একটা গল্প দিয়ে শুরু করি। তখন আমি খুব ছোট। কাজিন আমেরিকা থেকে ঈদে দেশে এসেছিল। তাঁর কাপড়ে “Made in Bangladesh” লিখা দেখে খুবই অবাক হলাম। সে জানাল কাপড়টি আমেরিকা থেকেই কেনা। বাংলাদেশী জিনিসের ওপর মানুষের অনাস্থা দেখে ভেবেছিলাম কিভাবে সম্ভব? আস্তে আস্তে সবই জানলাম, পোশাকশিল্পে আমাদের অবস্থানও জানতে পারলাম। এবার আসি মূল প্রসংগে। ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিভিন্ন উন্নত দেশ তাঁদের উন্নত প্রযুক্তি দিয়ে এত সব জিনিস বানাচ্ছে। অথচ, পোশাক উৎপাদন করতে পারে না- বিষয়টি কিন্তু এমন না। তাঁরা কখনই তাঁদের স্বার্থ ছাড়া আমাদের থেকে করুণা করে পোশাক কিনে না। কয়েকটি কারণ বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করতেছি।
সস্তা শ্রম বাজারঃ অন্যান্য দেশের চাইতে আমাদের পোশাকশ্রমিকরা দক্ষ এবং খুবই অল্প মূল্যে শ্রয় দিয়ে থাকে। এখানে অন্যান্য শ্রমিকদের চাইতে ফাঁকি দেবার সুযোগ খুবই কম। আমরা “Made in Bangladesh” ট্যাগ দেখে, বিশ্বে তৃতীয় অবস্থান দেখে পুলকিত হই। কিন্তু, যাদের হাত ধরে এই সাফল্য, তাঁদের সংগ্রামী, ত্যাগী জীবন সম্পর্কে জানতে চাই না। শুক্রবার বাদে কোন ছুটি ছাড়াই দিনের পর দিন অবিরাম কাজ করতে হয়। কোন দূর্ঘটনা ঘটে গেলে তাঁদের খোঁজ কেউ রাখেনা। এই যে করোনা মহামারীর সময়ে যখন সবাই গৃহবন্দী, তখন এই শ্রমিকেরাই দেশের অর্থনীতি ঠিক রাখতে জীবন বাজি রেখে পরিশ্রম করেছে। এত অল্প দামে, এত দক্ষ শ্রমিক অন্তত ইউরোপ-আমেরিকাতে পাওয়া যাবে না। এটাই মূলত প্রধান কারণ।
প্রচুর পানিঃ সৃষ্টিকর্তার অশেষ করুণায় এদেশে প্রচুর বিশুদ্ধ পানি মজুদ রয়েছে। কিন্তু, টেক্সটাইল, গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে প্রচুর পরিমাণে পানির প্রয়োজন হয়। অনেক কারখানাতে মাটি থেকে বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করা হয়, যা ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য হুমকিস্বরূপ। ব্যবহৃত দূষিত পানি পরিবেশে অবমুক্ত করে পরিবেশ দূষণ ঘটানো হয়। কিন্তু, কয়েকটি পরিবেশবান্ধব টেক্সটাইল মিল থাকলেও অধিকাংশ কারখানাগুলিতে ব্যবহৃত পানি পরিশোধণ করে ব্যবহারযোগ্য করার কোন সুযোগ থাকে না।
গ্যাসের সহজলভ্যতাঃ আমাদের দেশে গ্যাসেরও মজুদ রয়েছে। অধিকাংশ টেক্সটাইল মিলে গ্যাস ব্যবহার করা হয়। দেশের গ্যাস বলে কম দামে সহজেই গ্যাস পাওয়া যায়। এই সুযোগটি সব দেশে থাকে না।
Writer: Mehedi Hasan Shojol
1st batch, Wet Process Engineering.
Sheikh Kamal Textile Engineering College, Jhenaidah.