বাংলাদেশের লোকায়ত শিল্পের মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সবচেয়ে গর্বের জিনিস তাঁতশিল্প ও তাঁতবস্ত্র। বাংলাদেশ বস্ত্র বয়ন বা কাপড় বোনার জন্য সুবিদিত। মসলিন থেকে জামদানী কিংবা টাঙ্গাইল শাড়ি এর উদাহরণ। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তের তাঁত প্রধান অঞ্চলে ছড়িয়ে থাকা কিছু গুরুত্বপূর্ণ হাট আবহমান কাল থেকে তাঁতবস্ত্র বিপণনের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত। প্রতিটি হাটের রয়েছে জন্মইতিহাস। বানিজ্যিক ক্রিয়াকর্মে রয়েছে নিজস্ব রীতিনীতি, সংস্কৃতি।
তেমনি সুপ্রাচীন কাল থেকে ফুলতলা হাট দেশের ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও সংস্কৃতিকে ধারণ করে আসছে।
ভৈরব নদের তীরে খুলনা জেলার ফুলতলা উপজেলার সদরে এই প্রাচীন হাটটি অবস্থিত। স্থানীয়ভাবে গামছা বিক্রির জন্য বিখ্যাত এই প্রাচীন হাটটি। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ক্রেতা বিক্রেতারা আসে রংবেরঙের গামছা ক্রয় করতে। স্থল ও নদীপথে যোগাযোগ থাকায় ব্যবসায়ীরা দুই পথেই মালামাল আনা-নেওয়ার সুযোগ পান। গামছা বিক্রি হয় থান হিসেবে। চারটি গামছায় এক থান হিসেবে বিবেচিত হয়।
গামছা বিপননের প্রধান কেন্দ্র ফুলতলা হাট বসে সপ্তাহে রবিবার ও বুধবার। প্রতি হাটবারে সমাগম হয় লক্ষাধিক মানুষের। ক্রেতা–বিক্রেতাদের এ মিলনমেলা বিশাল কর্মযজ্ঞে মুখরিত হয়ে ওঠে।
ফুলতলা হাটের আয়তন প্রায় ১২ একর। এই হাটের মধ্যে ২২টি ছোট ছোট হাট রয়েছে। কিছু কিছু মহাজনেরা তাদের স্থায়ী ‘গদি’ ঘর নির্মান করে রেখেছেন। প্রতি হাটবারে তারা ব্যাপক পরিমানে গামছা কিনে মজুদ করে রাখে। পরে সুবিধা মত দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গিয়ে এইগুলা বিক্রি করে থাকে।
ফুলতলা হাটে প্রায় সব পণ্যই পাওয়া যায়। স্থানীয়ভাবে গামছা তৈরি হয় বলে কাপড়ের মধ্যে মূলত গামছাই পাওয়া যায় বেশি। ধারনা করা হয় এই হাটের বয়স ১২০ বছরের অধিক। বাংলাদেশে এককভাবে গামছা বিক্রির সবচেয়ে বড় হাট হিসেবে পরিচিত এই ঐতিহ্যবাহী হাটটি। মূলত নব্বইয়ের দশক থেকে খুলনা এবং যশোরের কিছু কিছু এলাকায় তাঁতপণ্য হিসেবে শাড়ি, লুঙ্গি, ধুতির উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেলে ওইসব অঞ্চলের তাঁতিরা অধিক পরিমানে গামছা উৎপাদন শুরু করে। এর ফলে ফুলতলা ধিরে ধিরে গামছা বিক্রির হাট হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
২০১৮ সালে এই হাটের ইজারামূল্য ছিল ৭০ লাখ টাকা। এর ৩৫ শতাংশ হাটের উন্নয়নে খরচ করা হয়। কয়েক বছর আগে জাইকা প্রজেক্টের আওতায় হাটের রাস্তাঘাট ও চাঁদনির উন্নয়ন ও পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থা ভালো হয়েছে।
বর্তমানে খুলনা অঞ্চল তাঁতশিল্পের নিরিখে তেমন গুরুত্বপূর্ণ না হলেও এই অঞ্চলের তাঁতশিল্পের অতীত ইতিহাস বেশ উজ্জ্বল। খুলনার জেলার গাড়াখোলা, আলকা, দামদর, জামিরা, যুগনীপাশা, পাবলা প্রভৃতি গ্রাম বর্তমানে এই অঞ্চলের তাঁতশিল্পের ঐতিহ্য ও স্মৃতি বহন করে চলেছে।
Raizul Kabir Novo
Department of Textile Engineering
BGMEA University of Fashion & Technology(BUFT)