হযরত মুহাম্মদ ( সা . ) একবার মক্কা থেকে মদিনা যাচ্ছিলেন । তখন আততায়ীদের উপস্থিতি টের পেয়ে তিনি পাহাড়ের এক গুহার মধ্যে আশ্রয় নেন । কিছুক্ষণের মধ্যেই গুহার মুখে মাকড়সার জাল বুনে সে গুহার মুখ বন্ধ করে দেয় । আততায়ীরা যখন সেখানে উপস্থিত হয় তখন তারা দেখতে পায় গুহার প্রবেশপথে মাকড়সার জাল বিস্তৃত হয়ে আছে । তারা এ দেখে নিশ্চিত হয় যে , দু’একদিনের মধ্যে হয়তাে এ গুহার মধ্যে কেউ প্রবেশ করেনি । এই ভেবে তারা চলে যায় এবং আল্লাহর রহমতে তিনিও প্রাণে বেঁচে যান । মজার ব্যাপার হচ্ছে , সব মাকড়সা জাল বােনে না । কিছু মাকড়সা তাদের শিকার ধাওয়া করে ধরে । কিছু কিছু আবার আগে থেকে তৈরী করে রাখা আঠালাে সুতার জাল সুবিধামতাে শিকারের ওপর ছুড়ে ফেলে কুপােকাত করে। এত জাল মাকড়সা পায় কোথায় ? মাকড়সার সেই বিশেষ রেশমের গ্রন্থি আর এরা একবার তৈরী করা জাল খেয়ে ফেলে এবং পরবর্তীতে পুনরায় একে রিসাইকেল করতে পারে। সাধারণ একটা মাকড়সার জালই কিন্তু সেদিন এক মহামানবের প্রাণ বাঁচানাের ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছিল । এ জালের যে অন্য রকম এক মহাশক্তি আছে তার প্রমাণ পাওয়া যায় স্কটল্যান্ডের অধিপতি রবার্ট ব্রুসের রাজ্য পুনরুদ্ধারের কাহিনী থেকে । শত্রুর হাতে তিনি যখন বারবার পরাজিত হয়ে হতাশ হয়ে পড়েছিলেন , তখন এক ক্ষুদ্র মাকড়সার বারবার ছিড়ে যাওয়া জাল নতুন করে বােনার সফলতা থেকে তিনি পেয়েছিলেন অধ্যবসায়ের শিক্ষা । অবশেষে তিনি শত্রুর হাত থেকে দেশকে মুক্ত করতে সক্ষম হন । কি রহস্য লুকিয়ে ছিল সে জালে ? একটি ক্ষুদ্র প্রাণী মাকড়সা কি শিখিয়েছিল রাজাকে ? প্রশ্ন কি উদয় হয়েছে আপনাদের মনে….
মাকড়সার জাল মূলত রেশম এবং এই রেশম তৈরি করার জন্য মাকড়সার দেহে থাকে বিশেষ এক গ্রন্থি । এদের তলপেটে থাকা বিশেষ অঙ্গের সাহায্যে এরা তরল রেশমকে খুব পাতলা সুতােয় পরিণত করে নির্গত করতে পারে । এই অঙ্গের সাহায্যে এরা সুবিধা ও প্রয়ােজন অনুযায়ী সুতা তৈরি ও নির্গত করতে পারে । কিছু কিছু মাকড়সা তাদের জীবদ্দশায় প্রায় আট ধরণের ভিন্ন ভিন্ন রকমের জাল বুনতে পারে !
এখন, মনে প্রশ্ন আসে, মাকড়সারা জাল বােনে কেনাে ? আশা করি অনেকেই জানেন এবং না জানলে খুব সহজে অনুমানও করতে পারবেন । আমাদের ক্ষিধে পেলে আমরা খাবার কিনতে বাজারে যাই । আর মাকড়সারা পােকামাকড় শিকার করতে জাল বােনে । এরা জালে আটকা পড়া পােকামাকড়ের গায়ে এদের বিষদাঁতের সাহায্যে বিষ ঢুকিয়ে দেয় । বিষ পােকাগুলােকে মেরে ফেলে নয়তাে অজ্ঞান করে ফেলে । এরপর মাকড়সারা শান্তিতে মজা করে তাদের খাওয়াদাওয়া সারে ।
মজার ব্যাপার হচ্ছে , সব মাকড়সা জাল বােনে না । কিছু মাকড়সা তাদের শিকার ধাওয়া করে ধরে । কিছু কিছু আবার আগে থেকে তৈরী করে রাখা আঠালাে সুতার জাল সুবিধামতাে শিকারের ওপর ছুড়ে ফেলে কুপােকাত করে।
পোশাক শিল্পে স্পাইডার সিল্কঃ স্পাইডার সিল্ক পােশাক শিল্পের জন্য অত্যন্ত ব্যয়বহুল একটি উপকরণ । সিল্ক থেকে ব্যাক্টেরিয়ার মাধ্যমে তৈরি করা এ সুতা চুলের চেয়েও চিকন হলেও স্টিলের চেয়েও পাঁচ গুণ কঠিন ও কেভলারের চেয়ে তিন গুণ শক্ত। এমন কি সন্ত্রাসীদের গুলির হাত থেকে বাঁচতে আর বুলেট প্রুফ জ্যাকেট নয়। এখন আপনার নিরাপত্তায় আসছে বুলেট প্রুফ চামড়া । হ্যাঁ , কৃত্রিম এই চামড়াই ঠেকাবে ঘাতকের বুলেট । চামড়া ভেদ করে বুলেট ঢুকতে পারবে না মানুষের শরীরে। ডেনমার্কের এক দল বিজ্ঞানী এই মানুষের শরীরের চামড়া মতাে হুবহু এ ধরনের কৃত্রিম চামড়া আবিষ্কারের চেষ্টা চালাচ্ছেন। বিজ্ঞানীরা ছাগলের দুধ নিয়ে এক ধরনের প্রােটিন তৈরি করছেন, যা মাকড়সা জাল তৈরিতে ব্যবহার করে । এই প্রােটিন দিয়েই বিজ্ঞানীরা এক ধরনের বস্ত্র তৈরি করার চেষ্টা করছেন । বস্ত্রটির ওজন হবে ২.৬ গ্রাম বা ৩২৯ মিলিগ্রাম । এই বস্ত্রটি পয়েন্ট টু ক্যালিবার রাইফেলের গুলি ঠেকিয়ে দিতে পারবে ।
যা যা বানানাে সম্ভব .
•বুলেটপ্রুফ চামড়া
•পানিরােধী হালকা জামা
•প্যারাস্যুট
•পরিবেশবান্ধব বােতল
• সার্জিকেল ব্যান্ডেজ বা ট্যাপ
• এমনকি আমাদের শরীরে টেন্ডন ছিড়ে গেলে তা এই জাল দিয়ে প্রতিস্থাপনের প্রচেষ্টা চলছে । তাহলে ভাবুন মাকড়সা কত উপকারী । মাকড়সার জাল দেখলে একটু ভাববেন এবং কত শিল্প লুকিয়ে আছে একটু পর্যবেক্ষণ করবেন ।
উৎস: উইকিপিডিয়া, স্পাইডার ওয়েব, বিডি নিউজ, ফাইবার নেট ।
মোবারক হোসেন জনি
ওয়েট প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং (দ্বিতীয় ব্যাচ)
ডা.এম এ ওয়াজেদ মিয়া টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ,পীরগঞ্জ ,রংপুর