বর্তমানে টেক্সটাইল বিজ্ঞানী এবং প্রযুক্তিবিদদের দ্বারা বিভিন্ন টেক্সটাইল ম্যাটেরিয়াল এবং ফেব্রিকের উদ্ভাবনী পরিবর্তন সাধন করা হচ্ছে। যদি কোনো পোশাক না ধুয়েই অনেকদিন ব্যবহার করা যেত এবং তা অপরিষ্কারও না হতো – সেটি নিশ্চই আমাদের জন্য অনেক অবাক করার মতো বিষয় হতো? এই বিষয়টিই সম্ভব করে দেখিয়েছে টেক্সটাইল প্রযুক্তিবিদ এবং উদ্ভাবকগন।
Self-cleaning textile বলতে সেই বস্ত্রকে বোঝায় যার পৃষ্ঠ কোনো ধৌত প্রক্রিয়া ছাড়াই তা নিজে নিজেই পরিষ্কার হবে। ন্যানোটেকনোলজি প্রযুক্তির মাধ্যমেই মূলত টেক্সটাইলের এই ধারনাটি এসেছে যার ফলে কোনো ধোয়াকাচা ছাড়াই প্রতিদিন ফ্রেশ কাপড় পাওয়া সম্ভব। এটি শুধুমাত্র প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রেই বৈচিত্র্য আনে নি, বরং অর্থনৈতিক দিক থেকেও মানুষ অনেক উপকৃত হয়েছে।
ফেব্রিকের মধ্যে self-cleaning বৈশিষ্ট্য প্রদানের জন্য বর্তমানে টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিতে অনেকগুলো পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। তার মধ্যে মূলত দুইটি প্রক্রিয়া বর্তমানে বেশি জনপ্রিয়। এই দুটি পদ্ধতিতেই self-cleaning ফেব্রিক তৈরি হয়ে থাকে। পদ্ধতি দুটি হলো-
১) Fluorocarbon এর মাধ্যমে এবং ২) Nanotechnology এর মাধ্যমে
Fluorocarbon যেভাবে কাজ করে –
যদি কোনো কঠিন পদার্থের পৃষ্ঠটান কোনো তরলের পৃষ্ঠটান অপেক্ষা বেশি হয়, সেক্ষেত্রেই শুধুমাত্র তরলটি সেই কঠিন পদার্থকে ভেজাতে পারে। সুতরাং যদি কঠিন পদার্থটির পৃষ্ঠটান তরল অপেক্ষা কমানো যায় সেক্ষেত্রে কঠিন পদার্থটিকে পানি নিরোধী করা সম্ভব। Fluorocarbon ব্যবহার করে ফেব্রিকের মধ্যে এই বৈশিষ্ট্যটি প্রদান করা হয়।Fluorocarbon হলো কার্বন যৌগ যাতে perfluorinated কার্বন শিকল থাকে। এই যৌগ ফাইবারের চারপাশে একটি পাতলা আবরন প্রদান করে যার পৃষ্ঠটান খুবই কম এবং তা হলো প্রায় 10 dyne/cm. এতে করে ফেব্রিক কোনো ধরনের তরল জাতীয় পদার্থ শোষন করতে পারে না।
কিন্তু fluorocarbon ব্যবহৃত ফেব্রিকের কিছু সীমাবদ্ধতা লক্ষ্য করা যায়। কটন ফেব্রিকের ক্ষেত্রে এটি খুব বেশি ডিউরেবিলিটি প্রদান করতে পারে না। এই ফেব্রিক স্কিন রিলেটেড বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি করে। এছাড়া এর self-cleaning প্রভাবটিও আস্তে আস্তে কমতে থাকে।
এই সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠতে বর্তমানে নতুন এবং উন্নত পদ্ধতি এবং প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে যা হলো Nano-technology. Nanotechnology এর মাধ্যমে বিভিন্ন পদ্ধতিতে self-cleaning textile তৈরি করা যায়। এগুলো হলো –
১) Photo catalyst ব্যবহার করে
২) Microwaves ব্যবহার করে
৩) Carbon nanotubes (CNT) এর মাধ্যম
৪) Metal oxide colloidal ব্যবহার করে
৫) Silver nanoparticles ব্যবহার করে
৬) Chlorine halamine ব্যবহার করে
✅ Photo catalyst ব্যবহারের মাধ্যমে –
এই প্রক্রিয়ায় ফেব্রিকের মধ্যে self-cleaning এবং এন্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য প্রদানের জন্য ন্যানো সাইজের টাইটানিয়াম ডাইঅক্সাইড এবং জিঙ্ক অক্সাইড ব্যবহার করা হয়। ফেব্রিকটিকে ২০ ন্যানোমিটার ব্যাসের পাতলা টাইটানিয়াম ডাই অক্সাইডের স্তর দ্বারা আবৃত করা হয়। এক্ষেত্রে টাইটানিয়াম ডাই অক্সাইড photo catalyst হিসেবে কাজ করে। ফেব্রিকটি যখন আলোর সংস্পর্শে আসে তখন টাইটানিয়াম ডাই অক্সাইড ইলেক্ট্রন এবং ইলেক্ট্রন হোল সৃষ্টির মাধ্যমে পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করে থাকে। যখন কোনো ধুলিকনা, দূষিত পদার্থ বা মাইক্রো অর্গানিজম photocatalyst এর পৃষ্ঠে পরে তখন এটি উক্ত photocatalyst এর সাথে বিক্রিয়া করে কার্বন ডাই অক্সাইড ও পানি উৎপন্ন করে। জিঙ্ক অক্সাইড ও এক্ষেত্রে photocatalyst হিসেবে কাজ করে এবং টাইটানিয়াম ডাই অক্সাইডের মতোই self-cleaning মেকানিজম সম্পন্ন করে।
✅ Microwave ব্যবহারের মাধ্যমে –
মাইক্রোওয়েভের মাধ্যমে ফাইবারের মধ্যে ন্যানোপার্টিকেল প্রয়োগের নতুন প্রযুক্তি আবিষ্কৃত হয়েছে যা ফেব্রিককে self cleaning বৈশিষ্ট্য প্রদানে সক্ষম। যেসব রাসায়নিক পদার্থ পানি, তেল এবং ব্যাকটেরিয়া নিরোধী সেসব পদার্থও ন্যানোপার্টিকেলের সাথে ব্যবহার করা হয়। এই দুটি উপাদান ফেব্রিকের উপর একটি প্রোটেকটিভ কোটিং তৈরি করে। এই আস্তরনটি ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে এবং কোনো তরল পদার্থকে ফেব্রিকের গায়ে লেগে থাকতে দেয় না।
✅ Carbon nanotubes ব্যবহার করে –
Carbon nanotube (CNT) ব্যবহার করে ফেব্রিকে কৃত্রিম lotus effect প্রদান করা হয়। আমরা পদ্মপাতার ক্ষেত্রে দেখতে পাই যে পানি বা কোনো তরল তার মধ্যে থাকলে সেই তরল সহজেই ঝড়ে পড়ে যায়। CNT এর মাধ্যমে ফেব্রিকের মধ্যে সেই super-hydrophobic বৈশিষ্ট্যটি প্রদান করা হয়। কার্বন ন্যানোটিউব আবৃত কটন ফেব্রিকেও এই বৈশিষ্ট্যটি প্রদান করা হয় যা সেন্সিং, কনডাক্টিং এবং বিভিন্ন স্পেশাল টেক্সটাইলে ব্যবহার করা হয়।
✅ Metal oxide colloidal এর মাধ্যমে –
এই প্রক্রিয়ায় ফেব্রিককে প্রথমে metal oxide colloidal দ্রবনে ডুবানো হয় এবং heat treatment এর মাধ্যমে ফেব্রিকের পৃষ্ঠে ন্যনোমিটার স্কেলে roughness প্রদান করা হয়। এরপর ফেব্রিকটিকে water repellent treatment এর মাধ্যমে পৃষ্ঠতলে এমন বৈশিষ্ট্য প্রদান করা হয় যাতে তরলের সংস্পর্শে ফেব্রিকের পৃষ্টতলে ১৫০° এর বেশি কোণ উৎপন্ন করে এবং সহজেই তরলটি ফেব্রিক হতে ঝড়ে পরে যায়।
✅ Silver nanoparticle ব্যবহারের মাধ্যমে –
Silver nanoparticle এর তৈরি উচ্চ পানি নিরোধী স্তর ফেব্রিকে self-cleaning বৈশিষ্ট্য প্রদান করে থাকে। এই ফেব্রিক ময়লা এবং ধুলাবালির প্রতি উচ্চতর বাধাদানকারী ক্ষমতা প্রদর্শন করে। এছাড়াও ন্যানোটেক্স প্রযুক্তি nanowhiskers তৈরির মাধ্যমে ফেব্রিকের মধ্যে water repellent বৈশিষ্ট্য দিয়ে থাকে। ফেব্রিকে peach fuzz ইফেক্ট দেওয়ার জন্য এটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
✅ Chlorine halamine ব্যবহারের মাধ্যমে –
Chlorine যুক্ত যৌগ বা হ্যালামিন প্রয়োগের মাধ্যমেও ফেব্রিকে self-cleaning বৈশিষ্ট্য প্রদান করা যায়। Halamine এর মধ্যে ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করার উচ্চতর ক্ষমতা বিদ্যমান। এই halamine প্রয়োগকৃত ফেব্রিক বিভিন্ন মাইক্রোঅর্গানিজম ধ্বংস করতেও সক্ষম। তাই ফেব্রিকে self cleaning বৈশিষ্ট্য প্রদান করতে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়।
✅ Self-cleaning Textile এর ব্যবহার –
১) Medical textile
২) Sports textile
৩) Defence textile
৪) Smart textiles
৫) Upholstery
৬) Undergarments
সম্প্রতি একটি গবেষকদল Copper এবং silver based nanostructures নিয়ে কাজ করেছে, যা দৃশ্যমান আলো শোষন করতে পারে। তারা এটি প্রমান করতে সক্ষম হয়েছেন যে, ফেব্রিকের মধ্যে এই nanostructure প্রয়োগ করা হলে এটি যখনই আলোর সংস্পর্শে আসবে তখন ধাতব পরমানুগুলো উত্তেজিত হয়ে ৬ মিনিটের মধ্যে ফেব্রিকে অবস্থিত ময়লা কনিকাগুলো ভাঙতে শুরু করবে এবং নিজে নিজেই ফেব্রিকটি পরিষ্কার হবে। এটি self-cleaning textile প্রযুক্তিতে একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
বর্তমানে মানুষ নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে অনেক বেশি ব্যস্ত সময় পার করে। তাই এই বর্তমান সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে self-cleaning textile একটি যুগান্তকারী আবিষ্কার। এটি যেমন মানুষের মূল্যবান সময় বাচিয়ে দিচ্ছে, তেমনি অর্থনৈতিকভাবেও মানুষ উপকৃত হচ্ছে।
Reference –
1. fibre2fashion.com, 2. technicaltextile.net, 3. phys.org
Writer information:
Raktim Roy Rocky
Textile Engineering (2nd Batch)
Jashore University of Science & Technology