নকশাযুক্ত কোনো কিছু ভালো লাগে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। পরনের পোশাক হোক আর ঘর সাজানোর উপকরণই হোক না কেন সবাই যে হরেক রকম নকশা বা ডিজাইনযুক্ত কাপড় বা জিনিসকেই প্রাধান্য দিবেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই ঠিক সেই রকমই একটি ফেব্রিক হলো Damask fabric এটি এমন এক নকশাযুক্ত ফেব্রিক যা দেখার পর সবারই চোখ জুড়াবে এবং এটিকে একবারের জন্য হলেও ধরে দেখতে চাইবেন।যারা শৌখিন মানুষ আছেন,যারা বিভিন্ন জিনিস দিয়ে ঘর সাজাতে পছন্দ করেন তাদের জন্য এই দামাস্ক ফেব্রিককে কিছুটা সোনার খনির মতোই বলা চলে।
ইতিহাসঃDamask Fabric এর উৎপত্তি হয় খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ৩০০ সালে চীনে। তবে এর বিকাশ হয়ে ছিল মধ্যযুগের প্রথম দিকে। মধ্যযুগে বাইজেন্টাইন এবং মধ্যপ্রাচ্যের আশেপাশের স্থানগুলোতে এই দামাস্ক ফেব্রিক এর উৎপাদন হত। এই ফেব্রিক এর নামকরণ করা হয় সিরিয়ার দামাস্ক(Damascus) শহরের নাম থেকে। এই দামাস্ক শহর ছিল একটি বন্দর নগরী যা তৎকালীন সময়ের সিল্ক বা রেশমের বানিজ্যের অন্যতম প্রধান পথ।আর শুরুর দিকে দামাস্ক ফেব্রিক রেশমের সুতা দিয়েই বোনা হত। এই Damask fabric চতুর্দশ শতাব্দীতে প্রথমবারের মতো ইউরোপে আসে। এবং চতুর্দশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ের মধ্যেই এই দামাস্ক ফেব্রিক ফ্রান্সে খুব বেশি জনপ্রিয় হয়ে যায়। সেই সময়, আধুনিক ফ্রান্স এবং ইতালির সীমান্তের মধ্যে থাকা দেশগুলি ছিল বিশ্বের বণিক কেন্দ্র। যার ফলে দামাস্ক ফেব্রিক এর কথা ধীরে ধীরে সম্পূর্ণ পৃথিবী জেনে যায়। পঞ্চদশ শতাব্দী পর্যন্ত এই দামাস্ক ছিল শুধু মাত্র মুসলিমদের গৌরবের বিষয় যা ধীরে ধীরে পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পরে।
Damask Fabric এর ধরনঃ১/Silk Damask
২/Synthetic Damask
৩/Cotton Damask
৪/Wool Damask
৫/Twill Damask
Damask Fabric এর বৈশিষ্ট্যঃ
১/দামাস্ক ফেব্রিক এর বুনন অনেকটা সাটিন ফেব্রিক এর মতই।যার ফলে এই দামাস্ক ফেব্রিকও সাটিনের মতো উজ্জ্বল হয়ে থাকে।
২/দামাস্ক প্যাটার্ন তৈরির সময় যে বুনন দেয়া হয় টা বেশ শক্ত হয়র থাকে এবং বুননটি থ্রেডের কয়েকটি স্তর নিয়ে গঠিত হয়ে থাকে, যার ফলে এটি বেশ মোটা হয়ে থাকে।
৩/এই ফেব্রিকে বিভিন্ন নকশা,জ্যামিতিক আকার-আকৃতি,তারা,পশুপাখি সহ আরও বিভিন্ন ধরনের নকশা করা থাকে।যা ফেব্রিকটিকে আকর্ষণীয় করে তোলে।
৪/দামাস্ক ফেব্রিকে যে নকশা গুলো ফুটিয়ে তোলা হয় তা কাপড়ের উপর এবং নিচ উভয় প্রান্তে একই থাকে। অর্থাৎ এই ফেব্রিককে দুই দিক থেকেই ব্যবহার করা যায়।
৫/দামাস্ক মূলত রেশমের সুতা দিয়ে তৈরি করা হয়। কিন্তু বর্তমানে দামাস্ক তৈরিতে কটন, লিনেন, উল এবং সিন্থেটিক ফাইবারগুলিও ব্যবহৃত হয়।
৬/প্রথম দিকের দামাস্ক ফেব্রিকের নকশা গুলো হস্তচালিত তাঁতে তৈরি করা হলেও বর্তমানে আধুনিক দামাস্কগুলি কম্পিউটারাইজড জ্যাকার্ড লুমগুলিতে বোনা হয়।
৭/এই ফ্যাব্রিকের প্যাটার্নগুলি বুনন কাঠামোর আলোর প্রতিবিম্বের কারণে তৈরি করা হয়।
৮/এই ওয়ার্প এবং ওয়েফট থ্রেডগুলির সংমিশ্রণের ফলে একটি অনন্য ফ্যাব্রিক তৈরি হয় যার দিকে বিভিন্ন অবস্থান থেকে তাকালে বিভিন্ন রুপ ধারন করবে। আলোর প্রতিবিম্বের কারনে এমনটা হয়ে থাকে।
৯/প্রাকৃতিক ফাইবার দ্বারা তৈরি হওয়া দামাস্ক থেকে সিন্থেটিক দামাস্ক বেশি টেকসই হয়ে থাকে।
দামাস্ক(Damask) এবং ব্রোকেড(Brocade) উভয়ই জ্যাকার্ড লুমে বোনা নকশা বা প্যাটার্নযুক্ত কাপড় হওয়া সত্ত্বেও এদের মধ্যে বৈশিষ্ট্যগত কিছু পার্থক্য দেখা যায়। পার্থক্য গুলোর মধ্যে রয়েছেঃ
১/দামাস্ক ফেব্রিক একদম সমতল থাকে কিন্তু ব্রোকেড ফেব্রিকের প্যাটার্ন বা নকশা গুলো কিছুটা এমবসড (Embossed) বা উঁচু হয়ে থাকে।
২/দামাস্ক এর নকশা গুলো দুই পাশেই থাকে কিন্তু ব্রোকেড এর নকশা গুলো শুধু এক পাশে থাকে।
৩/ব্রোকেডের প্যাটার্নগুলিকে অবশ্যই একাধিক রঙ বিশিষ্ট হতে হয়, অপরদিকে দামাস্ক এক রঙ বিশিষ্ট বা বহু রঙের হতে পারে।
৪/দামাস্ক ফেব্রিক গুলো স্বভাবতই কিছুটা চকচকে হয়ে থাকে। কিন্তু ব্রোকেড ফেব্রিককে উজ্জ্বল করার জন্য এর মধ্যে প্রায়শই ধাতব থ্রেড প্রবেশ করানো হয়।
৫/ ব্রোকেড ফেব্রিকের বুনন গুলি অনেকটা দুর্বল হয়ে থাকে যার ফলে বুনন গুলি খুব সহজে খুলে আস্তে পারে। অন্যদিকে দামাস্ক ফেব্রিকের বুনন গুলি খুবই শক্তিশালী হয়ে থাকে।
৬/ ব্রোকেড এর তুলনায় দামাস্ক বেশি টেকসই।
Damask Fabric এর ব্যবহারঃদামাস্ক ফেব্রিক এর সবচেয়ে বড় আকর্ষণীয় বিষয়টি হলো এর গায়ে করা বিভিন্ন ধরনের নকশাগুলো।তাই মানুষের কাছে এটি ঘর সাজানোর উপকরণ হিসেবেই বেশি গ্রহনীয়।এর সবচেয়ে বেশি ব্যবহার পরিলক্ষিত হয় টেবিল ক্লথ হিসেবে।তাছাড়া বিছানার চাদর, সোফার কভার, কুশন কভার হিসেবেও এই দামাস্ক ফেব্রিক ব্যবহার করা হয়। দরজা-জানালার পর্দা হিসেবেও এর বহুল ব্যবহার রয়েছে। তাছাড়া শৌখিন মানুষেরা তাদের ঘরের ওয়ালপেপার এর জায়গায় এই দামাস্ক ফেব্রিক ব্যবহার করে থাকেন। পোশাক তৈরির ক্ষেত্রে এর ব্যবহার থাকলেও এটি এতোটা জনপ্রিয় নয়। অনেকেএই দামাস্ক ফেব্রিক এর তৈরি কোট, জ্যাকেট, গাউন, স্কার্ফ ব্যবহার করে থাকেন। তাছাড়া মহিলাদের ব্যাগ তৈরিতেও এই দামাস্ক ফেব্রিক এর প্রচলন রয়েছে।
নানা ধরনের নকশা করা এই দামাস্ক ফেব্রিক সত্যিই খুবই আকর্ষণীয় একটি ফেব্রিক। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের শৌখিন মানুষেরা তাদের ঘর সাজানোর কাজে এই দামাস্ক ফেব্রিক ব্যবহার করে থাকেন। তাছাড়া বড় বড় হোটেল বা রেস্টুরেন্ট সাজানোর কাজেও এই দামাস্ক ফেব্রিক আজ সকলের কাছে সমাদৃত। তাই যারা যারা ঘর সাজাতে পছন্দ করেন তারা দামাস্ক ফেব্রিক দ্বারা তৈরিকৃত জিনিস ব্যবহার করে দেখতে পারে। আশা করা করা যায় এই নান্দনিক এবং মনোমুগ্ধকর জিনিসটি সকলের নজর কারবে।
Source: www.masterclass.com
Writer: Omar Saif
Department of Textile Engineering(3rd Batch)
Jashore University of Science and Technology