যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশ সংরক্ষণবিষয়ক সংস্থা ইপিএর প্রতিবেদন অনুযায়ী পরিবেশ দূষণে বাংলাদেশের অবস্থান ১৮০ টি দেশের মধ্যে:
২০০৬ – ৫৫ তম
২০১০ – ৪১ তম
২০১৪ – ১১ তম
২০১৬ – ৭ম
এবং সর্বশেষ ২০১৮ এর প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। যা খুবই উদ্বেগজনক বিষয়ে পরিনত হয়েছে। কেবল আমাদের দেশের ক্ষেত্রেই নয় বরং গোটা পৃথীবির জন্যই পরিবেশ দূষণ হুমকি হয়ে দাড়িয়েছে। আর আমাদের ফেক্টরি গুলো যে পরিবেশ দূষণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে তা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই।
তাছাড়া আমাদের ফেক্টরি গুলোতে শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও সুজোগ সুবিধার বড়ই অভাব রয়েছে। কিছুদিন পর পর আমাদের শুনতে ফেক্টরিতে আগুন বা ফেক্টরি ধসে পড়ার খবর।
এ সকল সমস্যার সমাধান খুজতেই ১৯৯৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের United States Green Building Council (USGBC) নামক একটি সর্বজনগ্রীহিত প্রতিষ্ঠান কোন স্থাপনা বা ভবনের পরিবেশগত কার্যকারিতা মূল্যায়ন করতে LEED বা Leadership in energy and Environmental Design নামক একটি সার্টিফিকেশন পদ্ধতি প্রবর্তন করে। তাদের উদ্দেশ্য হল স্থাপনা গুলোকে পরিবেশ বান্ধব করা।
USGBC মোট চারটি ক্যাটাগরিতে সনদ প্রদান করে আর তা হলোঃ
▪ সার্টিফাইডঃ ৪০-৪৯ পয়েন্ট
▪ সিলভারঃ ৫০-৫৯ পয়েন্ট
▪ গোল্ডঃ ৬০-৬৯ পয়েন্ট
▪ প্লাটিনামঃ ৮০+ পয়েন্ট
মোট ১১০ পয়েন্টকে সাতটি ক্যাটাগরিতে বিভক্ত করে এই সার্টিফিকেশন দেওয়া হয়।
১। জমির ভৌগোলিক অবস্থানেঃ ২৬ পয়েন্ট
২। পানি সাশ্রয়ঃ ১০ পয়েন্ট
৩। প্রাকৃতিক শক্তির ব্যবহারঃ ৩৫ পয়েন্ট
৪। পরিবেশ বান্ধব নির্মাণসামগ্রীঃ ১৪ পয়েন্ট
৫। অভ্যন্তরীণ পরিবেশগত অবস্থাঃ ১৫ পয়েন্ট
৬। অতি সাম্প্রতিক উদ্ভাবিত যন্ত্রের ব্যবহারঃ ৬ পয়েন্ট
৭। এলাকাভিত্তিক প্রাধ্যান্যতাঃ ৪ পয়েন্ট
এই পয়েন্ট সংগ্রহের ক্ষেত্রে বেশ কিছু নির্দেশনা অনুসরণ করে স্থাপনা নির্মান করতে হয়:
◾ এমন নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করতে হবে যাতে কার্বন নিঃসরণ কম হয়
◾ ইট, সিমেন্ট ও ইস্পাত পুনরুৎপাদনের মাধ্যমে তৈরি হয়েছে সেটি নিশ্চিত করতে হয়।
◾ একই সঙ্গে সব উপকরণ কারখানার সবচেয়ে কাছের প্রতিষ্ঠান থেকে ক্রয় করতে হয়, এতে পরিবহনের জন্য জ্বালানি কম খরচ হয়।
◾ যেখানে কারখানা হবে তার ৫০০ বর্গমিটারের মধ্যে শ্রমিকদের বাসস্থান, স্কুল, বাজার, বাস বা টেম্পো স্ট্যান্ড থাকতে হবে। কারণ দূরে হলেই শ্রমিকদের কারখানায় আসতে গাড়ির প্রয়োজন হবে। এতে জ্বালানি খরচের পাশাপাশি কার্বন নিঃসরণ হবে।
◾ সর্বশেষ প্রযুক্তির মেশিন ব্যাবহার করতে হবে
◾ কারখানায় সূর্যের আলোর কী পরিমাণ ব্যবহার হয়
◾ সূর্যের আলো ব্যবহার করার পাশাপাশি সৌরবিদ্যুত ব্যবহার এবং বিদ্যুতসাশ্রয়ী বাতি ব্যবহার করা হয় কিনা
◾ বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে তা ব্যবহার করা হয় কিনা
◾ কারখানা নির্মাণে নির্দিষ্ট পরিমাণ খোলা জায়গা রাখা হয়েছে কিনা
◾ অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা আছে কিনা
◾ বৈদ্যুতিক ফিটিংস স্থাপন ছাড়াও অগ্নি দুর্ঘটনা এড়াতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়েছে কিনা
বিশ্বজুড়ে ২০ মিলিয়ন বর্গফুটের ৯০,০০০ সবুজ-প্রকল্প ওয়াশিংটন ভিত্তিক USGBC-র আওতাধীন। এ ধরনের ফ্যাক্টরি করতে প্রচুর বিনিয়োগের প্রয়োজন। বিনিয়োগের এ পরিমাণ কারখানার আকার অনুযায়ী সর্বনিন্ম ৩০০ কোটি টাকা থেকে সর্বোচ্চ দেড় হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। আপাত দৃষ্টিতে এটি ব্যায় বহুল হলেও শ্রমিক এবং মালিক উভয়ের জন্যই লাভজনক কারন,এ ধরনের ফেক্টরিতে শতকরা ২৪ শতাংশ জ্বালানি সাশ্রয় হয় এবং ৫০ শতাংশ পানির অপচয় রোধ হয়। এর পাশাপাশি কারখানার পরিবেশ সুন্দর হয়, এর সঙ্গে শ্রমিকদের স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া গেলে, নিরাপত্তা বজায় থাকলে উৎপাদনও বৃদ্ধি পায়।
বর্তমান সময়ে বিশ্বের সেরা ১০ টি পরিবেশ বান্ধব টেক্সটাইল ফেক্টরির ৭ টি বাংলাদেশের। তাছাড়া সবুজ পোশাক শিল্প স্থাপনে সরকার, তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমএ ও উদ্যোক্তারা একসঙ্গে কাজ করছে।
Information Sources: দৈনিক প্রথম আলো, Textile Lab, Textile Today
Writer information:
Ashik Mahmud
Department of Textile Engineering
National Institute of Textile Engineering & Research