বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কলকারখানা ও শিল্প প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন ধরণের পণ্য উৎপাদিত হয় এই বিপুল পরিমাণ পণ্যের জন্য যেমন প্রচুর পরিমাণে কাচামাল ও প্রয়োজন হয়, তেমনি সম্পুর্ণ প্রক্রিয়া শেষে উপজাত ও বর্জ্য পদার্থ ও উৎপন্ন হয় উল্লেখযোগ্য হারে।বিভিন্ন ধরণের এই উপজাত দ্রব্য ও বর্জ্য পদার্থসমুহের মধ্যে পরিবেশ,জলবায়ু,মানবজাতি ও প্রাণীকুলের জন্য ক্ষতিকারক পদার্থের সংখ্যা ও কম নয়। শত বছর ধরে তাই পরিবেশের সাথে মিশে বিভিন্নভাবে মাটি,পানি, পানির মাছ ও অন্যন্য জলজ প্রাণী,গাছপালা,মানুষ সহ সবার জন্যই হুমকি সৃষ্টি করে আসছে শিল্প বর্জ্য। গত শতক থেকেই বিজ্ঞানী ও পরিবেশবিদদের চিন্তার বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে তাই এই দুষণ।প্রাকৃতিকভাবে যে প্রক্রিয়ায় ছত্রাক ও ব্যাক্টেরিয়া সহ অন্যন্য অনুজীব এর প্রভাবে মাটিতে বর্জ্যের ক্ষয় হওয়া বা মাটির সাথে মিশে যাওয়াকে বলা হয় Biodegradation। তবে সমস্যা হচ্ছে সব ধরণের বর্জ্য পদার্থকে degrade বা ক্ষয় করতে পারে না মাটিতে থাকা অনুজীবসমুহ। যেমন প্লাস্টিক,কাচ,পলিথিন, ধাতু, এলুমিনিয়াম এর ক্যান সহ অসংখ্য রাসায়নিক বর্জ্য।
কিভাবে এই দুষণ কমানো যায়,কিভাবে বর্জ্য পদার্থ,উপজাত দ্রব্যের পুনর্ব্যবহার,নিষ্কাশন নিশ্চিত করা যায় তা নিয়ে গবেষণা,আবিষ্কার কম হয়নি।মাইক্রোবিয়াল বায়োডিগ্রেডেশন এই প্রক্রিয়াগুলোর মধ্যে অন্যতম এবং টেক্সটাইল শিল্পে এর ধারণা, গুরুত্ব,প্রয়োগ ও ব্যবহার নিয়েই আজকের আলোচনা।
বিশ্বজুড়ে টেক্সটাইল বর্জ্যের পরিমাণ সম্পর্কে ধারণাঃ
বিশ্বে টেক্সটাইল কারখানার সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে বর্জ্যের পরিমাণও বৃদ্ধি পাচ্ছে আশংকাজনক ভাবে। ২০১৬ সালে শুধুই হংকংয়ে দৈনিক টেক্সটাইল বর্জ্যের পরিমাণ ছিল ৩৪৩ টন, যা ছিল মোট পৌর বর্জ্যেরই ৩.৩% ছিল। ২০১৪ সালে ১৪ মিলিয়ন টনেরও বেশি টেক্সটাইল বর্জ্য উৎপাদিত হয়েছিল যুক্ত্ররাষ্ট্রে যার মধ্যে মাত্র ২.৩৮ মিলিয়ন টন বর্জ্য পুনর্ব্যবহারযোগ্য করা হয়েছিল। এই সংখ্যাগুলো বিশাল; এখান থেকেই আমাদের আন্দাজ করে নিতে হবে যে সারা বিশ্বে তাহলে টেক্সটাইল বর্জ্যের পরিমাণ কতটা বেশি ও পরিবেশকে কতটা হুমকির দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
মাইক্রোবিয়াল বায়োডিগ্রেডেশন (Microbial Biodegradation) কিঃ
মাইক্রোবিয়াল শব্দটি এমন একটি প্রক্রিয়াকে নির্দেশ করে যেটি মাইক্রোঅর্গানিজম বা অণুজীব দ্বারা পরিচালিত হয়, অপরদিকে বায়োডিগ্রেডেশন(biodegradation) দ্বারা জৈবিক ক্ষয় এর প্রক্রিয়া বুঝায় (প্রকৃতপক্ষে কোনো বস্তুর অভ্যন্তরীণ রাসায়নিক উপাদান যেমন কার্বন ও অন্যন্য রাসায়নিক উৎসের আণবিক গঠন এর ভাঙন, বিশ্লেষণ/বিভাজন ও ক্ষয়ের প্রক্রিয়াকে বুঝানো হয়)।
টেক্সটাইল শিল্পে Microbial Biodegradation এর ধাপসমুহঃ
aerobic and anaerobic biological wastewater treatment হচ্ছে অন্যতম পুরনো Biodegradation Process গুলোর মধ্যে একটি। পরবর্তীতে গত কয়েক দশকে আরো বেশ কয়েকটি পদ্ধতি এসেছে যদিও। এই প্রক্রিয়াটি কয়েকটি ধাপে সংঘটিত হয়ে থাকে, Halogenated compound এর ক্ষেত্রে এগুলোর Dehalogenation প্রক্রিয়া আগে ঘটে , ক্লোরিন/ব্রোমিন ফ্লুরিন এর মত হ্যালোজেন মৌলের Dehalogenation প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয় anaerobic বা অবায়বীয় পরিবেশে। (কোনো পরিবেশ বা এলাকা বা পরীক্ষার ক্ষেত্র aerobic বা anaerobic বলা হয় সেখানে উপস্থিত মুক্ত অক্সিজেনের পরিমাণের ভিত্তিতে, দ্বিতীয়টিতে মুক্ত অক্সিজেন কম থাকে, বরং সেসব ক্ষেত্রে অক্সিজেন অন্যন্য যৌগে যুক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়)। এই প্রক্রিয়া শেষেই জেনোবায়োটিকস (Xenobiotics) এর মুল কাঠামোর ভাঙন শুরু হয়।
মুলত Degradation প্রক্রিয়াতে কিরকম পদার্থ / অনুঘটক ( substance/catalyst) ব্যবহার করা হবে, তা অনেকটাই নির্ভর করে কোন ধরণের রাসায়নিক উপাদান এর উপস্থিতি রয়েছে বস্তুটিতে।
Polycyclic aromatic hydrocarbons এর কার্বন-কার্বন বন্ড ভাঙায় দক্ষতার কারণে White-rot Fungi (ফাঞ্জাই) একটি বহুল ব্যবহ্বত বস্তু এই ক্ষেত্রে। একটা সময় মনে করা হতো যে এই ধরণের Compound এর ডিগ্রেডেশন শুধুমাত্র ব্যাক্টেরিয়া দ্বারাই সম্ভব। ligninolytic fungi বেশিরভাগ জৈব দুষকের ভাঙন প্রক্রিয়াটি ligninolytic metabolism এর সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। সাদা ছত্রাক দ্বারা ভাঙন প্রক্রিয়াতে প্রায়ই প্রথম ধাপ হিসেবে তীব্র প্রতিক্রিয়াশীল intermediate-free-radical এর উৎপন্ন প্রক্রিয়া সংঘটিত হয়। খুবই কম সময়ের মধ্যে একটি ইলেক্ট্রন তার ground state থেকে অপসারিত হয় বা গৃহিত হয়, অর্থাৎ ক্ষনস্থায়ী এই intermediate state এর এই বিক্রিয়াগুলো চেইন আকারে ঘটতে থাকে ,যাতে করে প্রাথমিক অবস্থার তুলনায় ভিন্ন ভিন্ন ধরণের মুলক গঠিত হয়।
এ ছাড়াও আরেকটি গুরুত্বপুর্ণ শাখা ও প্রক্রিয়া হচ্ছে Dye Degradation, যেখানে টেক্সটাইল পণ্যের রঙ সংক্রান্ত উপাদানের Degradation প্রক্রিয়া সংঘটিত হয়। এর ধাপসমুহের মধ্যে Collection of the effluent sample, Preliminary analysis of effluent,Isolation and characterization of the organism, Preparation of mass cultures, Degradation of dyes . Dye decolourization assay ইত্যাদি প্রক্রিয়া উল্লেখযোগ্য।
লেখকঃ
আবু জোনায়ত
সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি।