Sale ।। Discount ।। Buy 1 get 1 free।। Clearence offer ।।
কি জনাব! শব্দগুলো মাথায় আসার সাথে সাথেই মনে একটা আনন্দের ধারা বয়ে যায় তাই না? আর কোনো ফ্যাশন ব্র্যান্ড এর সামনে এই পোস্টার দেখলে তো আর কথা-ই নেই। একবারে ঈদের চাঁদ হাতে,তাই নয় কি? হ্যাঁ ঠিক-ই। কিন্তু আমরা কি কখনো ভেবে দেখেছি কেন ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলো এই রকম অফার দেয়। শুধুই কি মার্কেটিং পলিসি? মার্কেটিং পলিসি হয়ে থাকলেও কেন বার বার প্রতিটি মৌসুমের শেষে দেওয়া হয়ে থাকে এই অফার গুলো। এত মার্কেটিং করার দরকার কি আদৌ আছে?
আসুন এইবার একটু ভেবে দেখি। ধরুন শীতের মৌসুম প্রায় শেষের দিকে। “ক” নামক একটি ফ্যাশন ব্র্যান্ড এর রিটেইল শপ গুলোতে রয়েছে সোয়েটার,জ্যাকেট সহ নানা ধরণের শীতের পোশাক। এই মৌসুমে তেমন একটা ভালো ব্যবসা হয়নি। এইদিকে গ্রীষ্মকাল দরজায় কড়া নাড়া শুরু করে দিয়েছে। গরমকালের কাপড় গুলোকে তো শপে তোলার কাজ শুরু করার সময় এসে গিয়েছে। কিন্তু সমস্যা করছে ওই যে শীতের পোশাক। সেগুলো এখনো শপে ঝুলছে। কি করা যায়? আবার গোডাউনে স্টোর করে রাখা যায় কিন্তু এক বছর ধরে স্টোর করতে গেলে আবার বাড়তি খরচ। আবার গত মৌসুমের Old Fashioned জিনিস এই মৌসুমে কে-ই বা পড়তে চাইবে। থাক বাবা রিস্ক নেয়ার দরকার নাই। তাই নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো এই প্রবাদ বাক্যকে মাথায় রেখে একবুক ভরা কষ্ট নিয়ে “ক” ফ্যাশন ব্র্যান্ডের CEO বললেন দিয়ে দাও অফার। কি আর করার। সীমিত লাভ করে লস থেকে বাঁচা আর কি।
এইভাবে প্রায় প্রতি বছরই ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলোকে পরতে হয় এইরকম সমস্যায়। আমরা অফার গুলোকে ঠিকই উপভোগ করে থাকি। কিন্তু যারা আসলে সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকে তারা-ই বুঝে ব্যাপারটা কতটুকু উপভোগ করার মতো। আমি জানি যারা আসলে বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন তারা এখন হয়তো ভাবছেন এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার কি কোনো উপায় আছে? হ্যাঁ আছে। আর সেটিই হলো আমাদের আজকের আলোচ্য বিষয় On-Demand Manufacturing।
On-Demand Manufacturing কি?
আমাদের ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে On-Demand Manufacturing সম্পূর্ণ নতুন একটি বিষয়, যার উৎপত্তি হলো বলতে গেলে কয়েকদিন আগে। একে “made-to-order” ও বলা হয়ে থাকে। নাম শুনে এর কাজ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। এর মানে হচ্ছে অর্ডার আসলে প্রোডাক্ট তৈরি করা।
বর্তমানে আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে যে প্রক্রিয়ায় পোশাক তৈরি করা হয় সেটি হলো কোনো ফ্যাশন ব্র্যান্ড কোনো গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিতে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক পোশাক তৈরি করতে দিবে। পোশাক তৈরি হয়ে গেলে ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলো তাদের রিটেইল শপে পণ্য গুলো নিয়ে যাবে এবং সেখানে বিক্রয় করা হবে। যাকে বলা হয়ে থাকে Traditional Way of Manufacturing।
কিন্তু আমাদের এই নতুন ব্যবস্থায় অর্থাৎ On-Demand Manufacturing ব্যবস্থায় কোনো ফ্যাশন ব্র্যান্ড কোনো ধরনের আন্দাজ অথবা কোনো স্ট্যাটিস্টিক্স এর উপরভিত্তি করে একসাথে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক প্রোডাক্ট তৈরি করতে না দিয়ে কাস্টমার যখন অর্ডার দিবে তখনই ওই প্রোডাক্টটি তৈরি করে কাস্টমারের কাছে পৌঁছে দিবে।
কেন ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে On-Demand Manufacturing ব্যবস্থাটি দরকার?
শুরুতে উল্লেখ করা সমস্যাটি একমাত্র সমাধান হিসেবে On-Demand Manufacturing ব্যবস্থাকে ব্যবহার করা যায়। এতে করে কোনো গ্রাহকের যখন কোনো পোশাক দরকার হবে তখন সে সেটি অর্ডার করে দিবে এবং ফ্যাশন ব্র্যান্ডটি সেটি তৈরি করে গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দিবে। এর ফলে দিন শেষে দেখা যাবে যে যতটুকু চাহিদা ঠিক ততটুকু প্রোডাক্টই তৈরি করা হচ্ছে।এতে করে পণ্য বেঁচে যাওয়ার ভয় তো থাকছেই না সেই সাথে থাকছে না পণ্য সংকটের ভয়।
তাছাড়া বর্তমানে করোনা পরিস্থিতিতে এই সমস্যাটি তীব্রভাবে আমাদের সামনে হাজির হয়েছে। বর্তমান সময়ে আমাদের ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি অনেকাংশেই হয়ে গিয়েছে অনলাইন নির্ভর। এর ফলে তেমন কোনো নিশ্চায়তা দেওয়া সম্ভব নয় যে কতটুকু প্রোডাক্ট তৈরি করতে হবে অথবা কতটুকু প্রোডাক্ট বিক্রয় করা যাবে। কারণ বর্তমান পরিস্থিতিতে কারোরই অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো না। তাই গ্রাহকরা পোশাক কিনবে নাকি কিনবে তার নিশ্চায়তা নেই। এইক্ষেত্রে যদি On-Demand Manufacturing কে ব্যবহার করা যায় তাইলে বড় ধরণের অনিশ্চায়তা থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
শুধু এইতুকুতেই শেষ নয়। এর রয়েছে আরও নানা ধরণের আশার দিক। বর্তমানে আমদের ফ্যাশন,স্টাইল সব কিছুতেই এসেছে পরিবর্তন। আমরা জানি বড় বড় ফ্যাশন ব্র্যান্ড গুলো ফ্যাশন শো এর আয়োজন করে থাকে। সেখান থেকেই তারা তাদের তৈরি পোশাকের মার্কেটিং করে থাকে। গ্রাহকরা সেগুলো দেখেই আগ্রহী হয় এবং সেই প্রোডাক্টটি কিনে থাকে। কিন্তু ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে Tagwalk কর্তৃক আয়োজিত একটি সার্ভে তে দেখা গিয়েছে এক অবাক করা তথ্য। সার্ভে তে অংশগ্রহণকারী প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ এখন runway style ফ্যাশন (ফ্যাশন ব্র্যান্ড কর্তৃক পরিচালিত র্যাম্প ওয়াকে প্রদর্শিত ডিজাইন) এর পরিবর্তে street-style (সোশ্যাল মিডিয়াতে দেখে বা নিজের পছন্দ মতো তৈরি ডিজাইন) ফ্যাশনকে বেশি ফলো করছে। এই বিষয়টিকে টার্গেট করে On-Demand Manufacturing কাজে লাগিয়ে একটি বড় ধরনের সম্ভাবনা তৈরি করা যায়। এর ফলে একজন কাস্টমার যখন তার পছন্দ মতো কোনো কিছু অর্ডার করবে তখনই সেটি তৈরি করে তাকে দেওয়া যাবে।
On-Demand Manufacturing এর ফলে আরও গুরুত্বপূর্ণ কিছু সুবিধা রয়েছে।
১/ বর্তমান সময়ের অন্যতম আলোচ্য বিষয় Sustainability এই On-Demand Manufacturing এর অর্জন করা সম্ভব।
২/ Textile Waste এর পরিমান কমানো যায়।
৩/ Manufacturer এর সাথে একটি ভালো সম্পর্ক তৈরি করা যায়। কারণ এইখানে যেহেতু এত বেশি পরিমানে অর্ডার দেওয়া হচ্ছে না তাই এত বেশি পরিমান শ্রমিক এর ও দরকার পরছে না। তাই তাদের উৎপাদন খরচও কমে যাচ্ছে।
৪/ On-Demand Manufacturing ব্যবস্থাটির ফলে খুবই উন্নত মানের পোশাক পাওয়া সম্ভব। কারন অর্ডার এর পরিমান কম থাকায় একটি প্রোডাক্ট খুব যত্ন করে এবং কোয়ালিটি মেইনটেইন করে কাপড়টি তৈরি করা যাবে।
৫/ ব্যবসার উপর একটি ভালো কন্ট্রোল রাখা সম্ভব।
৬/ এই ব্যবস্থাটি উদ্যোক্তাদের জন্য একটি বড় সম্ভাবনা সৃষ্টি করবে।
৭/ পোশাক স্টোর করে রাখার খরচ বেঁচে যাবে।
On-Demand Manufacturing ব্যবস্থাটি ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হওয়া শুরু করেছে। কিন্তু এই ব্যবস্থাটি নিয়ে অনেকের মধ্যে রয়েছে নানা ধরণের মতভেদ। কারণ বিষয়টি যেমন একদিকে এক অপার সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেয় তেমনি এর রয়েছে কিছু প্রতিবন্ধকতা।
যেমনঃ
১/ এর ফলে কাস্টমারকে তার প্রোডাক্ট পাওয়ার জন্য একটি দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হবে। যার বিরুপ প্রভাব কাস্টমাররের উপর পরতে পারে।
২/ এই প্রক্রিয়াটিকে দক্ষ হাতে নিয়ন্ত্রন করতে না পারলে অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাবে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে ফলে পন্যের দামও বেড়ে যেতে পারে। এতে কাস্টমার এই ব্যবস্থাটির প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারে।
৩/ এর ফলে Supply Chain Managment ভেঙ্গে যেতে পারে।
যদিও সমস্যাগুলো এতটা বড় কোনো সমস্যা নয়। এর থেকে পরিত্রান পেতে হলে দরকার শক্তিশালী প্ল্যানিং এবং দক্ষ কারিগর।
এখন একটি বিষয় সম্পর্কে বলা উচিত। আমরা জানি যে যখন কোনো একটি ফ্যাক্টরিতে ২-৩ পিস ড্রেস বানাতে দেওয়া হবে তখন সেখানে ফেব্রিক, ডাইং কালার এগুলোর কোনোটাই সম্পূর্ণ ব্যবহার হবে না, ফলে সেগুলোকে waste হিসেবে গণ্য করা যাবে এবং এর ফলে Production Cost বেড়ে যেতে পারে। আবার সাথে তৈরি হতে পারে বেশি পরিমাণ “ঝুট”। কিন্তু আমরা যদি একসাথে অনেক বেশি ড্রেস অর্ডার করি সেখানে এইগুলো অপচয় হবে না। তাই এই ধরনের সমস্যা সমাধানের জন্য নানা ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। প্রথমত 3D Printing, যা কাস্টমারকে স্যাম্পল হিসেবে দেখানো যেতে পারে। 3D Printer দিয়ে স্যাম্পল তৈরি করে নিলে সেটি দেখে সহজে পোশাক তৈরি করা যাবে ফলে অপচয় এর পরিমাণ ও কমে যাবে। তাছাড়া একটি এপ্লিকেশন যার মাধ্যমে গ্রাহক তার অর্ডার দিতে পারবে। এর ফলে খুব কম সময়ে বেশি পরিমাণ অর্ডার পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। একদিকে প্রোডাকশন ও বেশি হলো অন্যদিকে কোনো কিছু অপচয়ও হবে না।
অতএব বুঝাই যাচ্ছে যে এই ব্যবস্থাটি একটি প্রযুক্তিনির্ভর ব্যবস্থা হয়ে চলেছে। এইখানে তারাই টিকে থাকতে পারবে যারা নিজের মেধা আর বুদ্ধির জোরে কাজ করে যেতে পারবে। XRC Labs এর প্রতিষ্ঠাতা এবং ম্যানেজিং ডিরেক্টর Pano Anthos জনপ্রিয় ফ্যাশন পত্রিকা Vogue কে দেওয়া তার একটি সাক্ষাতকারে বলেছেন যে তিনি বিশ্বাস করেন যে আগামী ৩ বছরের মধ্যে পুরো পৃথিবীর ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে On-Demand Manufacturing একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে যাবে।আমেরিকার অনেক ফ্যাশন ব্র্যান্ড এই ব্যবস্থাটিকে কাজে লাগিয়ে কিছুদিনের মধ্যেই অনেক এগিয়ে গিয়েছে। এর মধ্যে Resonance Companies একটি অন্যতম উদাহরণ তাই বলা যায় প্রতিযোগীতামুলক এই সময়ে টিকে থাকতে হলে যত দ্রুত সম্ভব আধুনিকতার ছোঁয়ায় এগিয়ে যাওয়া দরকার।
Source:
techpacker.com
luxiders.com
gooten.com
shopify.com
Writer:
Omar Saif
Department of Textile Engineering
Jashore University of Science and Technology
Mail- [email protected]