Friday, November 22, 2024
Magazine
More
    HomeTechnical Textileহোম টেক্সটাইল এবং এর নতুন সম্ভাবনা

    হোম টেক্সটাইল এবং এর নতুন সম্ভাবনা

    টেকনিক্যাল টেক্সটাইল খাতের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ ধরা হয় হোম টেক্সটাইলকে। এখন আসি, হোম টেক্সটাইল আসলে কি?

    হোম টেক্সটাইল বলতে সাধারণত ঘরের ভেতর প্রয়োজনীয় অথবা শোভাবর্ধনের জন্য ব্যবহৃত পণ্যকে বোঝায়। ঘরের ভেতরে ব্যবহৃত হয় বলে একে হোম টেক্সটাইল বা ঘরোয়া টেক্সটাইল বলা হয়ে থাকে।

    হোম টেক্সটাইল এর অর্ন্তভুক্ত জিনিস : বিছানার চাদর, বালিশ, বালিশের কভার, টেবিল ক্লথ, পর্দা, ফ্লোর ম্যাট, কার্পেট, ঝিকঝাক গালিচা, ফার্নিচারে ব্যবহার করা কাপড়, তোষক, পাপোশ, খাবার টেবিলের রানার, কৃত্রিম ফুল, নকশিকাঁথা, খেলনা, কম্বলের বিকল্প কমফোটার, বাথরুম টাওয়েল, রান্নাঘর ও গৃহসজ্জায় ব্যবহার করা হয় এমন সব ধরনের পণ্য।

    হোম টেক্সটাইল এর কাঁচামাল : এই শিল্পের প্রধান কাঁচামাল তুলা, পাট, শণ, রেশম, ভেড়া ও ছাগলের পশম এবং অন্যান্য পশম। এছাড়া বর্তমানে কৃত্রিম তন্তু ব্যবহার করেও হোম টেক্সটাইল উৎপাদিত হচ্ছে আমাদের দেশে।

    হোম টেক্সটাইল এবং বাংলাদেশ :
    বিশ্বজুড়ে কভিড-১৯-এর কারণে সব ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত। আমাদের তৈরি পোশাকশিল্প কয়েক মাস ধরে করোনার কারণে নানা সমস্যা মোকাবেলা করে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করছে। সরকারও এই ক্ষেত্রে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে বেশি আশার আলো দেখিয়েছে হোম টেক্সটাইল। কিন্তু, আমাদের দেশে বড় রকমের হোম টেক্সটাইল কারখানার সংখ্যা খুবই কম। অ্যাপেক্স উইভিং অ্যান্ড ফিনিশিং মিলস, নোমান গ্রুপ, জাবের অ্যান্ড জোবায়ের, সাদ গ্রুপ, অলটেক্স, এসিএস টেক্সটাইল, জেকে গ্রুপ, ক্লাসিক্যাল হোম, ইউনি লাইন প্রভৃতি হোম টেক্সটাইল কারখানা রয়েছে। এইসব কারখানা গুলোর সাহায্যে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদার শতভাগ স্থানীয়ভাবে জোগান দেওয়া সম্ভব। এছাড়া এখানে সরকারের নীতি-সহযোগিতার প্রয়োজন রয়েছে। তাছাড়া আমাদের দেশের হোম টেক্সটাইল উদ্যোক্তাদের আন্তর্জাতিক বাজারে ট্রেড বা ফ্যাশন প্রবাহ ইত্যাদি কম বোঝা আমাদের রপ্তানি ক্ষেত্রে একটি বাধা। এসব সমস্যা সমাধানের জন্য সরকারের পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের এগিয়ে আসতে হবে। তবে এই ক্ষেত্রে বাজার সম্পর্কে গবেষণা প্রয়োজন অনেক বেশি। আমাদের দেশে সরকারি বা বেসরকারি কোনো সংস্থার বাজার গবেষণার কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। বর্তমানে বাংলাদেশে স্থানীয় হোম টেক্সটাইল বাজার প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার অধিক। বর্তমানে ঢাকাসহ সারা দেশে কয়েক লাখ ইউনিটের মতো ফ্ল্যাট অবিক্রিত রয়েছে। দেড় হাজার বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাটে দুই থেকে পাঁচ লাখ টাকার হোম টেক্সটাইল প্রয়োজন। দেশে আবাসন ব্যবসার প্রসার ঘটার সঙ্গে সঙ্গে হোম টেক্সটাইল এর ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। চাহিদাও বাড়ছে। বর্তমানে স্থানীয় ভাবে তৈরি হোম টেক্সটাইল ছাড়াও চীন, ভারত, থাইল্যান্ড ও পাকিস্তানের হোম টেক্সটাইল পণ্য প্রচুর ব্যবহার করা হয়। সরকারি নীতি-সহযোগিতা পেলে আমদানি হ্রাস পেয়ে স্থানীয় হোম টেক্সটাইল ব্যবহার কয়েক গুণ বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া আবাসন ব্যবসার সম্প্রসারণের ফলে হোম টেক্সটাইল পণ্যের ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল সহ সব শহরে আবাসন ব্যবসার প্রসার ঘটেছে। ফ্ল্যাট নির্মাণের ফলে এর ব্যবহারও বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে। একটি ফ্ল্যাটে দরজা-জানালার পর্দা, একাধিক বিছানার চাদর, কিচেন আইটেম, ডাইনিং আইটেমসহ বিভিন্ন রকমের হোম টেক্সটাইল পণ্যের চাহিদা তৈরি হয়েছে। এর ফলে দেশে অভ্যন্তরীণ বাজার বেশ বড় আকার ধারণ করেছে।

    করোনা পরিস্থিতি হতে পারে আশার আলো :

    করোনা পরিস্থিতিতে পুরো পৃথিবী যখন স্থবির, তখন আশার আলো দেখিয়েছে আমাদের হোম টেক্সটাইল খাত। এই খাতে রপ্তানি গত অর্থবছরের তুলনায় বৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ৪১ শতাংশ। মোট রপ্তানি হয়েছে ২৫ কোটি ডলারের পণ্য। চলতি অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯৬ কোটি ডলার। গত অর্থবছরে এই খাত থেকে আয় হয়েছে ৭৬ কোটি ডলার। আমাদের দেশ থেকে হোম টেক্সটাইল সব সময় রপ্তানি হয়। তৈরি পোশাকশিল্পের মতো সিজনাল রপ্তানি এই খাতে হয় না। ইউরোপে চার মৌসুমে রপ্তানি হয় বেশি। এবার এখানে তাতেও বৃদ্ধি পেয়েছে। করোনাকালে মানুষ গৃহে বেশি সময় থাকছে। হোম টেক্সটাইল ব্যবহারও তাই বেশি হচ্ছে। এজন্য চাহিদাও বেড়েছে, রপ্তানিও বেড়েছে।বিশ্বের হোম টেক্সটাইলের প্রধান বাজার আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলো। পৃথিবীর উৎপাদিত হোম টেক্সটাইল পণ্যের ৬০ শতাংশ রয়েছে এই দুই বাজারের দেশগুলোয়। বাংলাদেশের ৮০ শতাংশ হোম টেক্সটাইল পণ্য বিক্রি হয় আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলোতে । বিশ্বখ্যাত ক্যারেফোর, ওয়ালমার্ট, আইকিয়া, আলদি এইচঅ্যান্ডএস, মরিস ফিলিপস, হ্যাসা প্রভৃতি বড় ব্র্যান্ড এখন বাংলাদেশের হোম টেক্সটাইলের বড় ক্রেতা। রপ্তানি খাতের অন্যান্য পণ্যের মতো যুক্তরাষ্ট্র বাদে সব বাজারে শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা পাচ্ছে বাংলাদেশের হোম টেক্সটাইল শিল্প খাত। বাজার গবেষণা ও অ্যাডভাইজারি ফার্ম মরতর ইন্টেলিজেন্সের সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সবচেয়ে বেশি মুনাফা হয় হোম টেক্সটাইল ব্যবসায়। বর্তমানে হোম টেক্সটাইলের বিশ্ববাজার প্রায় ১৩১ বিলিয়ন ডলার। ২০২৫ সাল নাগাদ এই বাজার বৃদ্ধি পেয়ে ১৮০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য দেশের শিল্প উদ্যোক্তাদের নতুন করে এই খাতেও বেশি বিনিয়োগের চিন্তা করতে হবে।

    বাংলাদেশের হোম টেক্সটাইল খাত এর পরিধি বাড়াতে হলে যেসব বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন :

    ১.৷ হোম টেক্সটাইলের প্রধান কাঁচামাল হচ্ছে তুলা, যা আমাদের দেশে হয় না বললে চলে। সম্পূর্ণ তুলা আমদানি করে সুতা উৎপাদন করতে হয়। প্রতি বছর তুলার মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং সরবরাহ সমস্যা বাড়ছে। দেশে যে তুলা উৎপাদিত হয় তা দিয়ে স্থানীয় মানুষের লেপ ও বালিশের চাহিদাও পূরণ হয়। যদিও তুলা উন্নয়ন বোর্ড নানাভাবে চেষ্টা করছে তুলা উৎপাদন বৃদ্ধির করতে, কিন্তু আবহাওয়া, মাটি ও পরিবেশের জন্য আমাদের দেশে তুলা উৎপাদন ভালো হবে না। তাই আমদানি আমাদের একমাত্র ভরসা। আমাদের আমদানি ব্যয় কমাতে হবে। তুলা আমদানি খরচ সরকারকে আরও কমিয়ে আনতে হবে।


    ২.৷ তুলার পর হোম টেক্সটাইলের অন্যতম কাঁচামাল হচ্ছে ডাইস কেমিক্যাল। এটিও সম্পূর্ণভাবে আমদানি করতে হয়। এর খরচ কমানোর জন্য আরও সুযোগ বৃদ্ধি করতে হবে। তবে এই ক্ষেত্রে কিছু বন্ডেড ওয়্যার হাউস-সম্পন্ন কোম্পানি অসাধু ব্যবসা করে ডাইস কেমিক্যাল আমদানি করে বাজারে বিক্রি করে সরকারকে কর ফাঁকি দিয়ে দিনে দিনে ধনী হচ্ছে। সরকারকে এই ক্ষেত্রে কঠোর হতে হবে। এসব ক্ষেত্রে দায়ী ব্যবসায়ীদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা দেশের স্বার্থে প্রয়োজন।

    ৩.৷ তৃতীয় যে বিষয়টি এই খাতের জন্য জরুরি তা হচ্ছে গ্যাস ও বিদ্যুৎ স্বল্প মূল্যে সরবরাহ নিশ্চিত করা। কিন্তু আমাদের দেশে দফায় দফায় গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধিতে হোম টেক্সটাইলসহ বস্ত্র খাতের সব উপশাখা ঝুঁকির সম্মুখীন। স্পিনিং, উইভিং ও ডায়িং ফিনিশিং শিল্পকারখানায় প্রতি বছর কয়েকবার করে গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির বিষয়টি বন্ধ করা দরকার। একমাত্র চট্টগ্রাম বন্দর আমাদের চাহিদা সময়মতো পূরণ করতে পারছে না। অন্যদিকে বন্দর খরচ দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় পণ্য উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কনটেইনার চার্জসহ নানা শিপিং চার্জ কমপক্ষে অর্ধেক হ্রাস করা প্রয়োজন।

    ৪.৷ অনেক দিন পর ব্যাংকের সুদের হার ৯ শতাংশে নামিয়ে এনেছে সরকার। কিন্তু কয়েক বছর ধরে অধিকহারে ব্যাংকঋণের সুদ দিয়ে শিল্প উদ্যোক্তারা দিশাহারা। এই খাতের উন্নয়নের জন্য এই সরকারকে বস্ত্র খাতের ব্যাংক সুদের হার ‘লিক’ বেটে নিয়ে আসার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

    ৫.। নতুন করে বড় বিনিয়োগের জন্য আমাদের দেশের শিল্প বিনিয়োগকারীরা হোম টেক্সটাইল খাতকে পছন্দ করতে পারেন। যাদের বড় পুঁজি বিনিয়োগের ক্ষমতা রয়েছে, তাদের এই খাতে আসা উচিত। এই খাতে আয় বেশি, বিপণন ব্যবস্থা সহজ এবং বিশ্ববাজারে নিয়মিত চাহিদা রয়েছে।

    References :

    Wikipedia

    Daily Kaler Kantho

    Daily Prothom Alo

    Bangladesh Protidin

    Textile Today

    Written information:

    Md. Nazmul Hasan Nazim

    Member of TES

    National Institute of Textile Engineering and Research

    Batch: 10th

    RELATED ARTICLES

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    Related News

    - Advertisment -

    Most Viewed