কন্যা তুমি যেদিন থেকে শাড়ি পরে হলে নারী, তোমার প্রেমে প্রেমিক হলাম শাড়ি প্রিয় এই আমি।
আমার বানানো লাইন গুলো শাড়ির মাহাত্ম্য তেমন বিস্তর পরিসরে তুলে ধরতে না পারলেও এর কদর আজ পুরো বিশ্ব জুড়ে বিস্তৃত। আর শাড়ি টা যদি হয় জামদানী?? তবে তা হয়ে উঠে বাংলাদেশেরই প্রতিনিধি।
✍ শাড়ি এবং বাঙ্গালি
নারী আর শাড়ি দুটোই যেন একি সূত্রে গাঁথা এবং বাঙালি বিয়ের কনে থেকে শুরু করে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে আশা অতিথি, সবচাইতে উপরের স্তরের মানুষ থেকে শুরু করে দিন মুজুর শাড়ি যেন তাদের দৈনন্দিন জীবনেরই অপরিচ্ছেদ্য অংশ।
✍ শাড়ির ইতিহাস
শাড়ি তেই নারী, এই শাড়ির ইতিহাস সাড়ে পাঁচ হাজার বছরের পুরোনো। শাড়ি অর্থ পরিধেয় বস্ত্র। শাড়ি শব্দটি এসেছে প্রাকৃত শব্দ শাডি থেকে, যেটি আবার সংস্কৃত শাটী থেকে জন্মলাভ করেছে, সেটি তো এক খণ্ড কাপড়ের টুকরো বই আর কিছু নয়! এটি এমনভাবে জড়িয়ে পরা হত, যাতে এই কাপড়ের টুকরোও হয়ে উঠত একটি আস্ত পোশাক।
সুত্রেঃ বাংলাপিডিয়া
✍ জামদানি শাড়ি
বাংলাদেশের তিনটি পণ্য ইউনেস্কো কর্তৃক ইনট্যানজিবল ক্যালচারাল হেরিটেজ হিসেবে স্বীকৃত তার মধ্যে সর্বপ্রথম স্বীকৃতি পেয়েছে কিন্তু এই জামদানী শাড়িটিই, ২০১৬ সালে ইউনেস্কো কর্তৃক একটি অনন্যসাধারণ নির্বস্তুক সংস্কৃতিক ঐতিহ্য (ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেইজ) হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে।জামদানি’ শব্দটি ফার্সি ভাষা থেকে এসেছে। ফার্সি জামা অর্থ কাপড় এবং দানা অর্থ বুটি, সে অর্থে জামদানি অর্থ দারায় বুটিদার কাপড়। যদিও এই জামদানি নিয়ে অনেক গুলোই মতবাদ বিদ্যমান, এবং মনে করা হয় মুসলমানেরাই ভারত উপমহাদেশে জামদানির প্রচলন ও বিস্তার করেন। জামদানি শাড়ি মানে বার বা তেরো হাতের শাড়িই শুধু নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, অহংকার ও আর তাঁত শিল্পের শিল্পিত ক্যানভাস।
শাড়ি পরে, বিশেষ করে জামদানি শাড়ির বর্ণাঢ্য আঁচল উড়িয়ে একজন নারী আমারিকার রাস্তা দিয়ে হাঁটছে, মানে বাংলাদেশ তার পতাকা প্রদর্শন করছে।
✍ বুননে জামদানি
জামদানি হল কার্পাস তুলা দিয়ে প্রস্তুত একধরনের পরিধেয় বস্ত্র যার বয়ন পদ্ধতি অনন্য। জামদানী বুননকালে তৃতীয় একটি সুতা দিয়ে নকশা ফুটিয়ে তোলা হয়। মসলিন বয়নে যেমন কমপক্ষে ৩০০ কাউন্টের সুতা ব্যবহার করা হয়, জামদানি বয়নে সাধারণত ৭০-৮০ কাউন্টের সূতা ব্যবহৃত হয়। দেশে জামদানী নানা স্থানে তৈরী করা হয় বটে কিন্তু ঢাকাকেই জামদানির আদি জন্মস্থান বলে গণ্য করা হয়।
প্রাচীনকালের মিহি মসলিন কাপড়ের উত্তরাধিকারী হিসেবে জামদানি শাড়ি বাঙ্গালী নারীদের অতি পরিচিত। মসলিনের উপর নকশা করে জামদানি কাপড় তৈরি করা হয়। জামদানি বলতে সাধারণতঃ শাড়িকেই বোঝান হয়। তবে জামদানি দিয়ে নকশী ওড়না, কুর্তা, পাগড়ি, রুমাল, পর্দা প্রভৃতিও তৈরি করা হত।
সুত্রেঃ প্রথম আলো
✍ জামদানি তৈরির কৌশল এবং ধাপসমূহ
-রেশমি গুটি থেকে প্রস্তুত সুতা মূল শাড়ি প্রস্তুতের জন্য তাতে সাজানো হয় এবং পরবর্তিতপ গুটি থেকে প্রস্তুত সুতা রঙ করা হয়।
-রঙ করা সুতা বোনার জন্য প্রস্তুত করা হয় এবং সুতাকে কাপড় বানানোর উদ্দেশ্যে আরো শক্ত এবং মজবুত করার জন্য কয়েক ধাপে ভাতের মাড় দিয়ে শুকানো হয়ে থাকে
-রোদে শুকানো সুতা তাতে নেয়ার জন্য প্রস্তুত করা হয়,সাধারণ হাত-তাঁতে মূল শাড়ি রেখে তাতে রঙিন সুতা দিয়ে নকশা করা হয়।
-নকশা করার সময় আরো একবার ভাতের মাড় দেয়া হয়তারপর নিপুণ কৌশলে শাড়িতে নকশা তোলা শুরু হয়ে থাকে।
-রকমারি রঙের সুতা আর নকশায় শাড়ি সাজানো হয় এবং এভাবেই একটি জামদানি শাড়ি পরনের জন্য প্রস্তুত হয়ে থাকে।
সুত্রেঃ উইকিপিডিয়া
✍ জামদানির প্রকারভেদ
জামদানী শাড়ীর উপাদান অনুযায়ী এটি দুই প্রকার। যথা;
১) হাফ সিল্ক জামদানী – যার আড়াআড়ি সুতাগুলো হয় রেশমের আর লম্বালম্বি সুতাগুলো হয় তুলার।
২) ফুল কটন জামদানী- যা সম্পূর্ণ তুলার সুতায় তৈরি।
জামদানী আমাদের দেশের ঐতিহ্য বহন করে, জামদানী বাংলাদেশ কে নিয়ে যেতে পারে এক অনন্য উচ্চতায়।এই শিল্পটিকে পুরো পৃথিবীর নিকট তুলে ধরা এবং জামদানি নিয়ে আরো বিস্তর পরিসরে কাজ করার গুরু দায়ভার আমাদের উপরেই ন্যস্ত।সবশেষ বলতে চাই, শাড়িতেই নারী এবং নারীতেই জামদানী।
WRITER INFORMATION
ARAFAT KHAN PRITOM Campus Ambassador – TEXTILE ENGINEERS,
EMAIL: arafatpritom[email protected]
Dr.M A Wazed Miah Textile Engineering College.
Dept. Of Apparel Engineering.