রবীন্দ্রনাথের ভাষায়, ‘খোসা হইতে আঁটি পর্যন্ত কিছুই ফেলা যাবে না।’ আনারসের ক্ষেত্রে তা-ই হতে যাচ্ছে। আনারসের নাম শুনলেই তো জিভে জল আসে। মিষ্টি, রসাল সুস্বাদু ফল। আনারস কে বাগান থেকে তোলার সময় আনারসের সঙ্গে থাকা পাতাগুলো সাধারণত কেটে ফেলে দেওয়া হয়। কিন্তু গবেষণায় সেই পাতা ব্যবহারের উপায় পাওয়া গিয়েছে। আনারসের পাতা থেকে সুতো বের করা সম্ভব। আনারস থেকে যে ফাইবার পাওয়া যায় তাকে ‘পিনা ফাইবার’ বলা হয়।
আনারসের উৎপত্তিস্থলঃ
আনারস উৎপাদনে লিডিং দেশগুলোর মধ্যে আছে কোস্টারিকা, ব্রাজিল, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, ইন্ডিয়া। তবে বাংলাদেশের সিলেট, মৌলভীবাজার, চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং টাঙ্গাইল জেলায় ব্যাপকভাবে আনারস চাষ করা হয়। ঢাকা, নরসিংদী, কুমিল্লা, দিনাজপুর জেলাতেও আনারসের চাষাবাদ হয়ে থাকে। পার্বত্য চট্টগ্রাম, মৌলভীবাজার, শ্রীমঙ্গল ও টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর এলাকার আনারস একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী ফসল হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
আনারস এর পাতা থেকে ফাইবার সংগ্রহ করা হয়। পাতা থেকে প্রায় ১০০ ফুট লম্বা লাচি তৈরি করতে পারলেই তা ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি করা যায়। ২০১০ সালে মালয়েশিয়ায় একটি আনারসের মেলাতে গিয়ে প্রথম আনারস গাছ থেকে সুতা তৈরির বিষয়টি দেখতে পাওয়া যায়।
সুতা তৈরির প্রক্রিয়াঃ
আনারস চাষ করার পর বাগান থেকে অনেক পরিমান এর বর্জ্য বের হয়। যা আগে ফেলে দেওয়া হতো। কিন্তু বর্তমানে সেই বর্জ্য থেকে দুই টি উপায়ে পিনা ফাইবার প্রস্তুত করা সম্ভব।
১. হাতে বা ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে,
২. মেশিনে বা ম্যাকানিকাল পদ্ধতিতে
হাতে বা ম্যানুয়াল পদ্ধতিতেঃ
এই প্রক্রিয়ায় বাগান থেকে পাতা গুলো সংগ্রহ করে ভাল ভাবে পরিষ্কার করে শুকানো হয়। পাতাগুলো শুকানুর পর স্টিল বা সিরামিক প্লেট এর মাধ্যমে পাতা থেকে আচরিয়ে আঁশ বের করা হয়। সেই আঁশ কে রোদ এ সুকিয়ে তৈরি করা হয় সুত্র গুটি। একজন শ্রমিক দৈনিক প্রায় ৫০০ পাতা থেকে ফাইবার বের করতে পারে।
মেশিনে বা ম্যাকানিকাল পদ্ধতিতেঃ
যদি ম্যাকানিকাল পদ্ধতিতে নিষ্কাশন করা হয় তবে সেই মেশিন এ তিন ধরনের রোলার থাকতে হবে। এক্ষেত্রে প্রথমে আনারসের পাতা কে Feed Roller দিয়ে চালনা করলে তা Leaf Scratching Roller e পৌছায়। তবে পাতার Waxy Layer গুলো Scratching Roller এর ব্লেড এর মাধ্যমে আচরানো হয়। ফলে বেরিয়ে আসে কাংখিত ‘পিনা ফাইবার’। আবার পাতা গুলো ৩-৪ দিন পানিতে ভিজিয়ে রাখলে ও কাংখিত ফাইবার টি পাওয়া যায়।
পাইনাপেল ফাইবার এর বৈশিষ্ট্যঃ
★ পাইনাপেল ফাইবার নরম ও মোলায়েম।
★ হেম্প ফাইবার এর তুলনায় Soft।
★ নিজস্ব প্রাকৃতিক উজ্জল্য আছে।
★ ওজনে হালকা।
★ অন্যান্য ফাইবারের সাথে সহজে মেশানাে যায়।
★ সহজে ধােয়া যায়।
★ ড্রাইওয়াশের প্রয়ােজন হয় না।
★ পরিবেশবান্ধব ফাইবার ।
পিনা ফাইবার থেকে উৎপন্ন সামগ্রী :
পিনা ফাইবার ব্যবহার করে বর্তমানে বিভিন্নধরনে
ফ্যাশানেবল পােশাক প্রস্তুত হচ্ছে। ফিলিপাইনে এই
ফাইবারের সাথে আরও কিছু ফাইবারের সংমিশ্রণ ঘটিয়ে *Barong Tagalog নামক পোষাক বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এছাড়াও আরও কিছু ব্যবহার্য উপাদান প্রস্তুত সম্ভব-
শাড়ি
বাহারি হাতব্যাগ
ভেনিটি ব্যাগ
গহনার বক্স
গহনা
ওয়াল ম্যাট
টিস্যুর বাক্স
কলমদানি
কুশন এবং পাপােশ
হ্যাট
বিভিন্ন ধরনের খেলনা, ইত্যাদি।
প্রতিনিয়ত ই বিশ্বজুড়ে আর্টিফিশিয়াল বিভিন্ন ফাইবারের আবিষ্কার হচ্ছে, যা ক্ষতিকর এবং শরীর ও পরিবেশ দুটোর জন্যেই বিপজ্জনক। সেদিক থেকে ‘পাইনাপেল ফাইবার বা পিনা ফাইবার’ অনেক টা ই পরিবেশবান্ধব এবং ক্ষতিকর রাসায়নিক নেই বললে-ই চলে। শুধু তাই নয়, “Sustainable Fiber” হিসেবে ও পিনা ফাইবার বেশ জনপ্রিয়। দামে সস্তা ও টেকসই হওয়ায় অনকে ই পিনা ফাইবার এর তৈরি পণ্য ব্যবহার করছে।
পিনা ফাইবার এর সঠিক পরিচর্যা ও গুরুত্ব দেওয়া হলে অতিসত্তর এই খাত থেকে ব্যাপক কর্মসংস্থান ও আর্থিক উপার্জন করা সম্ভব।
তথ্য ও ছবিঃ
১. উইকিপিডিয়া
২.বিডিনিউজ
Writer’s Information:
Faysal Mahmud Sezan
Niter 10th batch
Department of Textile Engineering