কাপড় তৈরির জন্য সুতা প্রয়োজন। আর সুতা তৈরিতে কাঁচামাল হিসেবে যে সব তন্তু বা আঁশ ব্যবহৃত হয় সেগুলোকে টেক্সটাইল ফাইবার বলে। বর্তমানে বস্ত্র শিল্পে অনেক ধরনের ফাইবার ব্যাবহার করা হচ্ছে। এদের মধ্যে কিছু ফাইবার প্রকৃতিগত ভাবে পাওয়া যায় এবং কাপড় আবিষ্কারের প্রথম থেকেই সেগুলো ব্যবহার হয়ে আসছে। প্রাকৃতিক ফাইবার গুলোর মধ্যে সর্বাধিক ব্যবহৃত ফাইবার হচ্ছে কটন বা তুলা।এটিকে প্রাকৃতিক সেলুলোজ ফাইবারও বলা হয়।
আরবি শব্দ থেকে কটন (cotton) শব্দের আবির্ভাব। ইতিহাসের পাতা উল্টালে কটন ফাইবারের যে ঐতিহ্য চোখে পড়ে তা অত্যন্ত সমৃদ্ধ ও প্রাচীন। তুলা চাষের সর্বপ্রথম সময় সম্পর্কে বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও উদ্ভিদবিজ্ঞানীদের মিলিত মত থেকে ধারনা নেয়া যায় যে, খৃষ্টপূর্ব ৩,০০০ বছর পূর্বে ভারতীয় উপমহাদেশে প্রথম তুলা চাষ শুরু হয়। এছাড়াও দক্ষিণ আমেরিকার মেক্সিকোতে খৃস্টপূর্ব ৩,৫০০ বছর এবং খৃষ্টপূর্ব ৫০০ বছর হতে আমেরিকায় তুলার চাষ প্রচলিত ছিল।
আধুনিক সভ্যতার তীর্থভূমি বলে পরিচিত ব্রিটেন কিন্তু এ ব্যাপারে পিছিয়ে ছিল। পরবর্তীতে শিল্প বিপ্লবের পর ১,৩০০ শতাব্দীর গোঁড়া থেকে অর্থাৎ আজ থেকে প্রায় ৭০০ বছর পূর্বে ব্রিটেনে প্রথম তুলার ব্যাবহার শুরু হয়।
শীর্ষ-১০ তুলা উৎপাদনকারী দেশ,
(৪৮০ পাউন্ড = ১ বেল) গণচীন৩৩.০ মিলিয়ন বেল ভারত২৭.০ মিলিয়ন বেল যুক্তরাষ্ট্র১৮.০ মিলিয়ন বেল পাকিস্তান১০.৩ মিলিয়ন বেল ব্রাজিল৯.৩ মিলিয়ন বেল উজবেকিস্তান৪.৬ মিলিয়ন বেল অস্ট্রেলিয়া৪.২ মিলিয়ন বেল তুরস্ক২.৮ মিলিয়ন বেল তুর্কমেনিস্তান১.৬ মিলিয়ন বেল গ্রিস১.৪ মিলিয়ন বেল
বর্তমানে তুলার বৈশ্বিক উৎপাদন বার্ষিক ২৫ মিলিয়ন টন যা বিশ্বের তুলা আবাদের উপযোগী ভূমির মাত্র আড়াই শতাংশ ব্যবহারে উৎপাদিত। ২০০৯ সালের তথ্য মোতাবেক, চীন বিশ্বের সর্ববৃহৎ তুলা উৎপাদনকারী দেশের মর্যাদা পেয়েছে। এরপরই রয়েছে ভারত। দেশ দু’টি যথাক্রমে ৩৪ মিলিয়ন বেল ও ২৪ মিলিয়ন বেল তুলা উৎপাদন করেছে। কিন্তু উৎপাদিত তুলার অধিকাংশই অভ্যন্তরীণ শিল্প-প্রতিষ্ঠানে ব্যবহার করা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অনেক বছর যাবৎ সর্ববৃহৎ রপ্তানীকারক দেশ হিসেবে পরিগণিত।দেশটি ৪.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার উপার্জন করেছিল। আফ্রিকা মহাদেশ থেকে ২.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার তুলা রপ্তানী করে।
বাংলাদেশে তুলার চাষঃ
মসলিনের সূক্ষ্ম আঁশ ছাড়া আর যে প্রকার তুলা বাংলাদেশে আগে থেকে উৎপন্ন হত তা “গোসিপিয়াম-আরবোরিয়াম” শ্রেণিভুক্ত। সাধারণত একে কুমিল্লা কটন নামে অভিহিত করা হতো। এই তুলার তিনটি বাণিজ্যিক নাম প্রচলিত যথা, লাংগুনিয়া, দোলা ও চাকুরিয়া। এই কুমিল্লা কটনের চাষ এখনো কুমিল্লা ও চট্টগ্রামের পার্বত্য এলাকায় প্রচলিত আছে। এই উৎপাদিত তুলার গুনগত মান খুবই নিন্ম শ্রেণীর এবং আঁশের দৈর্ঘ্য আধা ইঞ্চির উপরে নয়। ফলে এগুলো থেকে মিল পদ্ধতিতে কোন সুতা তৈরি হত না। দেশীয় প্রথায় চরকায় সুতা কাটা ও লেপ-তোষকের জন্য এগুলো বেশি ব্যবহৃত হতো।
বাংলাদেশে বর্তমানে বাণিজ্যিক পর্যায়ে যে তুলা উৎপাদিত হচ্ছে তা মূলত: আমেরিকান। শুরুতে আমেরিকা থেকে বীজ আমদানি করে আমাদের দেশে নিয়মিত তুলা চাষ পদ্ধতি চালু করা হয়েছিল। পরবর্তীতে বাংলাদেশে তুলা উন্নয়ন বোর্ড বিভিন্ন দেশের তুলার বীজ এনে স্থানীয়ভাবে শংকরিত করে বিভিন্ন জাতের তুলা বীজ উৎপন্ন করেছে। দেশে উৎপাদিত তুলা বর্তমানে ফলন ও গুনগত মানের দিক থেকে বেশ উন্নতি সাধন করেছে। এসব তুলার আঁশের দৈর্ঘ্য, রং এবং পরিপক্বতা বেশ ভাল। মেহেরপুর, জীবন নগর প্রভৃতি কেন্দ্রের দীর্ঘ আঁশের তুলা ব্যবহার করে অন্য কোন সংমিশ্রণ ছাড়াই ৬০স কাউন্ট পর্যন্ত সুতা তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে। ফলে বাংলাদেশে তুলা উৎপাদনের পরিমাণ দিন দিন বেশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বিশ্বব্যাপী তুলার ব্যাপক ব্যাবহার শুরু হয় আঁশ থেকে যান্ত্রিক ভাবে সুতা তৈরির পদ্ধতি আবিষ্কারের পর থেকে। শুধু তাই নয় যান্ত্রিক পদ্ধতিতে সুতা ও কাপড় তৈরির উত্তরোত্তর উন্নত প্রযুক্তিসহ কাপড়ের রং, ছাপা ও ফিনিশিং প্রক্রিয়াগুলোর আধুনিক পদ্ধতি উদ্ভাবনের ফলে কাপড়ের সর্বমুখী ব্যাবহার এতোই অবধারিত হয়ে পড়েছে যে, আজকের উন্নত বিশ্বে তুলার ব্যাবহার ব্যতিরেকে মানব কল্যাণের কোন দিককে বিচ্ছিন্ন করে ভাবা যায় না।ফলে বর্তমানে পৃথিবীর সকল দেশের, সকল শ্রেণীর মানুষ তুলা দিয়ে তৈরি কাপড় ও তুলাজাত অন্যান্য পণ্য ব্যবহার করে আসছেন।
প্রকারভেদঃ
বাণিজ্যিকভাবে চারটি প্রজাতির তুলা রয়েছে :
১. Gossypium hirsutum – উর্ধ্বভূমি তুলা। মধ্য আমেরিকা, মেক্সিকো, ক্যারিবিয়ান এবং দক্ষিণ ফ্লোরিডা অঞ্চলে পাওয়া যায় (বিশ্বে উৎপাদন ৯০%)
২. Gossypium barbadense – অতিরিক্ত দীর্ঘ তুলা হিসাবে পরিচিত। গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চল থেকে দক্ষিণ আমেরিকার স্থানীয় কিছু এলাকায় উৎপন্ন হয়। ( বিশ্বে উৎপাদন ৮%)
৩. Gossypium arboreum – গাছের তুলা। ভারত এবং পাকিস্তানের বিভিন্ন এলাকায় চাষ হয়। ( বিশ্বে উৎপাদন ২% এরও কম)
৪. Gossypium herbaceum – লেভান্ট সুতি, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং আরব উপদ্বীপে পাওয়া যায় ( বিশ্বে উৎপাদন ২% এরও কম)
তুলা ফাইবারগুলো সাদা, বাদামী, গোলাপী এবং সবুজ রঙের ও হয়ে থাকে।
কটনের বৈশিষ্ট্যঃ
১.আরামদায়ক
২.ভাল শোষণ ক্ষমতা
৩.রঙ ধারণ ক্ষমতা বেশি
৪.ভালমত প্রিন্ট করা যায়
৫.সেলাই করা সহজ ইত্যাদি
কটনের অ্যাপ্লিকেশনঃ
সুতির প্রধান শেষ ব্যবহারগুলোর মধ্যে রয়েছে:
১.পোশাক
ব্লাউজ, শার্ট, বাচ্চাদের পোশাক, সাঁতারের পোশাক, স্যুট, জ্যাকেট, প্যান্ট, সোয়েটার, হোসিয়ারি ইত্যাদি।
২.হোম ফ্যাশন
পর্দা, চাদর, তোয়ালে, টেবিল কাপড়, টেবিল ম্যাট, ন্যাপকিনস ইত্যাদি।
৩.প্রযুক্তিগত অ্যাপ্লিকেশন।
৪.চিকিৎসা এবং প্রসাধনী অ্যাপ্লিকেশন
ব্যান্ডেজ, ক্ষত প্লাস্টার ইত্যাদি।
1 Kg Cotton Fiber price- $1.90/kg
1 kg Cotton Yarn price-$2.80/kg ( 30/1 Ne Carded Yarn)
খাদ্য এবং আশ্রয় সহ দীর্ঘ, পোশাক মানুষের অন্যতম প্রধান প্রয়োজনীয়তা। তুলা, কৃষি ফসলের মধ্যে অনন্য, খাদ্য এবং ফাইবার সরবরাহ করে। তুলা প্রধান প্রাকৃতিক ফাইবার ফসল, এবং প্রাণিসম্পদের খাবারের জন্য ভোজ্যতেল এবং বীজ দ্বারা উৎপাদিত পণ্য সরবরাহ করে।
সূত্রঃ researchgate
Wikipedia & textile fiber(book)
Writer Information :
Name: MD.Barkatullah
Batch:40
Semester: 1st year, 2nd semester
Campus: Ahsanullah University of science and technology