Sunday, November 24, 2024
Magazine
More
    HomeTextile Manufacturingস্যানিটারি প্যাড আর নন-ওভেন ফেব্রিকের গল্প

    স্যানিটারি প্যাড আর নন-ওভেন ফেব্রিকের গল্প

    বর্তমান সময়ে যখন বাচ্চা ও মহিলাদের জীবন ধারনে বড় ধরণের পরিবর্তন এসেছে, জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পেয়েছে তখন পোশাক পছন্দের ক্ষেত্রেও মানুষের কাছে সবথেকে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে ব্যক্তিগত যত্ন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যাপার। শিশুদের ডায়পার, মহিলাদের প্যাড এবং প্রাপ্ত বয়স্কদের বিভিন্ন প্রতিকুল পরিবেশ কালীন সময়ে ব্যবহারের ডায়পার ইত্যাদি তেমনি কিছু প্রোডাক্ট যেগুলো পানি শোষণক্ষম হাইজিন প্রোডাক্টের শ্রেনীভুক্ত। এগুলোর সাথে আমরা সবাই কম বেশি পরিচিত হলেও প্রাপ্ত বয়স্ক ডায়পার সম্পর্কে আমাদের তেমন ধারণা নেই। মহাকাশে দীর্ঘ সময়ের গবেষণায় যাওয়া মহাকাশচারীদের জন্য এ সমস্ত ডায়পার তৈরি করা হয়ে থাকে যেগুলো তাদের একটানা কাজের বাঁধা দূর করে। এ সবরকমের ডায়পার তথা প্যাড গুলো তৈরি হয় নন-অভেন ফেব্রিক থেকে।

    নন-অভেনের কিছু বিশেষ বৈশিষ্টের মধ্যে অন্যতম কিছু গুন যেমন খুব দ্রুত এতে তরল প্রবেশ করতে পারে এবং খুব তাড়াতাড়ি শুকিয়েও যেতে পারে। শুধুমাত্র এই টেকনিক্যাল গুণগত মানের জন্যই না, স্পর্শকাতর ত্বকের জন্য নন-অভেন পোশাকের নরম, কোমল বহিঃত্বক আরামদায়ক অনুভুতির সহায়ক। এছাড়া এমন অনেক পোশাক রয়েছে যেগুলোতে শুধুমাত্র বহিরাংশের ভেতরের স্তর নন-অভেন দিয়ে আবৃত করা হয় এবং তারপর টেক্সটাইল ধর্মী কোন স্তর যেমন; ফ্যাব্রিক ব্যবহার করে তাতে পোশাকের অনুভব আনয়ন করা হয়।

    নন-অভেন দিয়ে তৈরি মহিলাদের হাইজিন প্রোডাক্ট গুলোর কল্যাণেই এখন সারা বিশ্বের মহিলারা খুব সহজে তাদের প্রত্যাহিক কাজ নির্বাহ করতে পারছে। স্বাস্থ্যগত কারণে মহিলাদের পিরিয়ডের সমস্যা পোহাতে হয়, নন-অভেন প্যাড আবিষ্কারের আগে মহিলাদের নির্বীগ্নে বাইরে কাজ করা খুব কঠিন ছিল। তাই নন-অভেন প্রযুক্তির উন্নতি মহিলা তথা সামগ্রিক কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধিকরনে বৈপ্লবিক ভুমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে বলা যায়।পূর্বে স্যানেটারী প্যাড অথবা ন্যপকিন গুলোর পরিবর্তে ব্যবহৃত হত শক্ত ও পুনঃ ব্যবহারক্ষম ফেব্রিক। এগুলো ছিল বেশ দামি, তাই বারবার ব্যবহার করা গেলেও সেগুলো বর্তমানের মত ফ্লেক্সিবল ছিল না তাই স্পর্শকাতর ত্বকের জন্য এগুলোর ব্যবহার ছিল হতাশাব্যঞ্জক। কিন্তু বর্তমান সময়ের স্যানিটারি প্যাড বাজারে আসার সাথে সাথেই দ্রুত আগের প্রোডাক্ট গুলোর জায়গা দখল করে নেয়। তবে নন-অভেন পোশাকের আইটেমের মধ্যে শিশু ডায়পারই সবচেয়ে বড় ক্যাটাগরি।

    বেশীরভাগ তরল শোষণক্ষম পোশাক এক বার ব্যবহার করার জন্য তৈরি, এতে ব্যবহৃত হয় পলিমার কেন্দ্রিক পদার্থ সাথে থাকে Viscose, Cotton এবং Fluff Pulp. একবার ব্যবহার করেই ফেলে দিতে হয় বলে এইগুলো ব্যবহারে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বা ইনফেকশনের ভয় থাকে না।

    বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করলে দেখা যায় এ সমস্ত ওয়ান টাইম ব্যবহার্য পোশাকের ব্যবহার ও চাহিদা প্রতিনিয়ত বেড়ে চলছে, যদিও অঞ্চল ভেদে এর চাহিদার ভিন্নতা রয়েছে। যেমন পশ্চিমা ইউরোপের দেশগুলোতে শিশু জন্মহার কম, সেখানে জনসংখ্যার ১৭ শতাংশের বয়স ৬৫ উপড়ে। উত্তর অ্যামেরিকার পরিস্থিতিও খানিকটা একই রকম, অন্যদিকে আফ্রিকা ও এশিয়ার দেশগুলোর চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন, সেখানে জন্মহার ও কমবয়সী মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি। তাই এসমস্ত এলাকা গুলোতে ডায়পার সামগ্রীর চাহিদা স্বভাবতই বেশি।

    ✅ নন ওভেন ফেব্রিক সম্পর্কে আরও কিছু তথ্য :-

    নন ওভেন ফেব্রিক কে নতুন টেকনোলজির ফেব্রিক মনে করা হলেও মজার বিষয় হচ্ছে অনেক প্রাচীন কাল থেকে মানুষ নন ওভেন ফেব্রিক ব্যবহার করে আসছে। এর সবচেয়ে স্বীকৃত উদাহরণ হল আদিম মানুষের প্রাণীজ পশমের কাপড়। নন ওভেন ফেব্রিকের সবচেয়ে প্রাচীন যে নিদর্শনটি পাওয়া গেছে তা ৩৫০০-৩০০০ খ্রিস্টপূর্ব সময়কালের একটি পশমি কাপড়। পশমি কাপড়টি তৈরি হয়েছিল বিভিন্ন প্রানীর চুল থেকে।

    পরবর্তীতে আধুনিক যুগে যখন আবার নন-ওভেনের প্রচলন পুনরায় শুরু হল তখন তা সীমাবদ্ধ ছিল কেবল প্রটেক্টিভ ক্লথ হিসেবে যেমন তাবু টাঙ্গানোর মত নন ওভেন কাপড়ে। কিন্তু সম্প্রতি সার্জিকাল গাউন-ক্যাপ, শিশুদের ডায়পার, ফিল্টার ক্লথ, ভ্যাকুয়াম ব্যাগ, রুমাল, জিও ও হাইজেনিক টেক্সটাইল ছাড়াও বিভিন্ন ফ্যাশনেবল গাউন, ব্রা, কাঁধের প্যাড ইত্যাদিতেও নন ওভেনের ব্যাবহার হচ্ছে।

    প্রথাগত ফেব্রিক ম্যানুফাকচারিং এ প্রথমে ফাইবারকে ইয়ার্নে তারপর ইয়ার্নকে ফেব্রিকে রূপান্তরিত করা হয়। কিন্তু নন ওভেনের ফেব্রিক ম্যানুফাকচারিং সম্পুর্ন আলাদা। এখানে ফাইবারকে সরাসরি ফেব্রিকে পরিনত করা হয় ।

    তাপ ও চাপের প্রভাবে সমান্তরাল, এলোমেলো বা আড়াআড়ি থাকা ফাইবার গুচ্ছের সাথে আঠালো তাপসহিষ্ণু প্রক্রিয়ার সাহায্যে ফাইবারের বন্ধন গঠনের মাধ্যমে নন ওভেন ফেব্রিক তৈরি হয়।

    ষাটের দশকে প্রথম যখন নন ওভেন ফেব্রিকের উপড় গবেষণা শুরু হয়েছিল, তখন পপুলার না হলেও সাম্প্রতিক কিছু গবেষণায় এ ফেব্রিকের মানে অনেক উন্নতি এসেছে। এখনকার নন ওভেন আগের তুলনায় অনেক হালকা, টেকসই, প্রসারণক্ষমতা সম্পন্ন। যদিও ওভেন ও নিটেড ফেব্রিক কে কেন্দ্র করে মূলত অ্যাপ্পারেল মার্কেট সচল। কয়েক দশক ধরে নন ওভেনের প্রোডাক্ট ক্রমশ অ্যাপ্পারেল মার্কেটে জায়গা করে নিচ্ছে।

    ✒️ Writer information:

    Name: Monayam Chowdhury
    Institute: Primeasia University
    Batch: 182
    Campus Core Team Member (TES)

    RELATED ARTICLES

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    Related News

    - Advertisment -

    Most Viewed