কার শেষে এর বিস্তার ঘটে শুকনোর জন্য এবং কদাচিৎ লাঠি দ্বারা পিটিয়ে প্রধান অংশের সাথে মিশে থাকা অবশিষ্টাংশ আলাদা করা হয়। অতঃপর স্পিনিং এবং বুননের মাধ্যমে কয়ার ফাইবারের কাজ সম্পন্ন হয়।
✅ প্রধান উৎপাদনকারী দেশসমূহ:
বিশ্বে মোট কয়ার ফাইবার উৎপাদন হয় ২৫০,০০০ টন।বিশ্বের মোট হোয়াইট ফাইবারের সরবরাহের ৬০% পূরণ করে ভারত, মুলত পোলাচি এবং কেরালা রাজ্যের উপকূলীয় অঞ্চলে। বিশ্বজুড়ে প্রতিবছর উৎপাদিত কয়ার ফাইবারের ৫০% এর বেশি উৎপন্ন হয় ভারতবর্ষের দেশগুলোতে। শ্রীলংকা মোট ৩৬% ব্রাউন ফাইবার উৎপন্ন করে এবং এই শ্রীলংকাই কয়ার ফাইবার ও কয়ার ফাইবার ভিত্তিক পন্যগুলির বৃহত্তম রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে পরিচিত।
✅ কয়ার ফাইবারে বাংলাদেশের অবস্থান:
ভারত ও শ্রীলংকার সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশও বর্তমানে কয়ার ফাইবারের উৎপাদন শুরু হয়েছে। ন্যাচারাল ফাইবার নামের প্রতিষ্ঠানটি বাগেরহাটের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) শিল্পনগরিতে অবস্থিত।২০০৫ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটি কয়ার ফেলট তৈরি করছে এবং ২০০৭ সাল থেকে পুর্নাঙ্গ উৎপাদনে যায়। এরই মধ্যে ম্যাট, পাপোশ, কয়ের টেপ, উইড কনট্রোল ম্যাট, কয়ের পট, হ্যাংগিং বাসকেট ইত্যাদি যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র,কানাডা ও ইউরোপের কয়েকটি দেশে।
🔸 কয়ার ফাইবারের বানিজ্যিক নাম:
১.Bristle fiber:long fiber.
২.Mattress fiber:short fiber.
৩.Decorticated fiber:mixed fiber.
🔹 কয়ার ফাইবারের ব্যবহার:
১.পাপোষ ম্যাট,কার্পেট,দড়ি ইত্যাদি তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।
২.কুটির শিল্পের সৌখিন দ্রব্য যেমন – ব্যাগ,পাখা এবং নারকেলের মালা দিয়ে বোতাম,বাসন,হুক্কা তৈরি হয়।
৩.সোফা তৈরিতে ব্যবহার হয়।
৪.জিওটেক্সটাইল তৈরি হয় কয়ার জাল দ্বারা।
৫.কয়ার ফাইবার লিনার যা পরিবেশবান্ধব উপাদান অভ্যন্তরীন উদ্যানপালনের ক্ষেত্রে এবং এটি মূলের বায়ুপূরন ও জলনিস্কাশনের ক্ষেত্রেও ভুমিকা রাখে।
তথ্যসূত্রঃউইকিপিডিয়া,Textile lab.
Written by:
Jeba Yasmin Borsha
Dept. of Apparel Engineering (2nd batch)
Dr. M A Wazed Miah Textile Engineering College,Pirganj,Rangpur.