পারশিয়ান রাগ বা ফার্সি গালিচা মূলত ইরানী কার্পেট হিসেবে অধিক পরিচিত। ফার্সি গালিচা ইরানের বিভিন্ন উপযোগী এবং প্রতীকী উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয় যেমন গৃহস্থলি ব্যবহার,স্থানীয় বিক্রয় এবং দেশ বিদেশে রপ্তানী করার জন্য।কার্পেট বা গালিচা বুনন পারস্য সংস্কৃতি এবং ইরানি শিল্পের একটি অপরিহার্য অঙ্গ।
ফার্সি গালিচা সম্পর্কে একটি প্রশ্ন সব সময় উঠে আসে তা হলো এর চড়া মূল্য। কেনো ফার্সি গালিচার মূল্য অন্যান্য গালিচার চেয়ে বেশি? এত অর্থ ব্যয় করে ফার্সি গালিচা কেনা কতোটা যুক্তিযুক্ত?
এই প্রশ্ন গুলোর অনেক উত্তর রয়েছে যার কিছুটা আমি আজকের এই আর্টিকেল এ যথাযথ ভাবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করবো।
Time:
ফার্সি গালিচা সম্পূর্ণ হাতে বোনা হয় যার ফলে একটি গালিচা তৈরীতে অনেক সময় ব্যয় হয়। কিছু গালিচা তৈরি করতে ছয় মাসের মতো সময় লাগে আবার কোনটি তৈরিতে এক বছর বা তার চেয়েও বেশি সময়ের প্রয়োজন হয়।এটি সম্পূর্ণ নির্ভর করে এর আকৃতি, এক দিনে কি পরিমাণ বুনন দেওয়া হচ্ছে এবং গালিচা তৈরিতে কোন ধরণের সুতো ব্যবহার করা হচ্ছে এ সকল বিষয়াদির উপর।পারশিয়ান রাগ এর মেটারিয়াল এর খোজ থেকে শুরু করে এর প্রত্যেকটি গিট দেয়া পর্যন্ত সম্পূর্ণ কাজ সূক্ষ্মভাবে করা হয় কোনো মেশিনের সাহায্য ব্যতীত। যেহেতু ফার্সি গালিচা তৈরীতে কোনো মেশিন এর ব্যবহার হয় না এবং সম্পূর্ণ কাজ হাতে করা হয় তাই একটি গালিচা তৈরিতে এতো সময় ব্যয় হওয়া অস্বাভাবিক কিছুনা।আর কথায় আছে টাইম ইজ মানি তাই যেখানে একটি গালিচা তৈরিতে এতো সময় লাগছে সেহেতু এর মূল্য বেশি হওয়া খুব স্বাভাবিক।
Materials:
পারশিয়ান রাগ তিন ধরণের হয়ে থাকে-
১০০% সিল্ক রাগ
কম্বিনেশন সিল্ক রাগ (সিল্ক,উল,কটন)
১০০% উল রাগ
ফার্সি গালিচার উচ্চমূল্য হওয়ার পেছনে আরেকটি কারণ হচ্ছে এটি তৈরীতে ব্যবহৃত ম্যাটারিয়াল। ১০০% সিল্ক রাগ হচ্ছে সবচেয়ে ভালো কোয়ালিটির পারশিয়ান রাগ এবং বাকি দুই ধরণের রাগ এর তুলনায় এর মূল্য বেশি কারণ এটি সম্পূর্ণ সিল্ক দিয়ে তৈরি।সিল্ক সুতো খুব সূক্ষ্ম কিন্তু শক্ত বটে। সিল্ক সুতো যেহেতু খুব সূক্ষ্ম সেহেতু এটি হাতে বুনন করা খুব কঠিন।সিল্ক সুতোর সূক্ষ্মতার কারণে একটি গালিচা তৈরি করতে কয়েক মিলিয়ন গিট দিতে হয় যার ফলে গালিচাটি সম্পূর্ণ বয়ন করতে আরও বেশি সময় নেয়। খুব দক্ষ কারিগররাই সিল্ক এর গালিচা তৈরির কাজটি করে থাকেন।
দক্ষিণ ইরানের কোম(Qum) গ্রাম সিল্ক এর গালিচা তৈরি করার জন্য সর্বাধিক পরিচিত অঞ্চল এবং এ কারণেই তাদের বেশিরভাগের নামকরণ করা হয়েছে ‘কোম সিল্ক পারশিয়ান রাগ’ (Qum Silk Persian Rug)।
আপনি কিভাবে বুঝবেন গালিচাটি আসল সিল্ক থেকে তৈরী করা হয়েছে?
গালিচাটি আসল সিল্ক এর কিনা এটা বুঝার খুব সহজ একটা পদ্ধতি আছে।পদ্ধতিটা হলো বেশ কয়েক সেকেন্ড এর জন্য আপনার হাতের তালুটি গালিচার পৃষ্ঠের উপর ঘোষুন যদি আপনার হাত গরম হয়ে যায় তাহলে সিল্কটি আসল কারণ মেনুফেকচার্ড সিল্ক ঘর্ষণে তাপ উৎপন্ন করতে পারে না।
এতক্ষণ জানলাম সম্পূর্ণ সিল্ক এর তৈরি গালিচা সম্পর্কে।এখন জানবো কম্বিনেশন সিল্ক রাগ বা গালিচার সম্পর্কে। এই গালিচার কিছু অংশের জন্য সিল্ক ব্যবহার করা হয় এবং এর ভিত্তি দেয়া হয় উলের ও সুতির সংমিশ্রণে। সিল্কের অংশ গালিচার কাজগুলোতে এইচডির(HD) স্পর্শ যুক্ত করে তবে সম্পূর্ণ গালিচায় এই এইচডি ভাবটা থাকে না কারণ এতে সুতি ও উলের সংমিশ্রণ রয়েছে।এই গালিচার বেশিরভাগ অংশেই থাকে উল এবং তুলা।উলটি কখনো কখনো ‘ কর্ক ‘(একটি অতিরিক্ত নরম ধরনের উল) বা মেরিনো হতে পারে। এগুলো সত্যিই টেকসই উপকরণ এবং ১০০% প্রাকৃতিক।তুলা উলের তুলনায় সূক্ষ্ম তাই ১০০% উলের গালিচার তুলনায় বুনতে বেশি সময় নেয় তাই মূল্যও এর তুলনায় অপেক্ষাকৃত বেশি।
সর্বনিম্ন ব্যয়বহুল (যদিও এখনও খুব ভালো মানের) পারশিয়ান রাগ হচ্ছে উপজাতি/যাযাবরদের তৈরি গালিচা যা ১০০% উল দিয়ে তৈরি হয়।যে উপজাতিরা ঐতিহ্যগতভাবে এই রাগ গুলো তৈরি করেছিলো কারণ তাদের কাছে উল ব্যতীত অন্য কোনো উপাদান ছিলো না যা দ্বারা তাদের পরিবারকে উষ্ণ রাখা যায়।তাই তারা শুধু উল এর গালিচা তৈরি করে থাকেন।
Size:
গালিচার মূল্য একই বিষয় গুলির দ্বারা নির্ধারিত হয় যা শিল্পের যে কোনও কাজের মূল্য নির্ধারণ করে।সেই বিষয় গুলির একটি হচ্ছে আকার বা সাইজ (size)।
যদি কোনো গালিচা মেশিন দ্বারা তৈরি করা হয় তবে এটির সম্ভাবনা খুব কম যে এটি মূল্যের উপর বিশাল প্রভাব ফেলবে।মেশিনে যে কোনো মাপের গালিচা খুব কম সময়ের মধ্যে তৈরি করা সম্ভব কিন্তু হাতে তৈরী গালিচার ক্ষেত্রে এমনটা হওয়া সম্ভব না কারণ একটি গালিচায় এক সেন্টিমিটার বৃদ্ধি করা মানে কারিগরদের হাত দিয়ে আরও কয়েক শতাধিক নট দেয়া যা করতে অবশ্যই অধিক সময়ের এবং শ্রমের প্রয়োজন হবে তাই স্বাভাবিকভাবেই মূল্য বৃদ্ধি পাবে।
One of a kind:
প্রতিটি হস্তনির্মিত গালিচা ভিন্ন ধরনের হয়। দুটি গালিচা কখনোই এক ধরণের হবে না। বিশেষভাবে যদি এক ধরনের দুটি গালিচা তৈরি করা হলেও তারা সম্পূর্ণ এক ধরনের হয় না। একটু সূক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে দুটির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। কারিগররা চাইলেও সম্পূর্ণ এক ধরণের গালিচা তৈরি করতে পারবেন না। গালিচা গুলোর মধ্যে কিছু না কিছু ভিন্নতা থাকবেই।অন্যদিকে মেশিনে এক ধরনের অসংখ্য গালিচা খুব কম সময়ের মধ্যে তৈরি করা সম্ভব।সুতরাং এই বিষয়টি অবশ্যই মূল্যকে প্রভাবিত করবে কারণ এক্সক্লুসিভ আইটেম এর মূল্য স্বাভাবিকভাবেই একটু বেশি হয়ে থাকে। তাই ফার্সি গালিচার মূল্য বেশি হওয়ার এটি আরেকটি বিবেচ্য বিষয়।
Design:
শতাধিক ফার্সি গালিচার ভিন্ন ভিন্ন ডিজাইন রয়েছে যা সাধারণত তৈরি হয় সেই শহর বা গ্রাম থেকে উদ্ভূত হয়ে যেখানে গালিচাটি তৈরী করা হয়েছিল। গালিচাটি যেখানে তৈরি করা হয়েছে তার উপর নির্ভর করে গালিচাটির মান প্রভাবিত হয়। উদাহরণস্বরূপ কারমান,নাইন,তাবরিজ, ইসফাহান বা কাশান গালিচা।
Investment:
আপনি যদি কোনও ফার্সি গালিচা যত্ম সহকারে রাখেন (যেমন- হাঁটা চলা কম করা, পাঁচ বা তার অধিক সময়ের জন্য এটাকে প্রফেশনালদের মতো পরিষ্কার রাখা),এটির মান যথাযথ বজায় রাখেন তাহলে সময় বাড়ার সাথে সাথে এর মূল্য বৃদ্ধি পাবে।
যখন ফার্সি গালিচা ৩০-৯৯ বছর বয়সে পৌঁছে যায় তখন এটি ‘ভিন্টেজ’ পর্যায় চলে যায়। গালিচাটি ১০০ বছরের বেশি যাওয়ার পর এটি ‘অ্যান্টিক’ গালিচায় পরিনত হয়।
ফার্সি গালিচা গুলো যতো বেশি বয়সী হয় তত বেশি বিরল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর গালিচা যতো বিরল হবে এর মূল্য তত বৃদ্ধি পাবে।
গালিচার মূল্য সম্পর্কে কোনো প্রফেশনাল ব্যক্তির পরামর্শ নিশ্চিত করা জরুরি। সব পুরোনো ফার্সি গালিচা উচ্চমূল্যের হয় না। হয়তোবা কোনো গালিচা ততোটা মূল্যবান নাও হতে পারে যতোটা আপনি ভেবেছিলেন। রাসায়নিক উপাদান দ্বারা ধোয়ার ফলে অথবা অত্যধিক প্রত্যক্ষ সূর্যের আলোয় ম্লান হয়ে এটির মান কমে যেতে পারে এবং এর মান কমে যাওয়ার ফলে সাধারণভাবেই এর মূল্যও কমে যাবে।
(Information collected from Google)
Writer information :
Mariam Bibi Goon Nahar
Department of clothing and textile,
1st year
Bangladesh Home Economics College