শোভাবর্ধনকারী উদ্ভিদ হিসেবে পরিচিত সিসাল(Sisal) নামক উদ্ভিদটিকে দেখলে সবার চোখই জুড়িয়ে যাবে। রাস্তার ধারে, পার্কে অথবা বিভিন্ন রিসোর্টে এই গাছটিকে অনেকেই দেখে থাকবেন।অনেকে হয়ত এই গাছটির নাম আজই প্রথম শুনলেন। কিন্তু আপনারা জানলে অবাক না হয়ে পারবেন না যে, টেক্সটাইল শিল্পে এই সিসাল এর এতো বহুল ব্যবহার রয়েছে। পুরো পৃথিবীতে এটি বিপুল পরিমানে উৎপাদিত একটি প্রাকৃতিক ফাইবার,কিন্তু মজার কথা হলো একটি উৎপাদন করা খুবই সহজ।গ্রীন টেক্সটাইল এর কথা উঠলেই এই সিসাল এর নাম প্রথম সারি তে থাকবে। প্রথমত এই ফাইবার অত্যন্ত পরিবেশবান্ধব। দ্বিতীয়ত এই সিসাল গাছ থেকে ফাইবার আরোহণ সময় যে বর্জ্য উৎপন্ন হয় তা পরিবেশের জন্য অত্যন্ত উপকারি এবং এই বর্জ্য গুলোকেও বিভিন্ন কাজে লাগানো যায়। এই সিসাল ফাইবার খুব শক্তিশালী হয়ে থাকে তাই বিভিন্ন দেশে এটি অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি ফাইবার।সিসাল এক প্রকার প্রাকৃতিক লিফ ফাইবার । ক্যাকটাস গাছের মত এক প্রকার গাছের পাতা থেকে সিসাল ফাইবার সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। এটি মূলত দক্ষিণ মেক্সিকোতে পাওয়া যায়, কিন্তু সারা বিশ্বেই এর চাষাবাদ হয়ে থাকে।
সিসাল গাছের বর্ণনাঃ
সিসাল গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Agave sisalana । এই গাছের পাতা তলোয়ার আকৃতির । পাতাগুলি ১.৫-২ মিটার (৪.৯-৬.৬ ফুট)লম্বা এবং নকশাকৃত হয়ে থাকে। কচি পাতার কিনার ধরে অনেক দাঁতের মতো আছে কিন্তু পরিপক্ক হলে এগুলো হারিয়ে যায়। একটি সিসাল উদ্ভিদ ৭-১০ বছর পর্যন্ত জীবিত থাকে এবং সাধারণত ২০০-২৫০ টির মতো পাতা উৎপাদন করে থাকে । প্রতিটি গাছের পাতা থেকে প্রায় ১০০০ টি ফাইবার পাওয়া যায়। সিসাল গাছ ২৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা বা এর উপরের তাপমাত্রায় ভাল ফলন দেয়। একে ক্রান্তীয় ও উপ-ক্রান্তীয় অঞ্চলের উদ্ভিদ হিসেবে গণ্য করা হয়।
সিসাল ফাইবারের গাঠনিক বৈশিষ্ট্যঃ
Length(mm): ৩০
Diameter(mm): ০.১০-০.১৩
Aspect ratio: ২৩০-৩০০
Tensile strength(MPa): ৩৭১±২৮
Tensile modulas(GPa): ১২.৪৩±২.২৩
Color: হালকা ধূসর
Density(g/cm3): ০.১১৩
Water absorption(%): ৪৩.৫৮
Specific gravity: ০.৭৩
সিসাল ফাইবার এর রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যঃ
Cellulose: ৪৩-৮৮
%Hemicellulose: ১০-১৫%
Lignin : ৪-২০%
Pectin: ০.৮-১০%
Water soluble: ১-৪%
Fat and wax: ০.১৫-২%
Moisture: ১০-২২%
Food and Agriculture Organization of the United Nations এর রিপোর্ট অনুযায়ি ২০১৮ সালের সবচেয়ে বেশি সিসাল উৎপাদনকারি দেশগুলোর একটি তালিকা তুলে ধরা হলোঃব্রাজিলঃ ৮০০৪২ টন তানজানিয়াঃ ৩৩৭৬৬ টনকেনিয়াঃ ২৩৯৮১ টনমাদাগাস্কারঃ ১৭৫১০ টনচীনঃ ১২৯৮৯ টনহাইতিঃ ১২১৯৩ টনমেক্সিকোঃ ৯০০৮ টন এছাড়া আরও বিভিন্ন দেশে এই সিসাল চাষ করা হয়ে থাকে। এই রিপোর্ট থেকে সহজে ধারণা করা যায় যে বর্তমানে আমেরিকা ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে এই সিসাল উৎপাদন করা হয়ে থাকে।
WGC এর রিপোর্ট অনুযায়ি সিসাল ফাইবার আমদানিকারক দেশ গুলোর একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরা হলোঃ
চীনঃ ৬৩%
পর্তুগালঃ ৮%
আলজেরিয়াঃ ৭%
স্পেনঃ ৪%
ইন্দোনেশিয়াঃ ৪%
মেক্সিকোঃ ৪%
ইজিপ্টঃ ৩%
ভারতঃ ২%
ফিলিপাইনঃ ২%
সিসাল ফাইবার ব্যবহার এর সুবিধাঃ
★সিসাল ফাইবার খুব শক্তিশালী একটি ফাইবার।
★এর দ্বারা তৈরিকৃত পোশাক খুব দীর্ঘস্থায়ী এবং রক্ষণাবেক্ষণ করা খুব সহজ।
★সহজে আর্দ্রতা শোষণ করে না।
★এটি বায়োডিগ্রেডেবল, অর্থাৎ একে খুব সহজে পুনরায় ব্যবহারকরা যায়।
★এটি পরিবেশবান্ধব।
★এটি খুব এ স্বাস্থ্যসম্মত। অ্যালার্জি সমস্যার ব্যক্তিদের জন্য আদর্শ পোশাক।
★একে Plaid,Twill,Herringbone খুব সহজেই এই তিন অবস্থায় পাওয়া যায়।
★সিসাল ফাইবার এন্টি স্ট্যাটিক, অর্থাৎ এটি জীবাণু অথবা ধূলিকণা দ্বারা আকৃষ্ট হয় না।
★একে খুব সহজে রঙ করা যায় এবং খুব সহজে রঙ ধরে রাখতে সক্ষম।
★এই ফাইবারের ইয়ং মডুলাস এর দৈর্ঘ্য বৃদ্ধির সাথে সাথে বৃদ্ধি পায়।
★সিসাল গাছের পাতা গুলোকে প্রাকিতিক বোরাক্স হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
★তুলনামূলক ভাবে কম দামি।
★তাছাড়া এটি দুর্দান্ত তাপ ও শব্দ প্রতিরোধী।
★এটি যে পরিমাণে কার্বন-ডাই-অক্সাইড উৎপাদন করে তার চেয়ে বেশি শোষণ করে থাকে।
সিসাল ফাইবার এর ব্যবহারঃ
★সিসাল পাল্পে সেলুলোজ অনুপাতে থাকে।তাই এগুলোকে কাঠের তন্তুর বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
★জুতার ব্রাশ তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।
★কার্পেট শিল্পে এই সিসাল এর বহুল ব্যবহার রয়েছে।
★সিসাল ফাইবারের অন্তরক বৈশিষ্ট্য থাকার ফলে এটি দ্বারা ফাইবারবোর্ড করা যায়।
★সিসাল ফাইবারকে একভাবে পাটের বিকল্প হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।
★কম্বল শিল্পেও সিসাল ফাইবার এর বেশ আধিপত্য রয়েছে।
★অনেক দেশের পোশাক শিল্পেও সিসাল ফাইবার ব্যবহার শুরু হয়েছে।
★তাছাড়া জুতা,টুপি,ব্যাগ,জিও-টেক্সটাইল ইত্যাদি শিল্পেও এর বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে।
সিসাল ফাইবার একটি উন্নত মানের ফাইবার যার বহুল ব্যবহার রয়েছে। পৃথিবীর মোট আমদানিকৃত সিসাল ফাইবার এর প্রায় ৬৩% ই আমদানি করে থাকে পোশাক শিল্পের দ্বিতীয় স্থানে থাকা চীন। তাছাড়া চীন নিজেরাও এই সিসাল উৎপাদন করে থাকে । এ থেকে খুব সহজে বুঝা যায় যে চীন এই সিসাল এর উপর কতটা আধিপত্য বিস্তার করে আছে। কিন্তু পোশাক শিল্পে দ্বিতীয় অবস্থানে আমাদের বাংলাদেশের অনেকেই এখনো এই সিসাল ফাইবার এর সাথে অপরিচিত। এমন অনেক ফাইবার আছে যা কটন ফাইবার এর থেকেও অনেক উন্নত মানের কিন্তু বাংলাদেশে ওইসব ফাইবার এর ব্যবহার খুবই কম। এই ফাইবার গুলো আমাদের দেশে ব্যবহার করা শুরু হলে আমাদের দেশের পোশাকশিল্প আরও বহুদুর এগিয়ে যাবে বলে ধারণা করা যায়।
Source: www.textilelearner.blogpost.com
Writer:Omar Saif
Department of Textile Engineering(3rd batch)
Jashore University of Science and Technology