টেক্সটাইল শিল্পে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরণের প্রাকৃতিক ফাইবারের মধ্যে রোসেলা ফাইবার অন্যতম একটি ফাইবার। এটি খুবই শক্তিশালী একটি ফাইবার।রোসেলা উদ্ভিদকে অনেকেই হয়তো চিনতে পেরেছেন না চিনলেও অবাক হব না কারন বাংলাদেশে এটি রোসেলা নামে পরিচিত নয়।এমনকি বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এটি বিভিন্ন নামে পরিচিত।কিন্তু এটিকে মানুষ যে নামে সবচেয়ে বেশি চিনে থাকবেন সেটি হল মেস্তা। হ্যাঁ সেই মেস্তা যা আমরা ফল, আচার, জেলি, তরকারি হিসেবে খেয়ে থাকি। কিন্তু এটি যে একটি খুবই শক্তিশালী বাস্ট ফাইবার তা আমরা হয়তো অনেকেই জানি না। না জানাটাই স্বাভাবিক কারন বাংলাদেশ এবং ভারতে আচার বা জেলি বানানোর জন্য বাণিজ্যিক ভাবে চাষ করা হয়ে থাকে।কিন্তু টেক্সটাইল শিল্পেও এর যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে।
রোসেলা উদ্ভিদ এর বর্ণনাঃ রোসেলা একটি বহুবর্ষজীবী গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ।এটি লম্বায় প্রায় ২-২.২৫মিটার বা ৭-৮ ফুট লম্বা হয়। পাতাগুলো ৮-১৫ সেমি (৩-৬ ইঞ্চি) লম্বা হয়, পাতাগুলিতে পর্যায়ক্রমে সাজানো হয়।ফুলগুলির ব্যাস ৮-১০ সেমি বা ৩-৪ ইঞ্চি হয়ে থাকে , প্রতিটি পাপড়ির গোড়ায় একটি লাল দাগ থাকে। ফল পাকলে মাংসল এবং উজ্জ্বল লাল বর্ণের হয়ে থাকে। ফলগুলোর ব্যাস প্রায় ৩-৩.৫ সেমি বা ১.২-১.৪ ইঞ্চি হয়ে থাকে। ফলগুলো পাকতে প্রায় ছয় মাস সময় নেয়। এগুলো টক স্বাদযুক্ত হয়ে থাকে ।
উৎপাদনকারী দেশসমূহঃচীন এবং থাইল্যান্ড রোসেলা ফাইবার এর সবচেয়ে বড় উৎপাদক দেশ। পুরো পৃথিবীতে রপ্তানিকৃত রোসেলা ফাইবার এর সিংহভাগ অংশই এই ২ টি দেশ থেকে আসে। তবে বিশ্বের সেরা রোসেলা ফাইবার সুদান এবং নাইজেরিয়া থেকে আসে। তাছাড়া মেক্সিকো, মিশর, সেনেগাল, তানজানিয়া, মালি এবং জামাইকা ও গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহকারী দেশ, কিন্তু তারা তাদের উৎপাদিত ফাইবার এর অধিকাংশ অংশই নিজেদের কাজে ব্যবহার করে থাকে।ভারতীয় উপমহাদেশেও এই রোসেলা উদ্ভিদ উৎপাদন করা হয়ে থাকে তবে তারা এই রোসেলা উদ্ভিদ খাদ্য সামগ্রী তৈরিতে ব্যবহার করা হয় , যা মেস্তা নামে পরিচিত।এই পোশাক শিল্পে রোসেলা উদ্ভিদ থেকে প্রাপ্ত ফাইবার এর প্রচুর চাহিদা রয়েছে।
রোসেলা ফাইবার এর গাঠনিক বৈশিষ্ট্যঃFibre length(mm): ২.১-২.৮
Diameter(µm): ১৬.০৭-২০.২
Color: হালকা সোনালি
Density(g/cm3): ১.৩৫-১.৪৬
Strength(MPa): ১৪.৬০-১৭৭.৫৫
Elongation(%): ০.৫-০.৭
Modulus(GPa): ২০.৭০-২৪.৯০
Strain(%): ০.০০৫-০.৭
রোসেলা ফাইবার এর রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যঃ
সেলুলোজঃ ৬৯.৩৮%
লিগনিনঃ ১৬.৫৪%
হেমি সেলুলোজঃ ১২.৩৫%
জল দ্রবণীয় পদার্থঃ ১.২৭%
পেকটিনঃ ০.৩২%
মোমঃ ০.১৪%
রোসেলা ফাইবার এর গুনণাগুণঃ১/ রোসেলা হল এমন একটি ফাইবার যার খুব বেশি পরিমানে সেলুলোজ বিদ্যমান।
২/ এর টেনসাইল শক্তি খুবই বেশি।
৩/ এটি একটি পরিবেশবান্ধব ফাইবার।
৪/ তাছাড়া রোসেলা উদ্ভিদ এবং উদ্ভিদ থেকে ফাইবার উৎপাদন উভয় ক্ষেত্রেই খুব কম পরিমান পানির প্রয়োজন।
৫/ অন্যান্য ফাইবারের তুলনায় এই রোসেল ফাইবার খুবই শক্তিশালী।
৬/ রোসেলা ফাইবার উৎপাদন খরচ খুবই কম এবং এই ফাইবার খুবই সহজ লভ্য।
অসুবিধাঃরোসেলা ফাইবার উৎপাদন এর ক্ষেত্রে শুধু মাত্র যে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় তা হল রোসেলা উদ্ভিদ উৎপাদনে অনেক বেশি সময় লাগে। কিন্তু এই সমস্যা সমাধান ও হয়ে গেছে।এখন ৩ মাস, ৬ মাস, ৯ মাস বয়সী রোসেলা উদ্ভিদ থেকে ফাইবার আহরণ করা হয়। ফলে তিনটি আলাদা আলাদা গুণ বিশিষ্ট রোসেলা ফাইবার পাওয়া যায়। রোসেলা ফাইবার এর ব্যবহারঃ১/ একে পাট এর বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
২/ হস্তশিল্পে এই ফাইবার এর বেশ সুনাম রয়েছে।
৩/ ব্যাগ তৈরিতে রোসেলা ফাইবার ব্যবহার করা হয়।
৪/ রোসেলা যাইবার দিয়ে তৈরিকৃত সামগ্রী অত্যন্ত টেকসই হয়।
৫/ কাগজ শিল্পেও এই ফাইবার গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে থাকে।
৬/ দড়ি তৈরিতে উৎপাদিত রোসেলা ফাইবারের একটি বড় অংশ ব্যবহৃত হয়।
৭/ গৃহসজ্জার বিভিন্ন উপাদান তৈরিতেও বর্তমানে রোসেলা ফাইবার ব্যবহৃত হচ্ছে।
৮/ তাছাড়া রোসেলা ফাইবারকে অন্য ফাইবারের সাথে মিশিয়ে সেই ফাইবারের শক্তি বৃদ্ধির কাজেও ব্যবহার করা হয়।
পোশাক শিল্পে রোসেলা ফাইবার এখনো প্রতিযোগিতায় আসতে পারেনি।কিন্তু এর বিভিন্ন গুণাগুণ খুবই উন্নত মানের এবং পোশাক শিল্পে ব্যবহারের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। বর্তমান যুগ স্মার্ট টেক্সটাইল এর যুগ হলেও পরিবেশ বিশ্লেষকদের মতে আমাদের সচেতন হওয়া উচিত এবং প্রাকৃতিক ফাইবার ব্যবহারে অভ্যস্ত হওয়া উচিত । কারন পরিবেশ দূষণের ফলে পৃথিবীর ভবিষ্যৎ অন্ধকারে । তাই সবার উচিত পৃথিবীকে ভালোবেসে, পরিবেশের কথা, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা চিন্তা করে রোসেলা ফাইবার সহ সব ধরণের প্রাকৃতিক ফাইবার ব্যবহার করা। যাতে বেঁচে যায় আমাদের পরিবেশ, বেঁচে যায় আমাদের ভালোবাসার পৃথিবী।
Source:www.wikipedia.com
Writer:Omar Saif
Department of Textile Engineering (3rd Batch)
Jashore University of Science and Technology