ছোটবেলা থেকেই আমরা দুধের গুনাবলি সম্পর্কে জেনে আসছি।কিন্তু এই দুধ যে ফ্যাশন দুনিয়াকেও প্রভাবিত করবে তা কি কারো জানা ছিল?কেউ কি কখনো ভেবেছে এই দুধ থেকেও কাপড় তৈরি হয়?শুনতে অবাক লাগতে পারে কিন্তু এটাই সত্যি।
ইতিহাস যা বলছে :
অতীতেও দুধ থেকে কাপড় তৈরির কথা উল্লেখ আছে।প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানরা দুধ দিয়ে ফাইবার তৈরির চেষ্টা করেছিল।কিন্তু সেই ফাইবার গুলো খুব শক্ত হওয়ায় ভেঙে যেতো,তাই ব্যবহার সম্ভব হতো না।দুধ থেকে ফাইবার তৈরির ধারণা সারাবিশ্বে ছড়িয়ে যাওয়ার পর 1930 সালে ইতালিয় রসায়নবিদ কর্তৃক এটি প্রথম উদ্ভাবিত হয়।এই ফাইবারগুলো বেশ নরম ছিল অনেকটা পশমের মতো।প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পশম পাওয়া দুষ্প্রাপ্য হয়ে গিয়েছিল তাই দুধের তৈরি ফাইবার মিশ্রিত ফ্যাব্রিক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে শার্ট, টাই ও অন্যান্য পোশাকের বিকল্প হয়ে উঠেছিল।পরবর্তী 1960 সালের মধ্যে বাজারে নাইলনের মত সস্তা এবং সহজেই উৎপাদনযোগ্য সিনথেটিক্স আসায় মিল্ক ফাইবার এর জনপ্রিয়তা সৃষ্টির আগেই হারিয়ে যায়।
একবিংশ শতাব্দীতে মিল্ক ফাইবার :
ডিজাইনার ও মাইক্রোবায়োলজিস্ট আঙ্কে ডোমাস্কে ব্যবহারের অযোগ্য দুধ থেকে কাপড় বোনার সুতা তৈরি করছেন।তিনি বলেন,’এটা এমন একটি আইডিয়া যা ভবিষ্যৎ বস্ত্রশিল্পকে পুরোপুরি বদলে দেবার ক্ষমতা রাখে।কাপড় তৈরি সুতার বিশেষত্ব হলো পানিতে থাকলে তা গলবে না।আর সাধারণ দৃষ্টিতে তো মিল্ক ফাইবার অবশ্যই পানিতে গলবে।শুধুমাত্র রান্নাঘরে নয় মাস এক্সপেরিমেন্ট করেই এমন একটি ফাইবার তৈরি করার ফরমুলা বের করে ফেলেছেন তিনি।যা পানিতেও গলবে না। কিউ মিল্ক কোম্পানির সিইও আঙ্কে আরো বলেন,’এই কাপড়ে দুধের গন্ধ পাবেন না।কিন্তু মজার কথা আজ পর্যন্ত সবাই একে শুকে দেখেন,দুধের গন্ধ আছে কিনা।অবশ্যই কোন গন্ধ নেই।ফাইবারটি পশম কিংবা রেশমের মতোই একটা প্রোটিন ফাইবার।যেহেতু উপরিভাগ খুবই মসৃণ তাই স্পর্শের অনুভূতিটা অনেকাংশে সিল্কের মতোই।‘
যেভাবে তৈরি হচ্ছে মিল্ক ফাইবার:
দুধের প্রোটিন থেকেই এই ফাইবার তৈরি হয়।প্রথমে দুধ থেকে পানি কে সম্পূর্ণরূপে আলাদা করা হয়।তারপর পানিবিহীন অংশ থেকে সর ছেকে ফেলা হয়।এরপর বায়োইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে পরিশিষ্ট অংশকে স্পিনিংযোগ্য প্রোটিন তন্তুতে পরিণত করা হয়।আর এই তন্তু থেকেই পরবর্তীতে ওয়েট স্পিনিং এর মাধ্যমে উচ্চমানের ফাইবার পাওয়া যায়।ফাইবারের স্থায়িত্ব বৃদ্ধি করতে স্পিনিং এর সময় মাইক্রো জিংক ব্যবহার করা হয়।৩ পাউন্ডের ফাইবার তৈরি করতে 100 পাউন্ড দুধের প্রয়োজন হয়।এই ফাইবারকে অন্য ফাইবার যেমন:উল,কটোন এর সাথে ব্লেন্ডিং করেও উন্নতমানের ফাইবার করা সম্ভব।
মিল্ক ফাইবারের সুবিধা :
মিল্ক ফাইবার renewable, bio-gradable ও eco-friendly। তাই বলাই যায় এটা একটি গ্রীন প্রোডাক্ট।দুধের PH ও মানব দেহের স্কিনের PH প্রায় সমান এবং দুধে থাকা ১৮ প্রকার অ্যামাইনো এসিড যা স্কিনের যত্ন নেয়ার কাজ করে থাকে।মানুষের চামড়াকে সতেজ করে ও এলার্জি প্রতিরোধ করে।ফাইবারে থাকা মাইক্রো জিংক যা ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ করে।এই ফাইবারের পানি পরিবহন ও বায়ু ব্যাপ্তিযোগ্যতা ভালো,তাই পরিধানেও আরামদায়ক।
ব্যবহার:
ব্যাকটিরিওস্ট্যাটিক ও স্বাস্থ্যকর হওয়ায় এই ফাইবার বাচ্চাদের পোশাক ও উন্নতমানের আন্ডারওয়্যারে বেশি ব্যবহৃত হয়।এছাড়াও টি-শার্ট, সোয়েটার, স্পোর্টসওয়্যার,লেডিস আউটারওয়্যারে ব্যবহৃত হয়।’
এই ফাইবারের ভবিষ্যৎ :
সাম্প্রতিক গবেষণায় প্রকাশ পেয়েছে যে উৎপাদিত কাপড়গুলোতে প্রচুর পরিমাণে মাইক্রোপ্লাস্টিক থাকে।যা উৎপাদন ও ধোয়ার সময় জলাশয়ের পানিকে দূষণ করে।মিল্ক ফাইবার গ্রীন প্রোডাক্ট হওয়ায় উৎপাদনকারীরা পোশাক ও আনুষঙ্গিকগুলোর জন্য মিল্ক ফাইবারের দিকেই ঝুঁকছে।বর্তমানে জার্মানির কিউমিল্ক ও সুইজারল্যান্ডের সুইকোফিলের মতো কোম্পানিগুলো এই ফাইবারের জনপ্রিয়তা দেখে এর উৎপাদন কৌশলকে আরো নতুনত্ব ও পরিমার্জিত করার চেষ্টা করছে।এই ফাইবারের তৈরি পোশাক ব্যয়বহুল তাই অধিকাংশ গ্রাহকের পক্ষে এই ফাইবারের তৈরিকৃত পোশাক ব্যবহার সম্ভব হচ্ছে না।
একসময় অন্যান্য ফাইবারের তৈরি প্রোডাক্টগুলোও ব্যয়বহুল ছিল।সময়ের সাথে সাথে সেসব পন্যও আজ মানুষের হাতের নাগালে।তাই আশা করাই যায় মিল্ক ফাইবারও নিজের প্রাপ্যতা খুব শীঘ্রই খুঁজে নিবে।
সূত্র:milkgenomics
ডয়েচ ভেলে
FIBRE2FASHION
Writer Information :
Bipro Brota Roy
Ahsanullah University of Science and Technology
Department of Textile Engineering
(Batch-40)
1st year 2nd Semester