শৌখিন কোনো নকশায় চোখ আটকে যায় না এমন কেউ কি আছে?
আংড় এর ঘর সাজানোর তৈজসপত্র কিংবা শাহবাগের রাস্তায় ফুটপাতের হাজারো রঙ্গিন পন্যে আমাদের সবার চোখ জুড়ায় যায়।তেমনি সেই রকম রঙ্গিন,নকশার কাপড়ও আমাদের বেশির ভাগরেই প্রিয়।
যেকোনো অনুষ্ঠানের জন্য জামা কিনতে দোকানে গেলে আমরা সবার আগে ”নকশা’ বা ‘ডিজাইন’ কে গুরুত্ব দেই। যদি ডিজাইন একবার পছন্দ হয়ে যায় তাহলে তো আর কোনো কথাই নেই।
পৃথিবীতে কত প্রকার ফেব্রিক আছে তার লিস্ট করতে বিশাল বড় একটা কাগজ দরকার হবে,কিন্তু যদি ‘নকশাদার ফেব্রিক’ এর লিস্ট করি তাহলে কাগজ জুড়েই শুধু একটি নাম থাকবে আর সেটা হলো ‘Damask’ ফেব্রিক।
‘Damask’ ফেব্রিক এর নাম কিছুটা অপরিচিত লাগছে? তবে এর ব্যবহার কিন্তু খুব একটা অপরিচিত নয়।
কি সেই ‘Damask’ ফেব্রিক,কোথায় ব্যবহার হয়,কেনই বা এত বহুল পরিচিত, সেই সব কিছু আজকে তুলে ধরার চেষ্টা করবো।
‘Damascus’ বা ‘দামাস্ক’ শহরের নাম থেকে এই ফেব্রিক এর নামের আবির্ভাব। সেই সময় সিরিয়ার এই শহর প্রোডাকশন আর রপ্তানি দু’টোতেই ছিল সেরা। আজ থেকে প্রায় ৭০০ বছর পূর্বে ১৪ শত সেঞ্চুরিতে ইউরোপীয়ানদের ভাষায় এই ‘Damsk’ শব্দটি প্রথম ব্যাবহার হয়। তবে দামাস্ক শহরকে এর জন্মভূমি মানা হলেও অনেকের ধারণা দামাস্কে এর বুনন প্রক্রিয়ার বহু আগেই চীনে এই ফেব্রিক আবিষ্কার হয় কিন্তু কোনো প্রোডাকশন বা ব্যবহার এর বিস্তারিত হদিস পাওয়া যায়নি।
মূলত ‘Damask’ হলো একটি বিশেষ বুনন প্রক্রিয়া। ওভেন ফেব্রিক বানানোর এই প্রক্রিয়া এক কালে অনেক জনপ্রিয় ছিল। হ্যান্ড লুম এর সাহায্য এই ফেব্রিক এর বুনন কাজ করা হতো।
সিল্ক,উল,লিনেন,কটন এবং সিন্থেটিক ফ্রেবিকেও এই বুননের কাজ করা হতো।
‘Damask’ বুনন পদ্ধতিঃ
প্রথাগত নিয়ম অনুসারে কাপড়ের উপর প্রিন্ট,এমব্রয়ডারি, জরি বা সুতার কাজ করা হয়।কিন্তু ‘Damask’ ফেব্রিক এ যে নকশদার ডিজাইন দেখা যায় তা ট্রেডিশনাল লুম এর মাধ্যমে ফ্রেবিক এর মধ্যেই করা হয়। ফেব্রিক বুনন এর সময় এটার প্রতিটি সুতাকে অন্য আরেকটা সুতার সাথে এমন ভাবে জড়ানো হয় যাতে সেটা একটি নকশায় রুপ নেয়। সাটিন বা টুইল ফেব্রিক বুননের মত এই ক্ষেত্রেও দুই বা ততোধিক সুতার মাধ্যমে ‘ওভেন’ স্ট্রাকচার গঠন করা হয়।
এই ফেব্রিকের দুইটা ফেস স্পষ্ট আলাদা করা যায়। একটা ফ্রন্ট ফেস, ফ্রন্ট ফেসের দিকেই কাপড় ব্যাবহার করা হয়, অন্যটি হলো ব্যাক ফেস,মূলত ব্যাক ফেসটি পরিপূর্ণ ভাবে ফ্রন্ট ফেস এর রিভার্স লুক প্রদর্শন করে।
জ্যামিতিক নকশাই সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য ছিল এই বুননে।
পরবর্তীতে ‘Damask’ ফেব্রিক ইউরোপীয় দেশ গুলো তে ছড়িয়ে পরতে থাকে।
কিভাবে খুব দ্রুতই দামাস্ক শহর থেকে তা অন্য মহাদেশও ছড়িয়ে পরে তার পিছনে রয়েছে এক বিশাল রহস্য। সেই সময় বিভিন্ন রাজ্য থেকে দামাস্ক শহরে এসে ‘Damask’ ফেব্রিক তৈরীর সাথে নিয়োজিত তাঁতিদের কিডন্যাপ করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এবং তাদেরকে বন্দি করে এই ফেব্রিক এর বুনন কাজ করে নেয়া হয়েছিল এবং তারপর থেকেই ইউরোপীয় দেশ গুলোয় এই ফেব্রিক তৈরীর এবং এর ব্যাবহার সারা পৃথিবীব্যাপি প্রসার হতে থাকে। ইউরোপে এসে এর ডিজাইনে আরো কিছু ভিন্নতা আসে, আগে শুধু জ্যামিতিক নকশাকে প্রাধান্য দিলেও ইউরোপীয়ানরা এই ফেব্রিক এর ডিজাইনে ফুল,পাতা,ফল,প্রানী ও মোটিভ এর নকশার ব্যবহার শুরু করে।
এক নজরে দেখে নেই এই ফেব্রিক এর কিছু বিশেষ গুণাবলী :
★চোখ ধাঁধানো প্যাটার্ন
★ যথেষ্ট পুরুত্ব এবং ভারী
★ মজবুত এবং টেকসই
★ উজ্জ্বল এবং চাকচিক্যময়
১৮০১ সালে মডার্ন লুম তথা ‘জ্যাকার্ড’ লুম এর আবির্ভাব ঘটার পর ‘Damask’ ফেব্রিক উৎপাদনে এক বিশেষ যুগান্তকারী পরিবর্তন আসে। মডার্ন লুমের মাধ্যমে খুব সহজ এবং কম সময়ে এই ফেব্রিকের বুনন প্রক্রিয়ার কাজ শুরু হয়। তাঁতিদের মিলে কিছুটা স্বস্তি।
মডার্ন লুমের মাধ্যমে এর ডিজাইন আরো উন্নত হয় এবং পরিধেয় কাপড় এর পাশাপাশি আরো অনেক কাজে এর ব্যাবহার বেড়ে যায়।
এক নজরে দেখে নেই কি কি জায়গায় এই ফেব্রিক ব্যাবহার হয় :
★ পরিধেয় বস্ত্র
★ টেবিল রানার
★ ওয়াল পেপার
★ হ্যান্ড ব্যাগ
★ হোম ডেকর
বর্তমান সময়ে আধুনিক টেক্সটাইলে অতীতের সেই ‘Damask’ বুনন এর দেখা পাওয়া মুশকিল। তবে বুনন প্রক্রিয়া বিলুপ্ত হয়ে গেলেও মজার ব্যাপার হচ্ছে এখনো রয়ে গেছে ‘Damask’ ফেব্রিক এর শত বছরের ঐতিহ্যবাহী ‘ডিজাইন’।
এখন কাপড়ে প্রিন্ট এর মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয় ‘Damask’ ডিজাইন। ‘Damask’ ফেব্রিক হারিয়ে গেলেও রয়ে গেছে তার ডিজাইন। এই জন্যই শুরুতে বলা হয়েছিল অনেক অপরিচিত একটা ফেব্রিক হলেও ব্যাবহারেই তার পরিচিতি রয়েছে।
Source: Wikipedia, Startup fashion, Masterclass.
Writer’s Information
Name: Nure Arfi
Semester: Second year, First Semester
Batch: 39th
Ahsanullah University of Science and Technology.