সময়ের পরিক্রমায় প্রতিনিয়তই টেক্সটাইল এবং ফাইবারের বিকাশ তথা বিবর্তন ঘটছে।তৈরি হচ্ছে মানুষের জীবনকে সুখ সমৃদ্ধিতে ভরিয়ে তোলার নানা উপকরণ। ফ্যাশন ও সৌন্দর্য উভয়ের দিকে শ্যেনদৃষ্টি রেখে বস্ত্র প্রকৌশলীরা ক্রমশই ক্রেতাদের জন্য বাজারে আনছে অনন্য সব পোষাক। আর সেই পোশাকে যদি থাকে প্রযুক্তির ছোঁয়া, তাহলে তো কথাই নেই।প্রযুক্তির সাথে টেক্সটাইলের এই সংমিশ্রণের ফলে উদ্ভুত হয় স্মার্ট টেক্সটাইল। আর এই স্মার্ট টেক্সটাইলের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল অপটিক্যাল ফাইবার।
সাম্প্রতিক কয়েক দশকে, বৈদ্যুতিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতিতে বেশ কিছু মাইক্রো ইলেক্ট্রনিক যন্ত্র পরিধানযোগ্য অ্যাপ্লিকেশনগুলোর সাহায্যে টেক্সটাইলের সাথে সংযুক্ত হয়েছে। এর সাহায্যে বিভিন্ন গোপন পর্যবেক্ষণ, যোগাযোগ, শারীরিক নানা গুরুত্বপূর্ণ থেরাপি এবং সেই সাথে বিনোদনের এক নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে।
◾ আবিষ্কারঃ
১৯৫২ সালে যুক্তরাজ্যে কর্মরত ভারতীয় পদার্থবিদ নরিন্দর সিং কাপানি প্রথম প্রকৃত ফাইবার অপটিক আবিষ্কার করলেও পরবর্তীতে আনুমানিক ১৩/১৪ বছর পর ব্রিটিশ গবেষক চার্লস কও এবং জর্জ হ্যাকম্যান ইলেক্ট্রিক ক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য ফাইবার অপটিকের ব্যবহার শুরু করেন।
◾ ফ্যাশনে পরিধানযোগ্য অপটিক্যাল ফাইবারঃ
সাম্প্রতিক সময়ে পোশাকে প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে তরুণ-তরুণী ও ফ্যাশন সচেতন গ্রাহকদের কাছে অনন্য এক চাহিদা তৈরি করেছে। মূলত আলোকসজ্জার জন্য অপটিক্যাল ফাইবারগুলো সুন্দর ও গুছানোভাবে টেক্সটাইলে খচিত করা থাকে। পরিমাণের তারতম্য না করে সিনথেটিক ইয়ার্ণ ও অপটিক্যাল ফাইবারের তৈরি ইয়ার্ণের সমন্বয়ে বিশেষ কাপড় তৈরি করা হয়। যেখানে রঙের বৈচিত্র্যের জন্য বিশেষভাবে লেড যুক্ত করা হয়।কিছুটা জটিল প্রক্রিয়ায় ম্যাট্রিক্স আকারে অপটিক্যাল ফাইবারের বুনন কাজ করা হয় এবং এমনভাবে ডিজাইন করা হয় যেন প্রতিটি আলোকিত পৃষ্ঠের ইউনিট অপটিক্যাল ফাইবার দ্বারা বিভিন্ন আলোক উৎসের সাথে যুক্ত করা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জ্যাকেট, মুখোশ, ব্যাগ ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন শো-তে এই ধরণের পোশাক ব্যবহৃত হয়।যেসব প্রতিষ্ঠান এসব পোশাক তৈরি করে-
i) শেনজেন ফ্যাশন লুমিনাস পোশাক কোং লিমিটেড (চীন)
ii) সে-ইয়াং টেক্সটাইল কোং (কোরিয়া)
◾ চিকিৎসাক্ষেত্রে অপটিক্যাল ফাইবারঃ
অপটিক্যাল ফাইবার তুলনামূলক হালকা হওয়ায় আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানে এটি আরো জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।থেরাপি, বিপাকীয় রোগ, টিস্যু মেরামত ও tendinopathy (টেন্ডিনোপ্যাথি) ইনজুরি চিকিৎসায় তরঙ্গ অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে পাঠানো হয়। এক্ষেত্রে তরঙ্গদৈর্ঘ্য নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ কেননা তরঙ্গদৈর্ঘ্যের মানব টিস্যুগুলোতে অনুপ্রবেশের নির্দিষ্ট গভীরতা রয়েছে। তাছাড়া নবজাতকের জন্ডিসের জন্য থেরাপিতে এটি ব্যবহৃত হয়। চিকিৎসাখাতে অপটিক্যাল ফাইবারের সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর সাফল্য হল শরীরের অভ্যন্তরীন জটিলতর চিকিৎসায় নির্দিষ্ট মাত্রার তরঙ্গদৈর্ঘ্যের মাধ্যমে রোগ নির্ণয় ও নিরাময়।
◾ যোগাযোগে অপটিক্যাল ফাইবারঃ
অপটিক্যাল ফাইবারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার যোগাযোগ খাতে। এই ফাইবার এমনভাবে তৈরি, এর মধ্য দিয়ে তরঙ্গাকারে সিগন্যাল প্রেরণ করা হয়। অনেক দূর পর্যন্ত যোগাযোগ স্থাপনের জন্য অপটিক্যাল ফাইবার এক যুগান্তকারী আবিষ্কার। এক্ষেত্রে তরঙ্গটি মূলত পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলনের মাধ্যমে এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে পৌঁছায়। চুলের চেয়েও অনেক চিকন হওয়ায় খালি চোখে দেখা সম্ভব হয় না। তাছাড়া এটি যথেষ্ট নমনীয় হওয়ায় একে যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে বাকিয়ে নেয়া যায়। টেলিকমিউনিকেশন ব্যবস্থার জন্য অপটিক্যাল ফাইবার অতুলনীয়। বর্তমান সময়ে টেকনোলজি ব্যবহার বৃদ্ধির সাথে সাথে যোগাযোগক্ষেত্রে এর ব্যবহার আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
বতর্মান সময়ে বিশ্ববাজারে স্মার্ট টেক্সটাইল ব্যাপক জনপ্রিয়। ফাইবার অপটিক প্রযুক্তি-ভিত্তিক স্মার্ট টেক্সটাইল প্রযুক্তি শিল্পের জন্য একটি নতুন বাজার তৈরি করেছে এবং একই সাথে পণ্য বিকাশের জন্য হাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও উদ্যোগকে আকৃষ্ট করে প্রচুর সুযোগ তৈরি করা হয়েছে। বাংলাদেশ স্মার্ট-টেক্সটাইল খাতে কিছুটা পিছিয়ে থাকেলও সময়ের পরিক্রমায় দেশে তা জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতোমধ্যে নিজেদের প্রয়োজনে অপটিক্যাল ফাইবার ব্যবস্থা চালু করেছে। এছাড়াও ঢাকা ও চট্টগ্রামকে সরাসরি সিঙ্গাপুরের সাথে সংযুক্ত করার জন্য বঙ্গোপসাগরের তলদেশ দিয়ে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল বসানো হয়েছে। আশা করি, ভবিষ্যতে বাংলাদেশও স্মার্ট টেক্সটাইল সেক্টরটিতে আরও অবদান রাখবে।
তথ্যসূত্রঃ Wikipidia,Materials Journal,Tevelec,Textilelab,Textiletoday,বাংলাপিডিয়া.
Written information:
Md. Istiaque Hossain Ullash
Dept. of Fabric Engineering(2nd Batch)
Dr. M A Wazed Miah Textile Engineering College,Pirgonj,Rangpur.