পোষাক!
মানুষের মৌলিক চাহিদা গুলোর মধ্যে পোষাক অন্যতম প্রয়োজনীয় একটা উপাদান। পোষাক মানুষের শালীনতা বা আব্রু রক্ষা করে। শুধু তাই নয় বর্তমানে অনেকেই পোষাকের মাধ্যমে সমাজে অন্যের অবস্থান নির্নয় করে। সাধারণ ভাবেই বিবেচনা করা হয়ে থাকে যে যত সুন্দর উন্নত ডিজাইনের পোষাক পরে সে তত উচু লেভেল এর মানুষ। কতিপয় কিছু ক্ষেত্রে যদিও রুচি গত কারণে এর ভিন্নতা দেখা যায়। এই সব কিছু উপলব্ধি বিবেচনা করেই মানুষ পোষাকে নতুনত্ব বাহারি ডিজাইন, বিভিন্ন কারু কাজ থাকে।
বর্তমানে জনপ্রিয় পোষাক গুলোর মধ্যে হ্যান্ড পেইন্ট এর পোষাক অন্যতম। হ্যান্ড পেইন্ট শব্দ টা সাধারণ শোনালেও এটি পোষাকের রুপ করে তোলে অসাধারণ। বর্তমানে পোষাক জগতে রাজত্ব চলছে হ্যান্ড পেইন্টের। একটা সময় হ্যান্ড পেইন্টের কাজ করতেন গুটিকয়েক শিল্পী। বিশেষত শাড়ি আর পোশাক নিয়েই কাজ ছিল তাদের। হ্যান্ড পেইন্টের বিষয়টিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছিল আড়ং, দেশি দশের মতো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।
অনলাইন ব্যবসায়ের সূত্র ধরে নতুন করে হ্যান্ড পেইন্টিং পরিচিতি পেয়েছে সবার কাছে। স্বল্প পরিসরে ও স্বল্প পুঁজিতে শুরু করা যায় বলে অনেকেই ব্যবসার মাধ্যম হিসেবে বেছে নিচ্ছেন এটিকে। তবে তার জন্য রং, তুলি, আঁকাআঁকি সম্পর্কে কিছুটা জ্ঞান থাকা আবশ্যিক।
এখন সাধারণ ভাবেই মনে প্রশ্ন আসবে, হ্যান্ড প্রিন্ট কি ? কিভাবে করে ? কিসে করে ?
হ্যান্ড পেইন্ট কী ?
দুটি শব্দের সমন্বয় রয়েছে হ্যান্ড পেইন্টে। হ্যান্ড মানে হাত আর পেইন্ট মানে রং। হাত আর রঙ এর মাধ্যমে যে কাজগুলো করা হয় তাকে বলা হয় হ্যান্ড পেইন্টিং।
কীভাবে করে ?
নির্দিষ্ট জিনিসের ওপর মনের মাধুরি মিশিয়ে আঁকিবুঁকি করার নামই হ্যান্ড পেইন্ট। রং তুলির সাহায্যেই মূলত কাজটি করা হয়।
হ্যান্ড পেইন্টিং কীসে করে ?
ক্যানভাস, কাগজ, কাঠ কিংবা কাপড়ে হ্যান্ড পেইন্ট করা হয়। আমাদের চারপাশে এগুলোর ব্যবহারই বেশি।
একটি হ্যান্ড পেইন্টের কাজের পিছনে থাকে একটা মানুষের নিখুত প্রতিভা,ধৈর্য আর বুদ্ধি এই ৩টি জিনিস দিয়ে একটি হ্যান্ডপেইন্টের কাজ সৃষ্টি হয়। হ্যান্ড পেইন্ট খুব সাধারণ হলেও এর নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম রয়েছে:প্রথমত রঙ, মিডিয়াম, তুলি আর কাপড়। রঙ- বিভিন্ন ধরনের রঙ দিয়েই হ্যান্ড প্রিন্ট করা যায় তবে ফেব্রিক বা কাপড়ে পেইন্টিংয়ে অ্যাক্রিলিক রঙ ব্যবহার করা উত্তম।
মিডিয়াম- সঠিক ঘনত্বের রঙ পেতে রঙের সাথে মিডিয়াম মিশিয়ে নিতে হয়। বাটিতে সামান্য মিডিয়াম নিয়ে তাতে রঙ মেশাতে হয় অল্প করে। হ্যান্ড পেইন্ট এর জন্য রঙ এর ঘনত্ব খুব গুরুত্বপূর্ণ।কাপড়- শুরুর দিকে ছোট কাপড়ের টুকরো নিয়ে কাজ করা ভালো। নতুন কাপড় না নিয়ে পুরনো কাপড়েই আঁকিবুকি করে এই কাজে হাতের কৌশল ঠিক করে জেনে নেওয়া ভালো । কাপড়টা অবশ্যই ভালো মতো ধুয়ে শুকিয়ে নিতে হবে।
তুলি বা ব্রাশ- চিকন তুলি না মোটা তুলি প্রয়োজন হবে, তা নির্ভর করে নকশার উপর। সূক্ষ্ম কাজ করার বেলা সবসময় চিকন তুলিই প্রয়োজন হয়। নকশা চওড়া হলে মোটা তুলি ব্যবহার করা হয় ।
কাপড়ে ডিজাইন ফুটিয়ে তোলার জন্য রঙ নির্বাচন যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি রঙ এর মিশ্রণ তৈরীর দিকে মনযোগী হওয়া আবশ্যক।রঙ তৈরীর জন্য কিছু জিনিস মাথায় রাখা প্রয়োজন। যেমন :রঙ এর মিশ্রণ তৈরীতে মেডিসিন ব্যবহার ব্যবহার,
হোয়াইট পেস্ট (White Paste)– ডিপ কালারের কাপড়ে (কালো ,নেভিব্লু) এইসব কাপড়ে রঙ ফুটিয়ে তুলতে ব্যাবহার করা হয়।
নিউ ট্রেক্স (New Trex)– এটা হালকা কালারের রঙের সাথে মিক্স করলে ওই হালকা কালারের রঙ তুলনামূলক ডিপ বা উজ্জ্বল হয়ে যায় এককথায় হালকা বা ফ্যাকাসে লাগেনা।
এন/কে (N/K)– কাপড়ে রঙকে টেকসই করতে এটা ব্যাবহার করতে হয়।
বাইন্ডার (bainder)– এটা মানে আঠা । কাপড়ে যাতে রংগুলো বসে যায় সে জন্য ব্যাবহার করতে হয়।
এক্রেলিক (Acrylic Color) কালার– এটা আসলে বেসিক কালার যেটার সাথে উপরের মেডিসিনগুলো যোগ করে রঙ তৈরি করতে হয়।
এমপি ওয়ান (Mp One)– এটা যখন হাফ সিল্ক, মসলিন, জর্জেট, ব্যাগ, জুতা এই সবের উপরে কালার করা হয় তখন এটা ব্যবহার করতে হয় তাছাড়া বাকি সুতি কাপড়ে ব্যবহার করার দরকার হয় না।
হ্যান্ড পেইন্ট করার আগে এবং পরে কিছু কিছু বিষয় মাথায় রাখা অতি প্রয়োজনীয়। যেমন : হ্যান্ড পেইন্টিং করার আগে যে কাপড়ে কাজ করা হবে তার নিচে ওয়েল ক্লোথ/পলি পেপার এবং শক্ত কোন কাগজের বোর্ড, নিউজপেপার ভাজ করে বা পুরনো কাঁথা দিয়ে নিতে হবে। তারপর নিজের মন মত ডিজাইন অনুযায়ী তুলি নির্ণয় করে তা দিয়ে কাপড়ে এঁকে নিতে হবে। প্রয়োজন হলে আগে পেন্সিল বা কলম দিয়ে ডিজাইন এঁকে নিতে হবে।
যেই কাপড়ে রঙ করা হয়েছে তা প্রথমে ফ্যানের বাতাসে আর পরে একদিন রোদে দিয়ে শুকিয়ে নিতে হবে। রঙ করার ২৪ঘন্টা পর কাপড় উলটো করে যেখানে যেখানে কাজ করা হয়েছে সেখানে মোটামুটি গরম আয়রন দিয়ে কাপড়টা ভালভাবে আয়রন করে নিতে হবে এতে করে ডিজাইন আর রঙ দুইটাই দীর্ঘস্থায়ী হয়।
কাপড়ে হ্যান্ড পেইন্ট করার ১ মাস এর আগে কাপড় না ধোয়াই ভাল। তবে ধুলে কম পক্ষে ১ সপ্তাহ পর থেকে খুব আলতো হাতে যত্ন নিয়ে কাপড়টা ধুলে কাপড়ে পেইন্টিং অনেকদিন ভাল থাকবে।
হ্যান্ড পেইন্ট ও আমাদের ভুল ধারণা-
হ্যান্ড মেইড আর হ্যান্ড প্রেইন্ট এক কিনা! অনেকেই হ্যান্ড মেইড আর হ্যান্ড পেইন্ট ব্যাপারটাকে গুলিয়ে ফেলেন। হাতে তৈরি শিল্পকে হস্তশিল্প বা হ্যান্ড মেইড বলা হয়। তারই একটি ছোট অংশ হলো হ্যান্ড পেইন্ট। অর্থাৎ, সব হাতে আঁকা জিনিসই হস্তশিল্প কিন্তু সব হস্তশিল্পই হাতে আঁকা নয়।
হ্যান্ড পেইন্ট করা কাপড়ের রং ধুলে উঠে যাবে কিনা?
না, রঙগুলো ফেব্রিকে ব্যবহারের জন্যই তৈরি। কাপড় ধুলে ও রং উঠে না, এমনকি অন্য কাপড়ের সাথে ধুলেও রং উঠে কাপড় নষ্ট হয় না। যদি না কাপড় থেকে মানে কাপড় কোয়ালিটি খারাপ হবার কারণে কাপড়ের রং উঠে। হ্যান্ড পেইন্ট এর যে কালার ব্যবহার করা হয় সেটার রং উঠে না।হ্যান্ড পেইন্ট এর কাপড় কোন আলাদা নিয়মে ধুতে হয় কিনা?না, সেটাও করার দরকার হয় না।
সুতি কাপড় যেভাবে ডলে মুচরে ব্যবহার করা হয় ঠিক সেভাবেই হ্যান্ড পেইন্ট এর কাপড় গুলো ব্যবহার করা । প্রতিদিন ব্যবহারের জন্য আরামদায়ক পাশাপাশি ফ্যাশনেবল।
Writer information:
Name: Anika Taz Priya
Department of Clothing and Textile
College of Home Economics Azimpur
1st year / Batch- 35