হিন্দু ধর্মে পুরান মতে বলা হয়েছে যে দেবীরা সবসময় শাড়ি পরিধান করতো। শাড়ি হল মেয়েদের ভূষণ। আর সেই কাল থেকেই বাংলার মেয়েরা শাড়ি পরিধান করতো। আর দেবিরা বেশিরভাগ পড়তো কাতান শাড়ি। অনেক সময় আগে থেকেই কাতান শাড়ির প্রচলন শুরু হয়েছে। বিভিন্ন রংয়ের কাতান তৈরি হতো যা দেবীরা পরিধান করতো। সেই থেকে এখনো কাতানের প্রচলন চলে যাচ্ছে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বাংলার নারীরা কাতান শাড়ি পরিধান করে যা তাদের উজ্জলতা অনেক বাড়িয়ে তোলে। আর কথায় আছে বাংলার নারীরা শাড়িতে সুন্দর।বাঙালি নারীর শাড়িতেই যত প্রেম। এখনো উৎসবে, পার্বণে, বিয়েবাড়ির আয়োজনে সিল্ক, কাতান বা গরদের শাড়ি কাতান সুতি, জামদানির মতো অদ্বিতীয় এক শাড়ির নাম কাতান৷ বেনারসির আরেকটি ধরন বলা যেতে পারে কাতানকে৷ এক সময় বিভিন্ন উত্সব-পার্বণে নারীদের প্রথম পছন্দই ছিল কাতান৷ হালকা কাজের দেশি কাতানের ছিল ব্যাপক চাহিদা৷ কাতানের ডিজাইনিং এ চিকন পাড় ও শাড়ি জুড়ে কলকা বিশিষ্ট মোটিভের চলই এখন বেশি৷ মিরপুরের কাতানের বাইরেও টাঙ্গাইলের তাঁতিরা তৈরি করছে ফুল সিল্ক টাঙ্গাইল কাতান, এছাড়া বালুচুরি, গাদোয়ান শাড়িও চল রয়েছে৷ চিকন পাড় ও পেটানো কাজের আঁচল বিশিষ্ট কাতান শাড়িও জনপ্রিয়৷ লাল-কালো, মেরম্নন, কমলা, ফিরোজা, পেঁয়াজ রঙগুলোই কাতানে ঘুরে ফিরে দেখা যায়৷ এক রঙা কাতানে চওড়া ও চিকন পাড়ের জনপ্রিয়তা এখন বেশি হলেও ভেতরে কারম্ন-কার্যময় শাড়ির জনপ্রিয়তাও রয়েছে।
শাড়ির ইতিহাস আর ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে আছে কাতান। সময় বদলের সঙ্গে সঙ্গে কাতানের নকশা, বুনন আর রঙে এসেছে নানা পরিবর্তন। এ সময়ের জনপ্রিয় পাঁচ কাতানের বর্ণনা রইলঃ
ফুলকলিঃফিরোজা কাতান শাড়িতে রুপালি জরির পাড়। নকশা করা হয়েছে ঐতিহ্যবাহী ফুলকলি মোটিফে। শাড়ির পাড়ে ভরাট নকশার মধ্যে ছোট ছোট পার্পল বুটি। জমিনজুড়ে ছড়িয়ে থাকা সিঙ্গল ফুলকলি নকশা। আঁচলে ম্যাট ফিনিশিং রুপালি জরির বটপাতার মোটিফের মধ্যে ম্যাজেন্টা বুটি নকশা।
মিরপুরঃঅফহোয়াইট জমিনের শাড়িতে লাল ও বেগুনি দুই লেয়ারের পাড়। ম্যাট ফিনিশিং জরি দিয়ে বেগুনি পাড়ের নকশা করা আর লাল পাড়টি লতানো ফ্লোরাল মোটিফে। মিক্সড শেডের জরির ভরাট আঁচলেও পাড়ের আদলের নকশা। নতুনত্ব আনতে আঁচলের শেষ ভাগে টারসেল জুড়ে দেওয়া।
গিনি গোল্ডঃরয়ালঃরয়াল ব্লু কাতান শাড়িতে ট্র্যাডিশনাল চওড়া জরির পাড়ে তিন-চার রকম মোটিফের বুনন। জমিনজুড়ে গোলাপের নকশা। আঁচলে পেটা জড়ির ওয়েভিং নকশা, সঙ্গে টারসেল।
মিলেনিয়ামঃমাল্টিকালারের মিলেনিয়াম কাতান। ফিরোজা, কমলা, নীল, গোলাপি রঙের মিশেলে জমিন। রুপালি সুতার পেটা বুনন পাড়। কুঁচি, আঁচল ও জমিনে ভিন্ন ধরনের ফুলেল ও জ্যামিতিক মোটিফের জলছাপ বুনন নকশা।
অপেরাঃপিংক অপেরা কাতান। চওড়া পেটানো জরির পাড়ের সঙ্গে জমকালো জরির আঁচল। জমিনে ঘন ছোটবড় পান পাতা ও বুটিদার জরির নকশা।
বিয়ের শাড়ি হিসেবে বেনারসি বা কাতান না হলে যেন চলেই না। অত্যন্ত জনপ্রিয় এই শাড়ি বোনা হয় রেশমি সুতো দিয়ে। এক রং ব্যবহার করে পুরো শাড়িতে বিভিন্ন নকশা ফুটিয়ে তোলা হয়। সোনালী, রুপালি সুতো এই নকশা ফুটিয়ে তোলার জন্য ব্যবহার করা হয়। মিরপুরের বেনারসি পল্লীতে সবচেয়ে বেশি কাতান, বেনারসি শাড়ি তৈরি করা হয়। অন্যান্য শাড়ির তুলোনায় এই শাড়ি ওজনে ভারী হয়। যা আভিজাত্য ও গাম্ভীর্য তুলে ধরে।
বিভিন্ন পূজায় দেবীদের কে পরিধানের জন্য কাতান শাড়ি ব্যবহার করা হয়। যা দেবী প্রতিমা কে অনেক উজ্জলতা প্রদান করে। তাই কথায় বলা হয় “দেবী রূপবর্ধনে কাতানের কদর”অপরিসীম।
Writer:
Antor Saha
BGMEA University of Fashion & Technology (BUFT),
Department of Textile Engineering