✅ সাধারণত টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রির অগ্রগতির উপায়ের আলোচনা আসলেই প্রযুক্তির উন্নয়ন,দক্ষ শ্রমশক্তি গড়ে তোলা,দক্ষ প্রযুক্তিবিদ ও প্রকৌশলি গড়ে তোলা ইত্যাদি প্রসঙ্গ চলে আসে। কিন্তু এই অগ্রগতির জন্য আরেকটি বিষয় খুব ই গুরুত্বপূর্ণ, তা হলো উদ্যোক্তা।ইন্ডাস্ট্রির উন্নয়নে একজন সফল উদ্যোক্তার ভূমিকা অনস্বীকার্য।
দেশের টেক্সটাইল বা আরএমজি সেক্টরে বড় উদ্যোক্তা হতে হলে অনেক পথ পেরোতে হয়।কিন্তু এই সেক্টরে ক্ষুদ্র বা ছোট পরিসরের উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য কিছু স্ট্র্যাটিজি বা কৌশল অবলম্বন করে অনেকাংশে সফল হওয়া যায়,এবং নিজেকে বড় উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার জন্য প্রস্তুত করা যায়। আজকে আলোচনা করবো টেক্সটাইল সেক্টরে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন বিজনেস প্ল্যান ও অপোরচুনিটি নিয়ে।
✅ মিনি ফ্যাক্টরি ও সাব-কন্ট্র্যাক্ট বিজনেসঃটেইলর বা সুইং সেকশনের কয়েকজন লোক ও কিছু (৫-৬) সুইং মেশিন দিয়ে একটি মিনি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি শুরু করা যায়। সুইং মেশিন হিসাবে Jack মেশিন,এবং এর সাথে বাটন এর জন্য গার্ড মেশিন নিয়ে কাজ শুরু করা যেতে পারে। প্রতিটি Jack মেশিন সেকেন্ড হ্যান্ড এ ১৮-২০ হাজার টাকায় পাওয়া যায়, এবং গার্ড মেশিন ৮০হাজার – ১লাখ টাকা এর মধ্যে। এর সাথে সাথে আয়রনিং ও প্যাকেজিং সেকশন রাখা যেতে পারে,আবার অন্য জায়গা থেকেও করা যায়।সব মিলিয়ে মেশিন, ঘর ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল সহ প্রায় ২-২.৫ লাখ টাকা খরচ হবে, এবং এর সাথে শ্রমিক মজুরি ও ফেব্রিকের খরচ যোগ হবে।উদাহরণ হিসাবে বলা যেতে পারে প্রতিটি শার্ট সুইং এর জন্য শ্রমিক মজুরি আনুমানিক ৮-১০ টাকা।আর সুইং এ দক্ষ শ্রমিক থাকলে একটা জ্যাক মেশিন দিয়ে প্রতিদিন ৩০-৫০ টি শার্ট সুইং সম্ভব। সেক্ষেত্রে বিক্রয় এর জন্য শার্ট প্রতি মাত্র ১০ টাকা লাভ ধরলেও আনুমানিক ৬ টি Jack মেশিনের একটি ফ্যাক্টরি থেকে প্রতি মাসে কমপক্ষে ৫০-৫৪ হাজার টাকা লাভ সম্ভব। এক্ষেত্রে প্রোডাকশন যত বেশি লাভ তত বেশি।
সল্প মূল্যের জন্য স্কট লটের ফেব্রিক দিয়ে মিনি গার্মেন্টস ব্যাবসা শুরু করা যেতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে ব্যবসা শুরু আগে অবশ্যই ক্রেতা সিলেক্ট করতে হবে। প্রাথমিকভাবে বিভিন্ন এলাকার হাটে ও মার্কেটের খুচরা-পাইকারী দোকান গুলোতে প্রোডাক্ট সাপ্লাই দিয়ে ব্যবসা শুরু করা যেতে পারে। আবার সাব-কন্ট্রাক্ট ফ্যাক্টরির ক্ষেত্রে এক্সপোর্ট এর বড় ফ্যাক্টরি বা বাইং হাউজ গুলো থেকে পিক সিজনে অনেক অর্ডার আসে। কারণ এ সময়ে বড় ফ্যাক্টরি ও বাইং হাউজ গুলোতে প্রোডাকশন ক্ষমতার অধিক অর্ডার থাকে, তাই এসব ফ্যাক্টরি ও বাইং হাউজ সাব কন্ট্রাক্ট এর ছোট ফ্যাক্টরি গুলোর কাছে এসব বার্তি অর্ডার হস্তান্তর করে কন্ট্রাক্টে যায়। এ ক্ষেত্রে ফেব্রিক,পরিবহন খরচ সব বড় ফ্যাক্টরি বা বাইং হাউজ বহন করে। সাব-কন্ট্রাক্ট এর ফ্যাক্টরি শুধু সুইং ও প্যাকেজিং এর কাজ করে। বায়ার দের হ্যান্ডেল করার ঝামেলা ও কাচামাল বা ফেব্রিক কেনার ঝামেলা থেকে এ ক্ষেত্রে রেহাই পাওয়া যায়।
✅ হোলসেল স্টক ও স্টক লটের ব্যবসাঃদ্রুত সময়ে বেশি লাভের জন্য সবচেয়ে ভালো ব্যাবসা হলো হোলসেল বা পাইকারী ব্যবসা। এক্ষেত্রে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি থেকে বেশি পরিমাণে প্রোডাক্ট কিনে বিভিন্ন খুচরা দোকান ও ওয়েবসাইট/অনলাইন পেইজ গুলোতে পাইকারি দরে সাপ্লাই দেয়া যায়। গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর জন্য একটি অফিস বা ওয়েবসাইট খোলা যেতে পারে।
আর এই পাইকারি ব্যবসার ক্ষেত্রেও সবচেয়ে লাভ জনক হচ্ছে স্টক লট আইটেম এর ব্যবসা। গার্মেন্টস গুলো থেকে এক্সপোর্ট এর সময়ে অনেক প্রোডাক্ট ই ডিফেক্টের কারণে অথবা লিড টাইমের ভিতর শিপমেন্ট সম্ভব না হওয়ার কারণে স্টক লট হয়ে গার্মেন্টসে জমা থাকে। এসব এক্সপোর্ট এর প্রোডাক্ট খুব ই সল্প মূল্যে পাওয়া সম্ভব। আর এক্সপোর্ট এর হওয়ায় বার্তি চাহিদা ও থাকে।তাই পাইকারী ব্যবসায় স্টক লট আইটেম সবচেয়ে লাভজনক।
✅ প্রিন্টিংঃ এই সেক্টরে বর্তমানের আরেকটি জনপ্রিয় ব্যবসা হচ্ছে প্রিন্টিং।বিভিন্ন ইভেন্ট,অনুষ্ঠান এ অথবা সংগঠন এর জন্য কাস্টম শার্ট/টিশার্ট প্রয়োজন হয় আবার অনেকে ট্রেন্ড ফলো করেও নিজের পছন্দ মতো কাস্টম শার্ট/টিশার্ট পরিধান করে। তাই এই কাস্টম শার্ট/টিশার্ট তৈরি কে ঘিরেই শুরু হয়েছে এই ব্যাবসা।ঢাকার গুলিস্তান,ফুলবাড়িয়া,পুরানঢাকা,উত্তরা বা নারায়ণগঞ্জ এর চাষাড়া,গাজিপুরের কনাবাড়ি,…ইত্যাদি জায়গায় টিশার্ট/শার্ট বা আরো অন্য বিভিন্ন ধরনের গার্মেন্টস আইটেম এর উপর স্ক্রিন প্রিন্ট, সাবলিমিশন প্রিন্ট, ব্লক প্রিন্ট,…ইত্যাদি দেয়া হয়।
ডাইস, রঙ, রোলার বা সাবলিমিশন পেপার, প্রিমটার, বা ব্লক ইত্যাদি উপকরণ কিনে ইউটিউবে বা হাতে কলমে ম্যানুয়াল প্রিন্টিং শিখে যে কেউ ই এই ব্যবসা শুরু করতে পারে।
✅ টেক্সটাইল কেমিক্যাল ব্যবসাঃ সাইজিং, ওয়েট প্রসেসিং এর বিভিন্ন কেমিক্যাল মেনুফ্যাকচারিং ও সাপ্লাই এর মাধ্যমে এই ব্যবসা দার করানো যায়। বাংলাদেশ এখনো কোনো ধরনের টেক্সটাইল কেমিক্যাল এক্সপোর্ট শুরু করেনি। কারণ এসব কেমিক্যাল মেনুফ্যাকচারিং এর জন্য প্রায় সব কাচামালই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়, তাই এই ক্ষেত্রে উৎপাদন খরচ বেশি পরে যাওয়ায় এক্সপোর্ট সম্ভব নয়। কিন্তু ইতিমধ্যে সাইজিং এর বিভিন্ন উপাদান যেমন এক্রিলিক বাইন্ডার, সফটেনার/স্লিপারি এজেন্ট,…ও ডায়িং এর বিভিন্ন কেমিক্যাল দেশে মেনুফ্যাকচারিং হচ্ছে ও এক্সপোর্ট এর ফ্যাক্টরি গুলোতেও সাপ্লাই দেয়া হয়।
✅ কমিশন বেজড এজেন্সিঃ মার্চেন্ডাইজিং এ যাদের অভিজ্ঞতা রয়েছে তাদের জন্য খুব সহজেই এ ধরনের ব্যবসা দাড় করানো সম্ভব। বিভিন্ন বায়ার দের সাথে যোগাযোগ থাকলে তাদের কাছ থেকে অর্ডার নিয়ে ফ্যাক্টরি গুলো থেকে প্রোডাকশন কালেক্ট করে বায়ার দের সাপ্লাই দিয়ে কমিশন লাভের মাধ্যমে ব্যবসার বিস্তার ঘটানো যায়। এজন্য ডিলিংস এর জন্য দক্ষ কয়েকজন মানুষ হলেই হয়।
✅ দেশের টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে নতুন উদ্যোক্তাদের সৃজনশীল পরিকল্পনা নিয়ে সামনে আসতেই হবে। তাহলেই এ ইন্ডাস্ট্রিতে বৈচিত্র্যময়তা আসবে ও ভ্যালু এডিশন হবে। তাই এ সেক্টর নিয়ে যাদের সপ্ন রয়েছে তারা শুধু নিজেদের সপ্নকে চাকরির বের-জালে বন্দি রাখবেন না।নিজেকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার মাধ্যমেও আপনি আপনার সপ্নের বাস্তবায়ন করতে পারেন।
✅ Writer information:
Abdullah Mehedi Dipto
Primeasia University
Batch: 181
Campus Core Team Member (TES)