বিশ্ব বস্ত্র শিল্পের মেরুদণ্ড হলো তুলা। তুলা প্রাকৃতিক তন্তু হিসেবে তুলা গাছ থেকে পাওয়া যায়।প্রধান অর্থকরী ফসলগুলো এবং উৎপাদিত কৃষিপণ্যের মধ্যে তুলা অন্যতম।তুলা এবং তুলা সম্পর্কিত শিল্প কারখানাগুলো বর্তমানে একটি দেশের অর্থনৈতিক চাকাকে চলমান রাখতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং উন্নয়নকে তরান্বিত করতে সহায়তা করে।
তুলোর ইংরেজি প্রতিশব্দ কটন যা আরবি (আল) কুতন্ থেকে উদ্ভূত। আনুমানিক ১৪০০ খ্রিষ্টাব্দে এ শব্দের প্রচলন ঘটে।
#গোত্রঃMalvaceae
#গণঃ Gossypium
তুলা একধরনের আঁশজাতীয় নরম পদার্থবিশেষ যা সংশ্লিষ্ট তুলা গাছের বীজের সাথে সম্পৃক্ত থাকে।সাধারণত তুলা দেখতে সাদা বর্ণের হয়। লম্বা, পাতলা ও চুলের ন্যায় মিহি ইত্যাদি বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হওয়ার কারণে এর নানাবিধ ব্যবহার দেখা যায়।চাষাবাদকৃত তুলা গাছ থেকে তুলা বীজ পরিপক্ক হওয়ার পূর্বেই সংগ্রহ করা হয়।বীজ থেকে সংগৃহীত তুলা দিয়ে চিকিৎসার মতো অত্যন্ত সংবেদনশীল কাজসহ সুতা, বালিশ ইত্যাদি প্রস্তুত করতে ব্যবহার করা হয়। তবে তুলা থেকে সরাসরি তৈরিকৃত সুতা খুব একটা মজবুত হয় না।কিন্তু কয়েকটি সুতা একত্রিত করলেই বেশ শক্ত এবং মজবুত সুতা পাওয়া যায়। রঙিন সুতা তৈরিতে রং এর ব্যবহার দেখা যায়। তুলা থেকে তৈরিকৃত সুতা দিয়ে কাপড় বুননসহ নানা ধরনের কাজ করা যায়।বাংলার ঐতিহ্যবাহী ঢাকাই মসলিন তৈরিতেও তুলার ব্যবহার উল্লেখযোগ্য।বিশ্বের প্রায় ৫০ শতাংশ তুলা বস্ত্র তৈরির জন্য ব্যবহূত হয়। বাকি ২৫ শতাংশ কার্পেট, পর্দা, গৃহস্থালির রকমারি জিনিস তৈরির জন্য এবং অবশিষ্ট তুলা শিল্পের বিভিন্ন কাজে ব্যবহূত হয়ে থাকে।
তুলা খুবই হাল্কা বিধায় খুব সহজেই তুলা অনেক দূরে বাতাসের সাহায্যে স্বাধীনভাবে উড়ে যায়। এর ফলে প্রাকৃতিকভাবেই নিজের বংশবিস্তারে সক্ষমতা রয়েছে এটির।খুব দ্রুত বর্ধনশীল গাছ হিসেবে তুলা গাছের সুনাম রয়েছে। কয়েক ধরনের তুলা গাছ প্রকৃতিতে পাওয়া যায়। তন্মধ্যে গুল্মজাতীয় কিছু তুলা গাছ বুনো পরিবেশে বিশ্বব্যাপী গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ও উপ-গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এলাকাসমূহে জন্মায়। বুনো প্রজাতির বেশীরভাগ তুলা গাছই অস্ট্রেলিয়া এবং আফ্রিকা মহাদেশের পর মেক্সিকোতে উৎপন্ন হয়। অধিকাংশ তুলাই অর্থকরী ফসলরূপে জমিতে উৎপাদন করা হয় যা পরবর্তীতে কাপড় তৈরীর উদ্দেশ্যে জমায়েত করা হয়। তুলার খামারগুলো আফ্রিকা, এশিয়া, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়াসহ আমেরিকায় দেখা যায়। বিশ্বব্যাপী হাজার হাজার একর জমি তুলা চাষে ব্যবহার করা হচ্ছে।প্রধান তুলা উৎপাদনকারী দেশ গুলোর মধ্যে চীন, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ভারত ইত্যাদি অন্যতম।প্রাচীন ইতিহাসের ক্ষণস্থায়ী, মোটা কাপড়ের তুলনায় নিত্য-নতুন প্রজাতির তুলা গাছের মাধ্যমে আধুনিক বিশ্বের উপযোগী দীর্ঘস্থায়িত্ব, মসৃণ কাপড় তৈরী হচ্ছে। তুলার নিজস্ব ওজন নিয়ে ২৪ থেকে ২৭ গুণ পানি ধারণ করতে পারে। তুলা গাছের সকল অংশই কোন না কোন কাজে লাগে।
তুলার নানাবিধ বৈশিষ্ট্য-ব্যবহারই “তুলা”কে দিয়েছে তন্তুরাজের স্থান।
লেখা-ইরফান উদ্দীন খান
সিটেক, ১ম বর্ষ।