জামদানী শব্দটি এসেছে ফরাসি শব্দ থেকে।এ শাড়ি যারা তৈরি করেন তাদের বলা হয় জামদানী শিল্পী।রুপগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ের বাতাসে আছে অবাক জাদু।সেই জাদুর পরশেই তৈরী হয়েছে বিশ্ব মাতানো জামদানী।
জামদানী তাঁত ও তাঁতী পরিবারের সংখ্যা:জামদানী শিল্পীদের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে।১৯৭৫ সালে প্রায় ১লাখ ৩০হাজার জামদানী তাঁতি ছিল।বর্তমানে প্রায় ৬০হাজার লোক এ শিল্পের সংগে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে জড়িত।পরিবারের সংখ্যার বিচারে বর্তমানে মাত্র দেড় হাজার পরিবার এ শিল্পের সাথে জড়িত।
রুপগঞ্জের শীতলক্ষ্যার পাড়ের মসলিন জামানা এখন নস্টালজিয়ার আকর।শীতলক্ষ্যার পানি,আবহাওয়া ও জলবায়ূর অদ্ভুত রসায়নই বিস্ময়কর কাপড় তৈরির অনুঘটন রয়েছে।বিভিন্ন ধরনের উৎসবকে সামনে রেখে নোয়াপাড়া রুপগঞ্জের জামদানী হাটগুলোতে তাঁতিদের কর্মব্যস্ততা বেড়ে যেতো।
নোয়াপাড়ার রুপগঞ্জের চার ধরনের জামদানী শাড়ি তৈরি হতে দেখা যায়।সেগুলো হলো ফুলসিল্ক,হাফসিল্ক,ফুলকটন,হাফকটন ও নাইলন।
জামিনদানী হাট বা আড়ং বলে একসময় রুপগঞ্জকেই বোঝানো হতো।সে সময় রুপগঞ্জের নোয়াপাড়ায় বসতো জামদানী হাট।ডেমরার শীতলক্ষ্যা নদীর তীরের বিসিক শিল্প নগরীতেও হাট বসতো।জামদানী তাঁতি ও তাঁতের অবস্থা রূপসী ডেমরা তারাবো রুপগঞ্জ হয়ে একেবারে নরসিংদী পর্যন্ত বিস্তৃতি।
নোয়াপাড়া রুপগঞ্জের হাট বসতো সপ্তাহে দুইদিন বুধবার আর শুক্রবার ভোর চার টায়।ঘন্টা দুয়েকের মধ্যই এই হাট শেষ হয়ে যেতো।হাটটি বসতো মূলত পাইকারদের জন্য।দূর দূরান্তের ও স্থানীয় জামদানীর ব্যবসায়ীরা রাত তিনটার পর থেকেই হাটে অবস্থান নিতে থাকতেন।ফজরের নামাজের পরপর ই রুপগঞ্জের ডেমরা ও তারাবোর জামদানী তাঁতীরা পুরো সপ্তাহের তৈরী করা শাড়ি নিয়ে হাটে আসতে থাকতেন।পাশাপাশি সাধারণ ক্রেতারাও আসতে থাকতেন সেই সকাল থেকেই।প্রতি হাটে এখানে প্রায় ৬ থেকে ৮ হাজার শাড়ি বিক্রি হতো।
এ ধরনের হাটে নানা ধরনের দালালের পদচারণা বেশি ছিল তাই সেখান থেকে জামদানী শাড়ি কিনতে হলে জামদানী সম্পর্কে কিছুটা অভিজ্ঞ ও সাবধানতা অবলম্বন করতে হতো।
জামদানী শাড়ি ছাড়াও সেই হাটে পাওয়া যেত জামদানী সেলোয়ার কামিজ,ফতুয়া,পাঞ্জাবীর কাপড় ও ওয়ানপিছ।
৬০০ টাকা থেকে শুরু করে ৪০হাজার টাকা দামের শাড়িও কিনতে পাওয়া যেতো সেই হাটে।একটু ঘুড়াঘুড়ি করে খুচরা ও অনেক কম দামের মধ্যে জামদানী কিনতে পাওয়া যেতো।তবে সেটা সম্পূর্ন নির্ভর করে জামদানীর ডিজাইন ও কাজ ভেদে।
১৯৯৭ সাল থেকে জামদানী শিল্পের সংকটের সূচনা।বিভিন্ন ধরনের অনিয়মের জন্য ওই বছরই বন্ধ হয়ে যায় জামদানী রপ্তানী।আর তখন থেকেই ধ্বংসের মুখে দাঁড়ায় এই শিল্প।কিন্তু বর্তমানে দেশে ও দেশের বাহিরে এই শিল্পের কদর আবার বাড়তে শুরু করেছে।তাই এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে সরকারি উদ্যোগ গ্রহন প্রয়োজন।
Nahida Akter Tonima
Department of Textile Engineering
BGMEA University of Fashion & Technology(BUFT)