বাংলাদেশের অর্থনীতিতে টেক্সটাইল সেক্টরের ভূমিকা অতুলনীয়। বর্তমানে বাংলাদেশসহ বিশ্বে যে কয়েকটি শিল্পমাধ্যম দ্রুত বিকাশ লাভ করছে তার মধ্যে অন্যতম টেক্সটাইল শিল্প। বাংলাদেশের বৈদেশিক আয়ের প্রায় ৮০% শতাংশ ভাগ ই আসে বস্ত্র খাত থেকে। পৃথিবীর মোট পোশাকের প্রায় ১০ ভাগই বাংলাদেশ থেকে জোগান দেওয়া হয়। প্রতি বছর প্রায় ২১০০ বিলিয়ন ডলার আয় হয়ে থাকে এই খাত থেকে।পোষাক শিল্পের উপর ৪০ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান। বাংলাদেশে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়াররাই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে “মেইড ইন বাংলাদেশ” ট্যাগ এ ব্র্যান্ডিং শুরু করেছে। বিশ্বের ২য় বৃহত্তম জিন্স ব্র্যান্ড এইচএন্ডএম শুধুমাত্র বাংলাদেশ থেকেই বছরে ১৩০ কোটি মার্কিন ডলার মুল্যের পন্য নিয়ে থাকে। কিন্তু বর্তমানে করোনা সংকটের কারণে টেক্সটাইল সেক্টরে বিপুল বিপাকে পড়েছে। করোনা ভাইরাসের প্রভাবে কাঁচামাল সংকটে পড়েছে দেশের তৈরি পোশাক কারখানাগুলো৷ দেখা দিয়েছে রপ্তানি আদেশ কমে যাওয়ার শঙ্কাও৷ পরিস্থিতি উন্নতি না হলে বিপাকে পড়বে তৈরি পোশাক শিল্প৷আমাদের দেশে ৮৫ ভাগ সুতাই তৈরি হয়,কিন্তু ড্রাইং এর কেমিক্যাল আসে চীন থেকে। করোনা সংকটের কারণে চীনের সাথে সব লেনদেন এখন বন্ধ। পোশাক শিল্পের মালিকরা এখন করেনার কারণে তিন ধরনের সংকট দেখতে পাচ্ছেন৷ সরবরাহ কমে যাওয়ায় কাঁচামালের দাম বাড়ছে৷ যার কারণে বেড়ে গেছে উৎপাদন খরচ৷ কাঁচামাল সঙ্কটে সময়মত পণ্য সরবরাহও করতে পারছেন না তারা৷
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের রপ্তানিতে মন্দাভাব চলছে৷ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে এই খাত থেকে আয় হয়েছে দুই হাজার ১৮৪ কোটি ৭৫ লাখ ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫.৫৩ ভাগ কম। গত অর্থবছরে চীন থেকে এক হাজার ৩৬৩ কোটি ডলারের পণ্য ও কাঁচামাল আমদানি হয়েছে৷ তার মধ্যে সুতা, কাপড় ও অন্যান্য কাঁচামাল রয়েছে ৫০২ কোটি ডলারের৷ সব মিলিয়ে পোশাক খাতের ৪৬ ভাগ কাঁচামাল আসে চীন থেকে৷ করোনা ভাইরাস যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে পোশাক খাতে মারাত্মক প্রভাব পড়বে৷ চীন থেকে জাহাজ না আসায় আমদানি প্রায় ৫০ ভাগ কমে গেছে। বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের বিস্তার যত বাড়ছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগও ততটাই ঘনীভুত হচ্ছে।
বিশেষ করে গার্মেন্টস শিল্পে এরই মধ্যে সংকট দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশে এই শিল্প টিকে আছে ইউরোপ এবং আমেরিকার বাজারের উপর নীর্ভর করে।
কিন্তু সেসব দেশে করোনাভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণের ফলে বহু পশ্চিমা ক্রেতা বাংলাদেশ থেকে তাদের অর্ডার বাতিল কিংবা স্থগিত করছেন।যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক প্রাইমার্ক এক বিবৃতিতে জানিয়েছে তারা ব্রিটেন, ইটালি, ফ্রান্স, স্পেন এবং অস্ট্রিয়াতে তাদের সব স্টোর অনিদ্দির্ষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে। শুধু ব্রিটেনজুড়ে তাদের প্রায় ২০০টি স্টোর রয়েছে।
২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশ তিন হাজার ৪১৩ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে৷ যা মোট রপ্তানির ৮০ ভাগেরও বেশি৷ এই খাতে কোনো সংকট তৈরি হলে তার প্রভাব পড়বে তাই গোটা রপ্তানি বাণিজ্যে৷ এই সংকটাপন্ন পরিস্থিতিতে চীনের বেইজিং বিশ্ব বাজারে মাথা তুলে দাড়িয়েছে করোনার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিস যেমন KN-95 মাস্ক,, পিপিই সহ বিভিন্ন ড্রেস যা কিনা ভাইরাস মোকাবেলায় সক্ষম। তাই আমাদের উচিত পিপিই সহ মাস্ক তৈরি,,এবং বিভিন্ন দেশি বিদেশি বায়ারের সাথে সুন্দর সম্পর্ক গঠন,, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চাহিদা সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া।।
হোসাইন মোহাম্মদ ইমতিয়াজ
সিটেক ১ম বর্ষ