“নীল নবঘনে আষাঢ় গগনে তিল ঠাঁই আর নাহি রে,
ওগো, আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে।
বাদলের ধারা ঝরে ঝরঝর,আউশের ক্ষেত জলে ভরভর,
কালি-মাখা মেঘে ও পারে আঁধার ঘনিছে দেখ্ চাহি রে।
ওগো, আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে”
রবি ঠাকুরের আকুল ব্যাথিত এই ডাক আমরা উপভোগ কম, অমান্য ই বেশি করে থাকি। কারন হতে পারে ভিন্ন ভিন্ন তবে সুরক্ষার ভার আমরা দিয়ে থাকি সর্বাধিক চাহিদার ভার অর্পন করে “ছাতা” নামক এক বস্তুর উপর। রাস্তায় আছেন বা ঘরে বসে বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন বোধ করছেন অথচ ছাতার কথা মনে পড়বে না এটা ভাবা প্রায় অসম্ভব ই বলা চলে। তবে কি ছাতা বৃষ্টির কারনেই ব্যবহার যোগ্য? মোটেই না। তীব্র রোদ মস্তকাংশ গরম করে যখন মস্তিষ্ক গরম করে তখন মনের ভুলেই বের হয়ে যায়, “ইসস, ছাতাটা আনলে ভালো হতো।”
তবে আসুন আজ আমরা ব্যপক চাহিদা সম্পন্ন এই বস্তু সম্পর্কে জেনে নেই এবং খুজে নেই তার দেওয়া সুরক্ষার পিছনে বস্ত্র শিল্পের কারুকার্য।
▪️প্রথমেই জানা যাক একটি ছাতার কয়টি অংশ।
একটি ছাতা মুলত ৫ টি অংশ নিয়ে গঠিতঃ-
১) Umbrella Panels: ছাতার যে অংশে বিভিন্ন রঙের বিভিন্ন ডিজাইনের ফেব্রিক থাকে ঐ অংশকেই ছাতার Umbrella Panels বলা হয়।
২) Umbrella Ribs: ফেব্রিকটিকে ছাতার সাথে সংযুক্ত রাখতে যেই লোহা বা স্টিলের ব্যবহার হয় তাকে Umbrella Ribs বলা হয়।
৩) Umbrella Shafts: Umbrella Ribs কে মজবুত এবং ছাতাটিকে সোজা রাখতে যেই লম্বা স্টিল , এলুমিনিয়াম বা ফাইবার গ্লাসের বস্তু ব্যবহার করা হয় তাকে Umbrella Shafts বলে।
৪) Opening Device: ছাতাটিকে খুলতে যেই বস্তু টেনে উপরে তুলতে হয়( কিছু ছাতায় হ্যান্ডেল এ থাকা সুইচে ক্লিক করলে ছাতা খুলে যায়) তাকে Opening Device বলে
৫) Umbrella Handles: যার সাহায্যে আমরা পুর্ন ছাতাটিকে শক্ত করে ধরে রাখতে পারি তাকে Umbrella Handles বলে।
ছাতার প্রতিটি অংশ প্রয়োজনীয় হলেও যার জন্যে আমরা ছাতা ব্যবহার করি তা হলো ছাতার উপরের অংশ Umbrella Panels যেখানে ফেব্রিক অংশটুক ছড়ানো থাকে। আর এখানে টেক্সটাইলের কাছে ছাতাপ্রেমীরা চিরঋনী হয়ে গেছে। যার উপর বিভিন্ন কারুকার্য আকৃষ্ট করে বিলাসী মানুষদের।
আজ আমরা বিস্তারিত আলোচনা করব ছাতায় ব্যবহৃত ফেব্রিক নিয়ে।
ছাতার ফেব্রিকের জন্য ব্যবহার হয় বেশি কিছু ফাইবার। যেমনঃ নাইলন , পলিয়েস্টার, পিভিসি, EVA, POE, Satin বহুল ব্যবহৃত ফেব্রিক।তবে যেকোন ছাতাতেই যেকোন ফেব্রিক ব্যবহার হয় না। প্রকারভেদ অনুযায়ী ছাতার ফেব্রিক পরিবর্তন হয়ে থাকে। যেমনঃ রোদের থেকে বাচার জন্যে ব্যবহৃত ছাতায় ব্যবহৃত হয় UV ফেব্রিক।
এবার আসা যাক ছাতার ফেব্রিক কীভাবে আমাদের প্রয়োজনীয়তা মিটিয়ে থাকেঃ
ছাতার ফেব্রিক এর কথা মাথায় আসলেই আমাদের মাথায় প্রথমে আসে নাইলন, পলিয়েস্টার বা প্লাস্টিক সংক্রান্ত ফাইবার যা মুলত পানিরোধী ফেব্রিক। কিন্তু আসল কথা আজ জেনে নিন। যেকোন টেকসই ফেব্রিক ই তে পারে ছাতার ফেব্রিক। তবে সেক্ষেত্রে অনেক আঁটসাঁট করে ফেব্রিকটি তৈরি করতে হয়। সুতি কাপড় গুলো অনেক আঁটসাঁট করে তৈরি করা হলে তা ছাতার উপরের পৃষ্ঠে একটি টান সৃষ্টি করে যাকে পদার্থবিজ্ঞানের ভাষায় “Surface Tension” বলে যার ফলে পানি প্রবেশের সকল পথ অবরুদ্ধ থাকে।এই কারনেই ভিতর থেকে সেই ফেব্রিকে আপনি চাপ প্রয়োগ করলে পানি কম বেশি প্রবেশের অনুভব করতে পারবেন। তবে নাইলন, পলিয়েস্টার বা প্লাস্টিক সংক্রান্ত ফাইবার নিয়ে তৈরি উচ্চ মানের ছাতার ফেব্রিকে এই পৃষ্ঠ টানের ব্যবহার এর প্রয়োজন হয় না।
ছাতার পানি প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্যে কিছু কোম্পানি ফেব্রিকের উপর সিলিকনের একটি স্প্রে দিয়ে থাকে যা আলাদা একটি স্তর সৃষ্টি করে থাকে। এতে পানি ভিতরে প্রবেশের পরিবর্তে দ্রুত বাইরে গড়িয়ে পড়ে যায়। তবে ব্যয় এবং তৈরি জটিলতা কমাতে নাইলন এবং পলিএস্টার এদিক থেকে চাহিদার উপরের পর্যায়ে। নাইলন স্বরুপ ফেব্রিকের নিজস্ব পানি প্রতিরোধী ক্ষমতা থাকায় অতিরিক্ত স্তর দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না।
ছাতার জন্যে ব্যবহৃত যেকোন ফেব্রিকের মূল আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো শুষ্ক বা উচ্চ আর্দ্র যে কোনো আবহাওয়ায় এরা কুঁচকানো সহ্য করতে পারে এবং সর্বদা মর্সৃন থাকে। এসব ফেব্রিকের প্যারাসল গুলো তীব্র বাতাস বা ভারি বর্ষনেও স্বকীয়তা বজায় রাখে যা একটি পানি প্রতিরোধী বস্তুর অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
পানিরোধী ছাতা গুলোতে ইপিটিএফই দিয়ে তৈরি একটি অতিরিক্ত স্তরিত ঝিল্লি রয়েছে যা টেলফ্লন (প্রসারিত পলিটেরাফ্লুরোথাইলিন) নামেও পরিচিত এক প্রকার ফেব্রিক ব্যবহার করা হয় যা ছাতার ছাউনিটিকে রক্ষা করে এবং যা আর্দ্রতায় না ভিজে ফেব্রিকটি চকচকে সুন্দর রাখতে সহায়তা করে।
ছাতার আঁটসাঁট স্তরটি এতটাই মজবুত থাকে যে ছাতায় উপরের অংশে অনুভব করা টেলফ্লনের সুরক্ষা ঝিল্লিতে থাকা ছোট ছোট ছিদ্র দিয়েও এক ফোটা পানি প্রবেশ করতে পারে না।তারপরেও একটি ছাতার ফেব্রিককে তেল এবং অন্যান্য রাসায়নিকের মাধ্যমে ধ্বংস থেকে রক্ষা করতে নির্মাতারা টেফ্লনগুলিতে পলিউরেথেনের একটি অতিরিক্ত স্তরও ব্যবহার করে।
টেফলনের এই ফেব্রিকে তেল এবং ফাউলিংয়ের জন্য পানিরোধী একটি বৈশিষ্ট্য থাকে এবং এর মধ্যে যোগ করা উপাদান একে আরও সুন্দর করে তোলে। টেফলনের ফেব্রিকে আলাদা আরেক বৈষিষ্ট্য রয়েছে যা হলো “Anti-staining” যা ছাতাগুলিকে দীর্ঘ সময়ের জন্য পরিষ্কার এবং শুকনো রাখতে পারে।
আর ছাতার রোদ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে ব্যবহার করা হয় লিনেন, কটন এবং হ্যাম্প বা সিন্থেটিস ফাইবার যেমন নাইলন এবং পলিয়েস্টার জাতীয় ফাইবার যেগুলোয় ইউভি ব্লক করার দুর্দান্ত বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যদিও সব ধরনের ফাইবার ই এই বৈশিষ্ট্য ধারন করে থাকে। কিন্তু মজবুত বাধানো বাধানো এবং যেকোন পানিরোধী স্তর প্রদানের ফলে এই ফাইবার গুলো পানিরোধী ক্ষমতা অন্যান্য দের তুলনায় বেশি থাকাই এই ফাইবার গুলো বেশি ব্যবহৃত হয় যার ফলে ছাতা UV এবং পানিপ্রতিরোধী হয়ে উঠে। এই ফাইবার গুলো সূর্য থেকে আসা UV রশ্মি গুলো নিজের মিধ্যে শোষণ করে নেয় এবং তা ধরে রাখে। এতে ছাতার অভ্যন্তরে থাকা মানুষটি প্রচণ্ড গরমেও ছাতার নিচে ছায়ায় আরাম বোধ করে থাকেন। ফাইবারগুলোতে ব্যবহৃত টাইটেনিয়াম অক্সাইড এর প্রলেপ ব্যবহারের পাশাপাশি ন্যনো ডায়মন্ড পার্টিকেল বিজ্ঞানের ব্যবহার করে নির্মাতারা UV শোষণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে থাকেন।রোদ এবং UV প্রতিরোধী হওয়ায় এই ছাতা গুলো বিশেষ করে গলফ প্লেয়ার, বিভিন্ন দেশের বীচে বিশ্রামের জন্য মানুষেরা ব্যবহার করে থাকেন।
ছাতা তৈরির মুল কারন নিজেকে রোদ বৃষ্টি থেকে বাচানো হলেও আজকাল বিজ্ঞাপন প্রচারনাসহ নানা রকম ফ্যাশন শো এবং বিলাসীতার পণ্য হিসেবে ছাতাগুলো আজ বিপুল চাহিদারও উর্ধে। পাশাপাশি ছাতার উপরে কারুকার্য এবং বিভিন্ন ডিজাইন বিলাসী মনকে আরও আকৃষ্ট করে থাকে।
তথ্যসূত্রঃ Humbrella dot com, Google
Writer Information:
Sabbir Alam Shuvo
Team Member
Textile Engineers Society, DWMTEC