কয়ার ফাইবার প্রাকৃতিক ফাইবারগুলোর মধ্যে অন্যতম।নারিকেলের ছোবড়া দ্বারা সাধারণত কয়ার ফাইবার তৈরি করা হয়।তাই একে বাস্ট ফাইবারও বলা হয়।
Coir শব্দটি Kayar থেকে উদ্ভুত। Kayar শব্দটি দ্রাবিড়ীয় শব্দ,এর অর্থ দড়ি (Cord).এই শব্দটি ভারতের মালায়ালম এবং তামিল ভাষাভাষীর লোকেরাও ব্যবহার করে।প্রাচীনকাল থেকে নারিকেলের ফাইবার দিয়ে তৈরি দড়ি ব্যবহার হয়ে আসছে।ভারত,মালয়,জাভা,চীন,আরব উপসাগরীয় অঞ্চল গুলোর নাবিকেরা জাহাজের দড়ি হিসেবে এই ফাইবার ব্যবহার করতো।১৯ শতকের দ্বিতীয়ার্ধের আগে যুক্তরাজ্যে একটি কয়ার শিল্প রেকর্ড করা হয়েছিল।১৮৪০ এর সময় ক্যাপ্টেন লোগান এবং মিঃ থমাস ট্রেলোয়ারের সহযোগিতায় ক্যাপ্টেন ওয়াইডলি ইংল্যান্ডের লুডগেট হিলে ট্রেলোয়ার অ্যান্ড সন্স নামে পরিচিত কার্পেট ফার্ম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন,যা মূলত কয়ার ফাইবার দিয়ে মেঝের বিভিন্ন কার্পেটের কাপড় তৈরি করার উদ্দেশ্যে।
পুরোবিশ্ব ২,৫০,০০০ টন কয়ার উৎপাদন করে।ভারতের পোলাচি এবং কেরালা রাজ্যের সমুদ্র তীরবর্তী এলাকাগুলোতে প্রচুর নারিকেলের চাষ হয়,এরা বিশ্বে সাদা ফাইবারের ৬০% উৎপন্ন করে থাকে।শ্রীলংকা বাদামি কয়ার ফাইবারের ৩৬% উৎপন্ন করে থাকে।ভারত বিশ্বের বার্ষিক চাহিদার ৫০% কয়ার ফাইবার উৎপন্ন করে থাকে। প্রতিবছর ভারত এবং শ্রীলংকা যৌথভাবে বিশ্বের ৯০% কয়ার ফাইবার তৈরি করে থাকে।পৃথিবীতে কয়ার ফাইবার এবং কয়ার ফাইবার দ্বারা উৎপাদিত পণ্য রপ্তানিতে শ্রীলংকা প্রথম।বাংলাদেশও কয়ার ফাইবার উৎপন্ন করে আসছে। পরীক্ষামূলকভাবে ২০০৫ সালে বাগেরহাট বিসিক নগরীতে এর যাত্রা শুরু হয়,কিন্তু ২০০৭ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটি পূর্ণাঙ্গ উৎপাদনে যায়।প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদিত পণ্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে।
কয়ার ফাইবারের প্রকারভেদঃ
১.ব্রাউন কয়ার ফাইবারঃ পরিপক্ক নারিকেল থেকে তৈরি।
২.হোয়াইট কয়ার ফাইবারঃ অপরিণত নারিকেল থেকে তৈরি।
সবুজ নারিকেল ৬ থেকে ১২ মাস চাষের পর সাদা ফাইবার পাওয়ার জন্য নারিকেল সংগ্রহ করা হয়।আর,বাদামি ফাইবারের জন্য নারিকেলকে পরিপক্ক হতে দেওয়া হয়।নারিকেল সংগ্রহ করার পর নারিকেলের মালা থেকে ছোবড়া আলাদা করে নেওয়া হয়। সিজনে প্রতিদিন ২,০০০ পর্যন্ত নারিকেল আলাদা করা যায়।নারিকেলের পরিপক্ক খোসা পানিতে ৬ মাস ধরে পচাতে হয়।যাতে পরিষ্কার পানি ব্যবহার করতে হয়।অপরিণত কাঁচা খোসা পচানোর জন্য লবণাক্ত পানি প্রয়োজন ও ৪ মাস ধরে পচাতে হয়।এরপর এগুলোকে পানি থেকে উঠিয়ে শুকিয়ে- পিটিয়ে পরিষ্কার করে স্পিনিং শেডে পাঠানো হয় এবং কয়ার ফাইবার উৎপন্ন করা হয়।বর্তমানে নারিকেল থেকে ছোবড়া আলাদা করার জন্য যন্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে,যা দিয়ে প্রতি ঘন্টায় ২,০০০ এর বেশি নারিকেল প্রসেস করা হচ্ছে।
নারিকেলের উপাদান সমূহঃ
১. ছোবড়া
ক.আঁশ – ২২%
খ. পিথ – ১৬%
২. শাঁস – ৩০%
৩. মালা – ১৪%
৪. পানি – ১৮%
মোট – ১০০%
রাসায়নিক উপাদানঃ
লিগনিন – ৪৫.৮৪%
সেলুলোজ – ৪৩.৪৪%
হেমি সেলুলোজ – ০.২৫%
পেকটিন – ৩.০০%
ওয়াটার সলুবল – ৫.২৫%
অ্যাশ – ২.২২%
মোট – ১০০%
ভৌত উপাদানঃ
Length : 6-8 inch
Density: 1.40 (g/cc)
Tenacity: 10.0 (g/Tex)
Breakin Elongation: 30%
Diameter in mm: 0.1 to 1.5
Rigidity of Modulus: 1.8924 dyne/cm*2
Swelling in water: 5 diameter
Moisture at 65% RH : b10.50%
কয়ার ফাইবারের লেন্থ অনুযায়ী একে বিভিন্নভাবে পরিমাপ করা হয়ঃ
Long fibers/Bristle fibers: 15 cm & above
Medium fibers: 12-15 cm
Short fibers/ Mattress fibers: 6-8 cm
Very short fibers: 4 cm
ব্যবহারঃ
১. লাল কয়ার ফ্লোর ম্যাটস,ডোরম্যাটস,ম্যাট্রেস,ব্রাশ,জাজিম,ফ্লোর টাইলস তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
২.কয়ার ফাইবার কম্পোজিট ম্যাটেরিয়ালস তৈরিতেও ব্যবহৃত হয়।ইউরোপে অটোমোবাইল ইন্ড্রাস্ট্রিতে এর ব্যবহার রয়েছে।
৩.সাদা কয়ার ফাইবার দিয়ে ব্রাশ,দড়ি, মাছ ধরার জাল তৈরি করা হয়।
৪.বাদামি কয়ার ব্যবহার করে প্যাডিং,স্যাকিং এবং হর্টিকালচার করা হয়।
৫.সোফা,ব্যাগ,পাখা এবং নারিকেলের মালা দিয়ে বোতাম,বাসন ইত্যাদি কুটির শিল্পের সৌখিন পণ্য তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।হুক্কা তৈরিতেও এর ব্যবহার রয়েছে।
৬.পানিতে সহজে পঁচে না বলে দড়ি ও জাহাজের বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়।
কয়ার প্রাকৃতিক ও পরিবেশবান্ধব ফাইবার।এর দ্বারা পরিবেশের কোনা ক্ষতি হয় না।সুতরাং কয়ার ফাইবারের ব্যবহার বিশ্বে আরও জোরদার করলে পৃথিবী রক্ষায় তা কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।
References
- Wekeapedia
- TextileEngineers .Org
- Textilebangla .com
Written by
Jahid Hasan Shovon
Department of Textile Engineering, 10th batch
National Institute of Textile Engineering & Research