টেক্সটাইলের ব্যবহার এখন আর শুধু এক বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। দিন যতোই সামনে এগুচ্ছে টেক্সটাইলের প্রয়োগের পরিধি ততই বাড়ছে। চিকিৎসাশাস্ত্র বা মেডিক্যাল টেক্সটাইল টেকনিক্যাল টেক্সটাইলের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা। মূলত টেকনিক্যাল টেক্সটাইল এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানের সমন্বয়ে নতুন একটি ক্ষেত্রের সৃষ্টি হয় যেটি এখন মেডিক্যাল টেক্সটাইল হিসেবেই অধিক পরিচিত। লজ্জা নিবারনের জন্য যেমন টেক্সটাইলের অবদান অপরিসীম তেমনি চিকিৎসাশাস্ত্রেও টেক্সটাইল অভূতপূর্ব অবদান রাখছে।
মেডিক্যাল টেক্সটাইলঃ
টেক্সটাইল সামগ্রী মেডিকেল এবং সার্জিক্যাল কাজে ব্যবহার করে চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নয়ন সাধনের লক্ষে ব্যবহার করাকে মেডিকেল টেক্সটাইল বলা হয়।
মেডিক্যাল টেক্সটাইল তৈরির জন্য যেসব বৈশিষ্ট্যবলি প্রয়োজনঃ
১. নন-এলার্জী এবং নন-কার্সেনোজেনেসিস হতে হবে।
২. বায়োকম্পট্যাবল হতে হবে।
৩. নমনীয়তা,স্থায়িত্বতা ও যেকোনো ধরনের বল সহ্য করার ক্ষমতা থাকতে হবে।
৩. এসিড,ক্ষার,মাইক্রো-অর্গানিজম জাতীয় পদার্থের ভালো প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকতে হবে।
৪.অবশ্যই অবিষাক্ত হতে হবে।
৫. আদ্রতা শোষণ করার ক্ষমতা থাকতে হবে।
মেডিক্যাল টেক্সটাইলে ব্যবহৃত ফাইবারগুলোর শ্রেণীবিভাগঃ
১. প্রাকৃতিক ফাইবার।
(ক) কটন (খ) সিল্ক
২. কৃত্রিম ফাইবার।
(ক) পলি-অ্যামাইড (খ) ভিসকাস
(গ) পলি-এস্টার (ঘ)কার্বন,গ্লাস ইত্যাদি।
টেক্সটাইল সামগ্রী মূলত নিম্নলিখিত চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা পণ্য তৈরিতে ব্যবহৃত হয়ঃ
১. প্লাস্টার,গেজ,ব্যান্ডেজ,ক্ষত ড্রেসিং তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
২. অপারেটিং ড্রেস, সিউচার, ড্রেসিং, অপারেটিং গাউন ইত্যাদি তৈরি করা হয়।
৩. গাউন, মাস্ক, শিশুর ডায়পার, মেডিকেল গ্লাভস, ননওভেন গাউন, সার্জিক্যাল ক্যাপ।
৪. কৃত্রিম কিডনি, কৃত্রিম যকৃত, কৃত্রিম ফুসফুস, কৃত্রিম লিগামেন্ট ইত্যাদি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
মেডিক্যাল টেক্সটাইলে বায়োলজিক্যাল প্রয়োগঃ
১. ভাস্কুলার অ্যানাস্টোমিসিস রিইনফোর্সমেন্ট, বুক প্রচীর বন্ধ, ক্ষত ড্রেসিং।
২. ক্যাথেটার এবং ক্যানুলা কফস,হার্নিয়া জাল।
৩. টিস্যু সিস্টেম সংগ্রহ পাউন্ড, পেসমেকার লিড অ্যাঙ্কর।
৪. পেলভিক অর্গান প্রোল্যাপস সাসপেন্ডার,ত্বক বন্ধ টেপ।
৫. ইলাস্টোমেরিক ডিভাইস শক্তিবৃদ্ধি, মূত্রনালীর অসম্পূর্ণতা ইত্যাদি।
N95 মাস্কঃ
এন: ‘নট রেজিস্ট্যান্ট টু অয়েল’ বোঝাতে এন অক্ষরটি ব্যবহার করা হয়েছে। কারণ এই মাস্কটি কেবল বস্তু কণা প্রতিরোধ করবে, কোনো তরল নয়।
নাইন্টি ফাইভ: এই মাস্ক বাতাসে ভাসমান ৯৫ শতাংশ কণাকে ছাঁকতে পারে বিধায় নামকরণে ‘নাইন্টি ফাইভ’ ব্যবহার করা হয়েছে।
কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে চলা যুদ্ধে স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার এন নাইন্টি ফাইভ মাস্ক। এই যুদ্ধ শেষে মাস্কটির ভূমিকা ঠাই পাবে ইতিহাসের পাতায়।
সার্জিক্যাল মাস্কঃ
১৮৯৭ সালে ডাক্তাররা সর্বপ্রথম সার্জিক্যাল মাস্ক ব্যবহার করা শুরু করেন। কিন্তু এই সার্জিক্যাল মাস্ক বাতাসে ভাসমান কণা ছাঁকার কাজে তখন ব্যবহার হত না। তারা এটি ব্যবহার করতেন যাতে সার্জারি চলাকালে নিজেদের হাঁচি-কাশির ফলে সৃষ্ট কোনো তরলের ফোঁটা রোগীর ক্ষতে না পড়ে।
গ্যাস মাস্কঃ
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় গ্যাস মাস্ক তৈরি করা হয় যা খনির শ্রমিকরাও ব্যবহার শুরু করে। এগুলো পুনরায় ব্যবহার করা গেলেও ফাইবারগ্লাস ফিল্টার এবং ভারী রাবারের বস্তু থাকার কারণে ব্যবহারকারীদের কাছে গ্যাস মাস্ক খুবই অস্বস্তিকর এবং ভারী লাগত।
ব্যক্তিগত সুরক্ষামূলক সামগ্রীঃ
(ইংরেজি: Personal Protective Equipment সংক্ষেপে PPE পিপিই) বা ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী কিছু বিশেষ পরিধেয় পোশাক, সাজ-সরঞ্জাম ও উপকরণের সমষ্টিগত নাম, যা পরিধানকারীকে ঝুঁকি, বিপদ বা স্বাস্থ্যশূল (যেমন রোগজীবাণুর সংক্রমণ) থেকে সুরক্ষা প্রদান করে। যেমন অত্যন্ত উৎকট তীব্র কোলাহলপূর্ণ স্থানে কর্ণরোধনী অর্থাৎ কানের ছিপি কানকে সুরক্ষা প্রদান করে। রাসায়নিক দ্রব্যাদি হাতে ধরার সময় হাতে দস্তানা বা হাতমোজা (গ্লাভ) পরা উচিত। নির্মাণস্থলে কর্মরত নির্মাণকর্মীদের কোনও কিছুর পড়ন্ত ভাঙা টুকরো থেকে মাথাকে রক্ষা করার জন্য শক্ত টুপি বা শিরোস্ত্রাণ পরিধান করতে হয়।
মেডিক্যাল টেক্সটাইলে ন্যানো টেকনোলজির ব্যবহারঃ
আধুনিক মেডিকেল টেক্সটাইলে জীবাণুনাশক ফাইবার তৈরিতে ন্যানো টেকনোলজি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।এক্ষেত্রে মেডিকেল টেক্সটাইলে ব্যবহৃত ফাইবারকে ন্যানো সিনথেটিক ফাইবারের সাথে ট্রিট করে জীবাণুনাশক ফাইবার তৈরি করা হয়।ন্যানো টেকনোলজি এর বদৌলতে প্রাপ্ত জীবাণুনাশক এজেন্ট বিভিন্ন টক্সিক এজেন্ট থেকে মানব শরীরকে প্রটেক্ট করে।ন্যানো প্রযুক্তির বিকাশ গত দশকে এক অভাবনীয় বিপ্লবের সূচনা করেছে।ন্যানো ফাইবার থেকে তৈরি পোশাকগুলো মেডিকেল সেক্টরে আজকাল খুব বেশি পরিমাণে ব্যবহৃত হচ্ছে। যার ফলে চিকিৎসাশাস্ত্রে টেকনিক্যাল টেক্সটাইলের প্রয়োগ ব্যাপকহারে লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
লেখাঃসাজ্জাদুল ইসলাম রাকিব
ক্যাম্পাস প্রতিনিধি – টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার্স সোসাইটি
নিটার (১০ম ব্যাচ)