আমরা এখন ইন্ডাস্ট্রি 4.0 বিপ্লবের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছি। যার আশেপাশে রয়েছে প্রচুর বাধা-বিপত্তি ও প্রতারণা। আর এথেকে পরিত্রাণের জন্য নেই যথেষ্ট সাহসী পদক্ষেপ। তাই এখনই সময় পুরনো পদক্ষেপগুলোকে প্রয়োজন অনুসারে পরিবর্তন করার। ইতোমধ্যে বেশিরভাগ নির্মাতারাই i4.0 প্রযুক্তিতে কিছু বিনিয়োগ করেছেন এবং বাকিরা পরবর্তীতে বিনিয়োগ করার ব্যাপারে ভাবতে শুরু করেছেন। এক্ষেত্রে ইন্ডাস্ট্রির কর্মক্ষমতাকে রূপান্তর করতে এবং টেকসই প্রতিযোগিতামূলক সুবিধাগুলো আনলক করার জন্য প্রয়োজন প্রথমে তাদের সাফল্যগুলি বাড়িয়ে তোলা এবং প্রয়োজনীয় ও কার্যকর উপায়গুলি সন্ধান করে একটি রোডম্যাপ তৈরি করা। সেই সাথে মাথায় রাখতে হবে, “আপনি কোন লক্ষ্যগুলো অর্জন করতে চান একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে?”
আর এক্ষেত্রে প্রথমে সমস্যাগুলোকে খুজে বের করে তারপর এর সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। আমরা যদি লক্ষ্য করি তাহলে দেখতে পাব আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষের মধ্যে একটা নেগেটিভ ধারণা প্রচলিত রয়েছে i4.0 সম্পর্কে। তারা ভাবছে i4.0-র ফলে ইন্ডাস্ট্রিগুলো প্রযুক্তি ও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের উপর অধিক নির্ভর হয়ে যাবে এবং ফলাফলস্বরূপ দেশের অনেক মানুষ কর্মসংস্থানের সুযোগ হারাবে। দেখা যাবে এক পক্ষ দিন দিন যত উন্নয়নের শিখরে পৌছাবে, অপর পক্ষ তদ্রুপ তাদের সুযোগ হারিয়ে দুর্বল হয়ে পড়বে। আর এই বিষয়টাই i4.0 বিপ্লবকে সবচেয়ে বেশি বাধাগ্রস্ত করে তোলে। তাই এথেকে পরিত্রাণের জন্য দরকার আগের শিল্প বিপ্লবগুলোকে ভালো মত পর্যবেক্ষণ করে তারপর ভবিষ্যদ্বাণী করা। আগের বিপ্লবগুলোকে পর্যবেক্ষণ করলে আমরা দেখব, বিপ্লবগুলোর শুরুতে নানা রকম নেগেটিভ ধারণা ও কথাবার্তার প্রচলন থাকলেও পরবর্তীতে বিপ্লবগুলো তার সাফল্য ও অগ্রগতির মাধ্যমে তা ভুল প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। তেমনই চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সাথে পাল্লা দিতে দরকার এর গোড়া থেকেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া অর্থাৎ আমাদের দেশে প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা, প্রযুক্তি ও গবেষণায় কিছু পরিবর্তন আনা।
প্রাথমিক গণিতের সাথেই কোডিং এর প্রচলন করা, প্রোগ্রামিং ভাষাগত দক্ষতা বাড়ানো, ব্যবহারিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উপর সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া। ফলে আমাদের দেশে প্রযুক্তিগত দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টি হবে। দেশীয় ইন্ডাস্ট্রিগুলোতে বিদেশ থেকে অতিরিক্ত পরিমাণে টাকা দিয়ে শ্রমিক আনতে হবে না। দেশের সম্পদ দেশেই থেকে যাবে। তাই আমরা i4.0 সম্পর্কে যতই নেগেটিভিটি পোষণ করি না কেন শেষমেষ আমাদের এর সাথে পাল্লা দিয়েই পরবর্তী শিল্প বিপ্লবকে ডেকে আনতে হবে। আর আমরা থেমে থাকতে চাইলেও সমগ্র বিশ্ব কখনোই থেমে থাকবে না। বরং আমরাই পিছিয়ে যাব। তাই দরকার নিজেদের দক্ষতা বাড়ানো ও সাফল্যের জন্য প্রয়োজনীয় রোডম্যাপ তৈরি করে পরবর্তী শিল্প বিপ্লব গুলোকে সাদরে গ্রহণ করা। i4.0 নিয়ে রিসার্চে জানা গেছে এর ৬ টি মূলমাত্রা রয়েছে, যা প্রতিটি উৎপাদনকারী সংস্থাকে অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে।
এগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
১) ব্যবসায়ের কৌশল ও মডেল: i4.0 এর লিডারদের একটি নির্দিষ্ট কৌশল ও রোডম্যাপ রয়েছে, যা নিশ্চিত করে কতটুকু বেনিফিট বিতরণ করা হচ্ছে এবং এন্টারপ্রাইজ মানটি স্কেলে অর্জন করা হচ্ছে।
২) প্রযুক্তি ব্যবস্থাপনা: উৎপাদনকারী সংস্থাগুলোকে তাদের কৌশল সর্বোত্তমভাবে সরবরাহ করার জন্য মূলধন কোথায় বিনিয়োগ করতে হবে তা বুঝতে হবে ভালোমতো।
৩) গভর্নেন্স ও ঝুঁকিব্যবস্থাপনা: i4.0 এর লিডাররা প্রযুক্তি সরবরাহের উপকারিতার উপর ফোকাস করার পরিবর্তে তারা এর খরচার উপর ফোকাস করছেন বেশি। তাই এর ঝুঁকি হ্রাস ও ROI নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজন শক্তিশালী প্রশাসনের।
৪) i4.0 কে সমর্থন: i4.0 কে সমর্থন করার জন্য প্রয়োজন মানুষকে দক্ষতা বিকাশ, বিনিয়োগ, কর্মশক্তি সংহতকরণ এবং প্রযুক্তিগত জ্ঞানের উপর ফোকাস করা ।
৫) অপারেশনাল এক্সিলেন্স: অপারেশনাল পারফরম্যান্স পুনরায় উদ্ভাবনের সম্ভাবনা থাকায় এর লিডাররা প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা অর্জনের লক্ষ্যে তাদের end-to-end মান চেইনকে সংহত করার সুযোগ টি ব্যবহার করছেন।
৬. গ্রাহকের অভিজ্ঞতা: গ্রাহকের আচরণ পরিবর্তন ব্যবসায়ের মডেলগুলোকে প্রভাবিত করে। গবেষণায় দেখা গেছে, সংস্থাগুলির কৌশলগত সুবিধার অন্যতম মূল্যবান উৎস হিসেবে গ্রাহকের সাথে আরো বেশি সংযোগ স্থাপনের উপর জোর দেয়।
সেই সাথে কিভাবে একটি পরিকল্পনাকে আরো দ্রুততর এবং তাৎক্ষণিকভাবে বাস্তবায়ন করা যায় সে বিষয়ে অন্তর্দৃষ্টি ও গাইডেন্সের জন্য ইন্ডাস্ট্রিগুলো KPMG-র মতো ডিজিটাল সংস্থার সহায়তা নিতে পারে।
Writer Information:
Tazim Sultana Nandita
Ahsanullah University of Science and Technology
Department of Textile Engineering (Batch-40)